বুধবার, ১২ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

লাইনে চলল মেট্রোরেল

ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হচ্ছে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের কাজ, আগস্টে শুরু অফিশিয়াল ট্রায়াল রান

মানিক মুনতাসির

লাইনে চলল মেট্রোরেল

লাইনে বসল মেট্রোরেলের প্রথম সেট কোচ। বসার স্থান দরজা সবকিছুতেই নান্দনিকতার ছোঁয়া (নীচে) -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কাঠের পাটাতন ও কালো ইস্পাতের লাইনের ফাঁকে ফাঁকে চকচকে পাথর। নবনির্মিত রেললাইনের দুই পাশ ঘেঁষে ওপরে টানানো বৈদ্যুতিক লাইন, যার সংযোগ মিলেছে রেলের ইঞ্জিনের সঙ্গে। সফট ব্যারিকেডের উভয় পাশ থেকে সতর্কবাণী (বিপজ্জনক) সংবলিত প্লাকার্ড সাঁটানো। প্রকল্পের আশপাশ জুড়ে সাজ সাজ রব। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। লাইনের ওপর দাঁড়িয়ে আছে লাল, সবুজ আর সামান্য সাদা মিশ্রণের চকচকে নতুন রেলকোচ, যা কয়েক দিন আগেই এসেছে জাপান থেকে। কোচের ভিতরে অপেক্ষমাণ চালক। সজোরে সাইরেন বাজিয়ে মেট্রোরেলের মূল ডিপো থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলো এই লাল-সবুজের পতাকাবাহী যাত্রীবাহী রেলকোচ। সামান্য এসে থেমে যায় রেল।

প্রদর্শনী এলাকায় অস্থায়ী সিঁড়ি বেয়ে লাল গালিচা পাড়ি দিয়ে এই মেট্রোরেলের যাত্রী হলেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিটিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিকি, মেট্রোরেল লাইন-৬-এর প্রকল্প পরিচালক আফতাব উদ্দিন তালুকদার, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের অ্যাম্বাসেডর ইতো নাইয়োকি, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) কান্ট্রি ডিরেক্টর হায়াকাওয়া ইউহোসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এটাই যেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। জানান দিচ্ছে বাংলাদেশের সক্ষমতা। কিছুদূর এগিয়ে থেমে যায় ট্রেন। উৎসুক দৃৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছেন প্রকল্পের কর্মীরা। আছেন শতাধিক সংবাদকর্মীও। গতকাল মেট্রোরেল মূল ডিপো দিয়াবাড়ীতে এভাবেই অনুষ্ঠিত হলো মেট্রোরেলের প্রদর্শনী, যার মাধ্যমে বিদ্যুৎচালিত মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মাঝে প্রকল্পের কাজের গতি কিছুটা কমলেও আবারও ছন্দ ফিরেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ এগিয়ে চলছে অবিরাম। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে কর্মী, প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা থাকছেন প্রকল্প এলাকাতেই।

এভাবেই রেললাইনের ওপর দিয়ে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চলেছে মেট্রোরেল। রাজধানীর উত্তরায় স্থাপিত মূল ডিপোতে বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের প্রথম ট্রেন সেটটি চলেছে গতকাল। এই মেট্রোরেল চলেছে বিদ্যুতের মাধ্যমে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎচালিত ট্রেনের যুগে প্রবেশ করল। প্রদর্শনীর জন্য এদিন মেট্রোরেলটি চালানো হয়েছে। প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বিশেষ উদ্যোগে থার্ড পার্টি ইন্সপেক্টরের মাধ্যমে ইন্সপেকশন সম্পন্ন করে মেট্রো ট্রেন সেট বাংলাদেশে নিয়ে আসা হচ্ছে। প্রথম মেট্রো ট্রেন সেট ২৩ এপ্রিল উত্তরার ডিপোতে এসে পৌঁছেছে। ইতিমধ্যে রিসিভিং ইন্সপেকশন সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে ডিপোতে ফাংশনাল টেস্ট চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী আগস্টে ভায়াডাক্টের মধ্যে মেইন লাইনে পারফরমেন্স টেস্ট শুরু করা হবে। ভায়াডাক্টের ওপর পারফরমেন্স টেস্ট সম্পন্ন হলে ইনটেগ্রেটেড টেস্ট করা হবে। তারপর ট্রেনের ট্রায়াল রান শুরু হবে।’

তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় দফায় মেট্রোরেলে আরেকটি সেট ৯ মে মোংলা বন্দরে এসে পৌঁছেছে। অনতিবিলম্বে এটি ঢাকায় এসে পৌঁছবে। মেট্রোরেল এখন আর স্বপ্ন নয়, এটি বাস্তবতা।’ এদিকে মেট্রোরেল প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘রাজধানীবাসীর জন্য স্বপ্নের মেট্রোরেল আজ আর স্বপ্ন নয়। বাস্তবে দৃশ্যমান। ইতিমধ্যে এমআরটি লাইন-৬-এর ৬৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। জাপান থেকে ২৪টি ট্রেন সেটের মধ্যে এসে লাইনে চড়েছে। দ্বিতীয় সেটের ছয়টি কোচ মোংলা বন্দরে পৌঁছেছে। তৃতীয় ও চতুর্থ সেট চলতি বছরের আগস্টে এবং পঞ্চম সেট সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে আসবে। অবশিষ্ট সেটগুলো পর্যায়ক্রমে পৌঁছাবে। ঢাকাবাসী মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবে সেই দিন আর বেশি দূরে নয়।’ সূত্র জানায়, করোনার কারণে মাঝপথে প্রকল্পের কাজে কিছুটা ধীরগতি হলেও পরবর্তী সময়ে আবার গতি ফিরেছে। বর্তমানে যে গতিতে কাজ চলছে তাতে ডিসেম্বরের মধ্যে আগারগাঁও পর্যন্ত কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত কাজের সার্বিক অগ্রগতি হচ্ছে ৬৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হচ্ছে ৮৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আর দ্বিতীয় পর্যায়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হচ্ছে ৫৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক (রেলকোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট কাজের অগ্রগতি হচ্ছে ৫৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, আগামী জুন-জুলাই মাসে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পের দিয়াবাড়ী ডিপো থেকে পল্লবী স্টেশন পর্যন্ত মেট্রোরেলের ট্রায়াল রান করার চিন্তাভাবনা চলছে। সে লক্ষ্যে প্রথম চারটি স্টেশন উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ ও পল্লবী স্টেশনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন লাইন-৬-এর প্রকল্প পরিচালক আফতাব উদ্দিন তালুকদার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর