শিরোনাম
রবিবার, ১৩ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

পাঁচ মাসে কাজ নিয়ে বিদেশ গেছেন ১ লাখ ৯৫ হাজার বাংলাদেশি

প্রবাসে কাজের নতুন গন্তব্য পোল্যান্ড আলবেনিয়া স্লোভেনিয়া উজবেকিস্তান

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

করোনা মহামারী শুরুর পর বাংলাদেশিদের বিদেশে কর্মসংস্থানে যে ধস নেমেছিল তা কেটে যাচ্ছে। সরকারি পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালজুড়ে যেখানে মাত্র ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৯ বাংলাদেশির বিদেশে কাজ হয়েছে, সেখানে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই (জানুয়ারি-মে) ১ লাখ ৯৫ হাজার ২৪০ বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কভিড-১৯ সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় গত বছরের পুরো সময়জুড়ে লকডাউনে ছিল বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র। অনেক দেশ তাদের সীমানা বন্ধ করে দেয়। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো নিজেদের উড়ান বন্ধ রাখে। ফলে বিদেশে কর্মসংস্থানের খাতটিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ২০১৯ সালে যেখানে ৭ লাখ বাংলাদেশির বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছিল, করোনা মহামারীর পর ২০২০ সালে তা এক ধাক্কায় নেমে আসে ২ লাখে। তবে চলতি বছরে আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে প্রবাসে কর্মসংস্থানের এ খাতটি। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানান, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতি বছর মোট ৭ লাখ করে তিন বছরে ২১ লাখ কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। তবে করোনা মহামারীর কারণে সে লক্ষ্য অর্জন চ্যালেঞ্জে পড়লেও সরকার বিদেশে কাজের বাজারটি ধরে রাখতে নতুন নতুন উদ্যোগ হাতে নিচ্ছে। দেশে ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জনবল বাড়ানো হচ্ছে। বিদেশে যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করতে আট বিভাগীয় শহরে বিভাগীয় কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের নিজস্ব ভবন স্থাপনের পাশাপাশি আরও ২২ জেলায় এর অফিস স্থাপন করা হচ্ছে। প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণে বিদেশে আরও সাতটি শ্রমকল্যাণ উইং স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশে গমনেচ্ছু কর্মীদের যাদের পাসপোর্টের মেয়াদ ছয় মাসের কম আছে তাদের নতুন করে জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট নবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রবাসী কর্মীদের যে কোনো সমস্যা সমাধানে কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। আর প্রচলিত শ্রমবাজারের পাশাপাশি বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, করোনার প্রভাব মোকাবিলায় বিদেশে কর্মসংস্থান বাড়াতে যেসব কৌশল রয়েছে তার মধ্যে নতুন দেশে নতুন কর্মী পাঠানো গুরুত্ব পাচ্ছে বেশি। বাংলাদেশের প্রথাগত শ্রমবাজারের বাইরে বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের দেশ পোল্যান্ড, আলবেনিয়া, স্লোভেনিয়া, বসনিয়া-হারজেগোভিনা এবং এশিয়ার উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের জন্য পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া বিদেশে নারী কর্মসংস্থান বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদেশে কাজের জন্য বাংলাদেশিদের প্রধান গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ। বিশেষ করে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন। এর বাইরে সিঙ্গাপুর, কোরিয়া ও মালয়েশিয়ায়ও প্রচুর বাংলাদেশি কর্মসংস্থানে নিয়োজিত আছেন। ইউরোপের মধ্যে যুক্তরাজ্য, ইতালি প্রধান গন্তব্যস্থল। এর মধ্যে মালয়েশিয়ার বাজারটি উন্মুক্ত হলে প্রচুর বাংলাদেশির কাজের সুযোগ হবে। এর বাইরে পূর্ব ইউরোপ ও এশিয়ার নতুন গন্তব্যগুলোয় কর্মী পাঠানোর কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারলে বাংলাদেশিদের বিদেশে কাজের সুযোগ আরও বেড়ে যাবে।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)-এর কর্মকর্তারা জানান, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারা পুরুষ কর্মীর পাশাপাশি নারী কর্মীদের বিদেশে কাজের সুযোগ সৃষ্টির ওপর জোর দিচ্ছেন। এ লক্ষ্যে জেলা পর্যায়ে ৩০ দিনব্যাপী আবাসিক প্রশিক্ষণ প্রদান, নারী কর্মী নির্বাচন এবং ওরিয়েন্টেশন কার্যক্রম সম্প্রসারণ, নারী কর্মী অভিযোগ ব্যবস্থাপনা সেল ও বিদেশে সেফ হোম স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে বৈদেশিক কর্মসংস্থানে নারী কর্মীর সংখ্যা বাড়ছে। বিএমইটির তথ্যানুযায়ী ২০২০ সালজুড়ে যেখানে ২১ হাজার ৯২৯ নারী বিদেশে কাজ পেয়েছিলেন, এবার পাঁচ মাসেই তা অতিক্রম করেছে। জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ২৮ হাজার ৮২৪ নারী কাজ নিয়ে বিদেশে গেছেন।

সর্বশেষ খবর