দু-এক দিন পর পরই বিশ্বের দূষিত নগরীর তালিকায় শীর্ষে উঠে আসা ঢাকার বাতাস এখন অনেকটাই নির্মল। ঈদের দিন থেকেই কমে গেছে বাতাসে ভাসমান ক্ষতিকর অতিসূক্ষ্ম বস্তুকণার (পিএম ২.৫) পরিমাণ। গত ১৪ মে থেকে টানা নয় দিন শহরটির বায়ুদূষণ সহনীয় মাত্রায় রয়েছে। এর মধ্যে গত শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা ঢাকার বাতাস ছিল আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ মিনিটে বিশ্বের শীর্ষ দূষিত নগরীর তালিকায় ঢাকার অবস্থান ছিল ২৭তম। গত এপ্রিলেও অধিকাংশ দিন শীর্ষ পাঁচ দূষিত নগরীর মধ্যে ছিল ঢাকা।
বায়ুমান সূচকে (একিউআই) স্কোর ৫০-এর নিচে থাকলে তাকে স্বাস্থ্যকর, ৫১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সহনীয়, ১০১ থেকে ১৫০ পর্যন্ত স্পর্শকাতর শ্রেণির মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ পর্যন্ত খুবই অস্বাস্থ্যকর ও ৩০১ থেকে ৫০০ পর্যন্ত বিপজ্জনক হিসেবে ধরা হয়। প্রতি ঘনমিটার স্বাস্থ্যকর বাতাসে ভাসমান অতিসূক্ষ্ম বস্তুকণা (পিএম ২.৫) থাকে ১২ মাইক্রোগ্রামের নিচে। ১২ দশমিক ১ থেকে ৩৫ দশমিক ৪ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত সহনীয় ধরা হয়। এর চেয়ে যত বেশি হবে, মানব শরীরের জন্য ক্ষতি তত বাড়তে থাকবে। পিএম ২.৫ শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসের একেবারে গভীরে পৌঁছে যায়, এমনকি রক্তের সঙ্গে মিশে যায় বিধায় এতে ফুসফুস ক্যান্সার, কিডনি বিকলসহ নানা প্রাণঘাতী রোগ শরীরে বাসা বাঁধে।
বৈশ্বিকভাবে বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী মার্কিন সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঈদের আগের দিন ১৩ মে ঢাকার গড় একিউআই স্কোর ছিল ১০১, যা স্পর্শকাতর শ্রেণির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ১৪ মে ঈদের দিন ৯৯ স্কোর নিয়ে সহনীয় দূষণে চলে আসে ঢাকার বাতাস। ১৫ মে ৯৭, ১৬ মে ৯৫, ১৭ মে ৬৭, ১৮ মে ৬৭, ১৯ মে ৭০, ২০ মে ৭৪, ২১ মে (শুক্রবার) ৫৯ ও গতকাল ২২ মে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬৭ ছিল ঢাকার গড় একিউআই স্কোর। ঈদের দিন থেকে টানা নয় দিন সহনীয় দূষণে রয়েছে ঢাকার বাতাস। এর মধ্যে গত শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত রাজধানীর বাতাস ছিল পুরোপুরি স্বাস্থ্যকর। এই তিন ঘণ্টায় একিউআই স্কোর ছিল ৪৫ থেকে ৪৯ এর মধ্যে। প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম ২.৫ ছিল ১২ মাইক্রোগ্রামের মধ্যে। অথচ, ২০২০ সালে বার্ষিক গড় দূষণে ৯২টি রাজধানী শহরের মধ্যে দিল্লির পরপরই ঢাকা ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম ২.৫ ছিল ৭৭ দশমিক ১ মাইক্রোগ্রাম। ২০১৯ সালে ৮৫টি রাজধানী শহরের মধ্যে দূষণে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ঢাকা। প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম ২.৫ ছিল ৮৩ দশমিক ৩ মাইক্রোগ্রাম। গত ২২ এপ্রিল লকডাউনে গণপরিবহন, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও শপিং মল বন্ধ থাকলেও বিকাল ৩টায় ঢাকার প্রতি ঘনমিটার বাতাসে প্রাণঘাতী পিএম ২.৫ ছিল ৭১ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া সীমার চেয়ে প্রায় সাত গুণ বেশি। একিউআই স্কোর ছিল ১৫৯, যা অস্বাস্থ্যকর। বিশ্বের শীর্ষ দূষিত শহরগুলোর মধ্যে তখন ঢাকা ছিল দ্বিতীয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, বর্তমানে ঢাকার বায়ুদূষণের অর্ধেক (৫০%) দায় তরল জ্বালানি পোড়ানোর মাধ্যমে তৈরি ধোঁয়ার। ৪০ ভাগ দূষণের উৎস খড়, কাঠ, তুষের মতো জৈব বস্তুর ধোঁয়া ও সূক্ষ্ম বস্তুকণা। বাকি ১০ শতাংশ দূষিণ ঘটছে ইটভাটায় কয়লা পোড়ানোর ধোঁয়া থেকে। গবেষণার নেতৃত্বদানকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখন দূষণ কমার অন্যতম একটি কারণ বৃষ্টি। এ ছাড়া লকডাউনে মানুষের কর্মকান্ড কমে গেছে, দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ, অনেক কলকারখানা পুরোদমে চালু হয়নি, অনেকে গ্রামে গিয়ে এখনো ফেরেনি। এসব কারণেও দূষণ কমেছে।