মঙ্গলবার, ১৮ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

লাগামহীন সোশ্যাল মিডিয়া

অধ্যাপক জিনাত হুদা

লাগামহীন সোশ্যাল মিডিয়া

সোশ্যাল মিডিয়া যেভাবে লাগামহীনভাবে চলছে, তার রাশ টানতে হবে। উদ্বেগজনক যে, দেশে সাধারণ নারী থেকে শুরু করে, সেলিব্রেটি, টক শোয় যেসব নারী অংশগ্রহণ করছেন, এমনকি নারী প্রধানমন্ত্রী হলেও জাত-কুল-বর্ণ নির্বিশেষে সেই নারীকে প্রচন্ড হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশ এখনো অসম্ভব রকমের পুরুষতান্ত্রিক। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিকতার যে ভয়াবহ কুৎসিত রূপ তথা প্রচন্ড রক্ষণশীলতা এবং এখনো নারীকে পণ্য হিসেবে দেখার মানসিকতা, তা প্রকটভাবে বিরাজ করছে। বাইরের দেশগুলোয় নারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্য করে অপমান করা হলেও বাংলাদেশে তা আরও কুৎসিতভাবে করা হয়। যারা নিজেদের তথাকথিত সভ্য বলে দাবি করেও এমন আচরণ করেন, এর মাধ্যমে আমাদের সভ্যতার যে প্রকট দিক তাও উঠে আসে। জিনাত হুদা বলেন, কিছুদিন আগেই অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর মাকে মাথায় সিঁদুর থাকায় টার্গেট করে কতিপয় ফেসবুক ব্যবহারকারী যে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন, তাতে এটি স্পষ্ট হয় যে আমরা কতটা নিচে নেমে গিয়েছি। আমাদের এটি বুঝতে হবে যে একজন মাকে কখনই সৌন্দর্য বা ধর্ম দিয়ে মূল্যায়ন করা যায় না। যারা ফেসবুকে কথায় কথায় ধর্মের দোহাই দেন, তারা ধর্মের মূল্যবোধও মানছেন না। তিনি বলেন, আমরা এমনও দেখেছি, একজন অভিনেত্রী হাতাকাটা ব্লাউজ পরে ফেসবুকে ছবি দেওয়াতে তাকে নেতিবাচক মন্তব্য করা হচ্ছে। অথচ ষাটের দশকে আমাদের মা-খালারা হাতাকাটা ব্লাউজ পরতেন। তখন তো কেউ এ বিষয়ে কটাক্ষ করেনি! আর এখন যদি কেউ বোরকা বা হিজাব পরে ফেসবুকে কোনো ছবি দেন, এর পরও তাকে নেতিবাচক মন্তব্য শুনতে হবে। এই নেতিবাচক মন্তব্য টার্গেট করেই করা হচ্ছে। জিনাত হুদা বলেন, এই কুৎসিত মনস্তত্ত্ব আমাদের আটকাতে হবে। এজন্য আমাদের প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার, তথ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব নিতে হবে। প্রয়োজনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেও নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। কলতলার নিশ্নশ্রেণির লোকেরা যে ভাষায় ঝগড়াঝাঁটি করে, সে ভাষা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবহার করা হয়। এখানে শব্দ চয়ন, বাক্য গঠন আপত্তিকর পর্যায়ের। এজন্য এখানে দাঁড়ি টানতে হবে। আর এটি সরকারের উচ্চপর্যায়, তথ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষেই করা সম্ভব। অর্থাৎ বিষয়টিকে নজরদারির আওতায় আনতে হবে। আবার এ ধরনের মন্তব্য যারা করছেন তাদের চিহ্নিত করে কোনো না কোনোভাবে আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে সিভিল সোসাইটি, মিডিয়া, পরিবারের সবাইকে নিয়ে এ বিষয়ে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। শুধু আইন করে ও পুলিশ বাহিনী দিয়ে এগুলো প্রতিরোধ সম্ভব নয়। এখানে সচেতনতা ও সামাজিক প্রতিরোধ প্রয়োজন। যারা অনলাইনে নারীদের প্রতি নেতিবাচক মন্তব্য করছেন তাদের চিহ্নিত করে অনলাইনে এই অপরাধীদের ছবি দিয়ে এদের সঙ্গ ত্যাগ করার সামাজিক আন্দোলন তৈরি করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর