রবিবার, ৯ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

চাকরি হারিয়ে দিনমজুর ২০ শতাংশ পোশাকশ্রমিক

সমীক্ষার তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহামারী করোনাভাইরাসের প্রথম ধাক্কায় গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যেসব পোশাকশ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের অনেকেই বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন। কারখানা বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদের মাত্র ১৫ শতাংশ কোনো না কোনো কাজ পেয়েছেন। চাকরি হারানো শ্রমিকদের মধ্যে যাঁরা নিজেদের কারখানায় কাজ ফিরে পাননি, তাঁদের ২০ শতাংশ দিনমজুরের কাজ করেন। ২০ শতাংশের মতো শ্রমিক কাজ করছেন অনানুষ্ঠানিক খাতে। আরও ২০ শতাংশ শ্রমিক পোশাক খাতের বাইরে বিভিন্ন কারখানায় কাজ নিয়েছেন। নিজেরাই কিছু করার চেষ্টা করেছেন, এমন শ্রমিক প্রায় ২৭ শতাংশ। মাত্র ৬ দশমিক ৭ শতাংশ শ্রমিক তৈরি পোশাক খাতেই কাজ ফিরে পেয়েছেন। বাকি কয়েক শতাংশ অন্যান্য খাতে গেছেন। গতকাল  বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও সজাগ কোয়ালিশনের যৌথভাবে আয়োজিত ‘করোনায় তৈরি পোশাক খাতের করপোরেট জবাবদিহিতা’ শীর্ষক এক সংলাপে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য তুলে ধরেছেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। একটি সমীক্ষার ভিত্তিতে মূল প্রবন্ধটিতে আরও বলা হয়, নতুন কাজে শ্রমিকদের আয় কমে গেছে। আগে যেখানে শ্রমিকরা মাসে ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করতেন, সেখানে চাকরি হারানোর পর নতুন কাজে তাঁরা এখন মাসে গড়ে ৭ হাজার টাকা আয় করেন। তা ছাড়া চাকরি হারানোর সময় অনেকেই তাঁদের পাওনা পাননি। ১০২ জন গার্মেন্ট মালিক, ৩০১ জন পোশাক শ্রমিক ও ১০০ জন বেকার পোশাক শ্রমিকের ওপর এই সমীক্ষা করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, শ্রমিকদের পাওনা দিতে হবে। এ জন্য মালিকপক্ষের দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। শ্রমিকশ্রেণির প্রাপ্য পরিশোধে মালিকরা যেন নজর দেন। শ্রমিকনেতাদেরও শুধু শ্রমিকস্বার্থ নয়, মালিকদের যৌক্তিক পরিস্থিতিও বিবেচনা করতে হবে। টিপু মুনশি আরও বলেন, গত বছর বিদেশি ক্রেতারা যে পোশাক ১৫ ডলারে কিনতেন, সেই পোশাক এখন ১২ ডলার দিতে চাচ্ছেন। তাই ক্রেতাদের কাছ থেকে উপযুক্ত দাম পাওয়ার বিষয়ে আওয়াজ তুলতে হবে। পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, করোনার কারণে বিদেশি ক্রেতাদের অনেকে ব্যাংকে ঋণখেলাপি হয়ে গেছেন। তাই দামও পড়ে গেছে। এ ছাড়া ২০১৫ সালের পর পোশাকের বৈশ্বিক বাজার বাড়েনি। করপোরেট সুশাসন জোরদারের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘আট বছর পর বিজিএমইএর নির্বাচন হয়েছে। এবার নতুন প্রজন্মের অনেক প্রতিনিধি কমিটিতে এসেছেন। তাদের নিয়ে করপোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেব।’

বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার বলেন, মজুরি কমে গেলে বিপদে পড়েন শ্রমিকরা। বাড়িওয়ালারা টাকা কম নেয় না, ওষুধের দামও কম নেয় না। তখন শ্রমিকরা খাওয়া কমিয়ে দেয়। এভাবে করোনায় চাকরি হারানো বা আয় কমে যাওয়া শ্রমিকরা দুর্দশার মধ্যে আছেন। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের শুধু ক্রেতামুখী জবাবদিহি নয়। শ্রমিকমুখী জবাবদিহিও নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।  বিজিএমইএর পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিব মনে করেন, করোনার সময়ে বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদার কথাও বিবেচনা করতে হবে। তাদেরও বিক্রি নেই। তারা এত পোশাক নিয়ে কোথায় রাখবে? তাই উভয়পক্ষের কথা চিন্তা করতে হবে।

সর্বশেষ খবর