রবিবার, ২৩ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ঝুঁকির বার্তা দিচ্ছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস

করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে ফাঙ্গাস নিয়ে সতর্কতার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

জয়শ্রী ভাদুড়ী

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে বিপর্যস্ত প্রতিবেশী দেশ ভারত। পরিস্থিতি সামলে ওঠার আগেই ভারতে নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। মিলছে হোয়াইট ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগীও। এর মধ্যেই বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের রোগী। দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ঠেকানোর সঙ্গে এই ফাঙ্গাসের দিকেও নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বাড়ছে। এ সংক্রমণের জেরে বাড়ছে মৃত্যুও। এ পরিস্থিতিতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণকে মহামারী ঘোষণা করতে রাজ্য সরকারগুলোকে চিঠি দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সঙ্গেই নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে হোয়াইট ফাঙ্গাস বা সাদা ছত্রাক। ভারতীয় চিকিৎসকদের উদ্ধৃত করে দেশটির গণমাধ্যম বলছে, হোয়াইট ফাঙ্গাস ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চেয়ে অনেক বেশি বিপজ্জনক ও ভয়াবহ।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক  হোসেন বলছেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে ইতিমধ্যে ভারতের জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এখন নতুন করে হোয়াইট ফাঙ্গাসের কথা আসছে। পর্যাপ্ত গবেষণা হলে পার্থক্যটা বোঝা যাবে। তবে যে কোনো ফাঙ্গাল ইনফেকশন হয় অতিরিক্ত স্টেরয়েড ব্যবহারের কারণে। করোনা রোগীদের বিশেষ করে আইসিইউতে থাকা রোগীদের চিকিৎসার প্রয়োজনে স্টেরয়েড দিতে হয়। করোনা থেকে সেরে ওঠার পর অনেকের দেখা যাচ্ছে ফাঙ্গাল ইনফেকশন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। সেটারই এখন নানা ধরণ নানাভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।’

চিকিৎসকরা বলছেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের বৈজ্ঞানিক নাম মিউকোরমাইকোসিস। এটি খুবই বিরল একটা সংক্রমণ। মিউকোর নামে একটি ছত্রাকের সংস্পর্শে এলে এই সংক্রমণ হয়। সাধারণত এই ছত্রাক পাওয়া যায় মাটি, গাছপালা, সার এবং পচন ধরা ফল ও শাকসবজিতে। এই ছত্রাক সাইনাস, মস্তিষ্ক ও ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। ডায়াবেটিস, ক্যান্সার বা এইচআইভি/এইডস যাদের আছে কিংবা করোনা বা অন্য কোনো রোগের কারণে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম এই মিউকোর থেকে তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

ভারতের রাজস্থান ও তেলেঙ্গানা রাজ্য সরকার ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণকে মহামারী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এ সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি ভুগছে মহারাষ্ট্র। রাজ্যটিতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে দুই হাজারের বেশি মানুষের। সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ৯০ জন। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫০০ জন, জানিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তামিলনাড়ুতে নয়জনের ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এরই মধ্যে এ সংক্রমণকে ‘পাবলিক হেলথ’ আইনের আওতায় বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, দিল্লি ও ঝাড়খন্ডে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে ছড়িয়ে পড়া এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কি না জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্বদ্যিালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. মো. নাজমুল করিম মানিক বলেন, স্টেরয়েডের ব্যবহার থেকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের এই সংক্রমণ শুরু হতে পারে। কভিড-১৯ এ গুরুতরভাবে আক্রান্তদের চিকিৎসায় তাদের জীবন বাঁচাতে এখন স্টেরয়েড দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে যেসব ক্ষতি হয় সেই ক্ষতি থামানোর জন্যও ডাক্তাররা কভিডের চিকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যবহার করেন। তিনি আরও বলেন, করোনা আক্রান্ত হয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে শরীরে থাকা ফাঙ্গাল ইনফেকশন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এর আক্রমণে ফুসফুস, শরীরের চামড়ায়, নাকে কালো কালো দাগ দেখা যায় বলে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নাম দেওয়া হয়েছে। ভারত ছাড়া এখনো অন্য কোনো দেশে এই রোগ দেখা যায় না। যদিও সবাই চিকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যবহার করছে। তাই আমাদের ফাঙ্গাস বিষয়ে সতর্ক থাকতে গেলে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে হবে। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণ বাড়লে ফাঙ্গাসের সমস্যা মাথাচাড়া দিতে পারে।

সর্বশেষ খবর