রবিবার, ২৩ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

সিমেন্টের উৎপাদন খরচ বাড়ায় দাম বৃদ্ধির শঙ্কা

দ্বৈত কর সমন্বয় ও আমদানি শুল্ক ২৫০ টাকায় নির্ধারণের দাবি সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্ববাজারে সিমেন্ট উৎপাদনের মৌলিক কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি ও জাহাজীকরণের খরচ বেড়েছে। ফলে দেশীয় মিলগুলোতে উৎপাদন খরচও অনেক বেড়ে গেছে। এই প্রেক্ষাপটে দেশের খুচরা বাজারে সিমেন্টের দাম বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্বৈত কর সমন্বয় ও আমদানি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ২৫০ টাকায় নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন-বিসিএমএ। সংগঠনটি বলেছে, সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে সিমেন্টের দাম রাখা সম্ভব হলে, পণ্য বিক্রির বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে সরকারের রাজস্ব আয়ের পরিমাণও বাড়বে। এদিকে বিশ্ববাজারে পণ্য জাহাজীকরণের অব্যাহত মূল্য বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিসিএমএ সভাপতি ও ক্রাউন সিমেন্টের ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আলমগীর কবির। তিনি বলেছেন, যে কোনো কারণে সিমেন্টের মূল্য বৃদ্ধি পেলে তা এই খাতের জন্য ক্ষতি হয়। কারণ বিক্রি কমে আসে। ফলশ্রুতিতে উৎপাদন সক্ষমতা কমে যায় এবং ফিক্সড কস্ট বেড়ে যায়। যার চূড়ান্ত ফল হচ্ছে, মুনাফা কমে যাওয়া অথবা লোকসান হওয়া। তার মতে, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে বিশেষ করে মধ্যম আয়ের ক্রেতার স্বার্থে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর কর্তৃক অতিরিক্ত কর, যা এ খাতে অব্যাহত রয়েছে, তা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। এতে পণ্য বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যাবে। সংশ্লিষ্টদের মতে, চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে প্রতি টন ক্লিংকারের সিএফআর (কস্ট অ্যান্ড ফ্রেইড) মূল্য প্রায় ৬০ থেকে ৬২ ডলার, যা কিছুদিন আগেও ছিল ৫৬-৫৭ ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়াই এর মূল কারণ। অন্যান্য বছর জাহাজের ভাড়া বৃদ্ধি পেলেও সেটা সাময়িকভাবে হয়ে থাকত। যার কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে সিমেন্টের মূল্যের ওপর খুব বেশি প্রভাব পড়ত না। কিন্তু এবার গত বছরের অর্থাৎ ২০২০-এর নভেম্বর মাসের পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জাহাজীকরণ খরচ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। কিছুদিন আগেও ইন্দোনেশিয়া বা ভিয়েতনাম থেকে এমনকি মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রতি টন ক্লিংকার পরিবহনে ২০ থেকে ২২ ডলার খরচ হতো যা বর্তমানে ২৬ থেকে ২৮ ডলার পর্যন্ত উঠেছে। বাংলাদেশে সিমেন্ট তৈরির যে কয়েকটি মূল কাঁচামাল রয়েছে তার সবগুলোই আমদানিনির্ভর এবং এর মধ্যে ক্লিংকার অন্যতম।

প্রসঙ্গত, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সিমেন্ট শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৫টির মতো দেশি-বিদেশি কোম্পানি সিমেন্ট উৎপাদন করছে। দেশে সিমেন্টের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৪ কোটি টন, যার বিপরীতে প্রায় ৮ দশমিক ৪ কোটি টন উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। এ খাতে রয়েছে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। তাছাড়া এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কয়েক লক্ষাধিক নির্মাণ শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন। এ খাত থেকে সরকারি কোষাগারে শুল্ক-করের মাধ্যমে জমা হয় বছরে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। দেশে সিমেন্টের পুরো চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদেশেও সিমেন্ট রপ্তানি হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর