শুক্রবার, ২ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেল চট্টগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেল চট্টগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতাল

চট্টগ্রামে মা ও শিশু হাসপাতালের ভিতর পানি থইথই -বাংলাদেশ প্রতিদিন

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে মা ও শিশু হাসপাতালের নিচতলায় আছে ১০টি বহির্বিভাগ। এসব বিভাগে দৈনিক রোগী দেখা হয় ৪০০ থেকে ৫০০ জন। এ ছাড়া আছে জরুরি বিভাগ, শিশুস্বাস্থ্য ওয়ার্ড, শিশু মানসিক বিকাশ কেন্দ্র। কিন্তু এমন জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রদান প্রতিষ্ঠানটি বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় পানিতে। সঙ্গে থাকে জোয়ারের পানির আতঙ্ক। ফলে চট্টগ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় বাতিঘরে খ্যাত প্রতিষ্ঠানটিতে বর্ষা মৌসুমে সঙ্গী হয় দুর্ভোগ। রোগীদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে। হাঁটুপানি মাড়িয়েই নিতে হয় সেবা। করুণ দশা তৈরি হয় চট্টগ্রামের গরিব-অসহায় রোগীদের ভরসার ঠিকানা এ হাসপাতালটির। বুধবার রাত ও গতকালের বৃষ্টিতেও যথারীতি তলিয়ে যায় হাসপাতালের পুরো নিচতলা।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে নিচতলার জরুরি বিভাগ তৃতীয় তলায় এবং শিশু ওয়ার্ডকে চতুর্থ তলায় স্থানান্তর করে। নিচতলায় আরও আছে মসজিদ, অভ্যর্থনা কক্ষ, সব বহির্বিভাগ ও প্রশাসনিক বিভাগ। এসব বিভাগে গতকাল বিকাল পর্যন্ত ছিল হাঁটুপানি। হাসপাতালের ওয়ার্ডমাস্টার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বুধবার থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর ধীরে ধীরে হাসপাতালের আশপাশ এলাকায় পানি জমতে থাকে। গতকাল প্রথমে হাসপাতালের প্রবেশমুখে পানি জমে, এরপর নিচতলা পানিতে তলিয়ে যায়।’ চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) এস এম মোরশেদ হোসেন বলেন, হাসপাতালের নিচতলায় পানি ঢোকার কারণে শিশু ওয়ার্ড, অভ্যর্থনা কক্ষ, সব বহির্বিভাগ, প্রশাসনিক বিভাগ এখনো জলমগ্ন। তবে জরুরি বিভাগ ও শিশু ওয়ার্ডের কিছু রোগী অন্য বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে। কোনো রোগীকে কোনো সমস্যায় পড়তে দেওয়া হয়নি এবং অন্যান্য সেবাও অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, ‘জলাবদ্ধতার বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে একাধিকবার বলেছি। তবু এ সমস্যা নিরসন হয়নি।’ হাসপাতালের পরিচালক ডা. নুরুল হক বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই পানি ওঠা নিয়মে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে থাকে জোয়ারের পানির আতঙ্ক। কেবল হাসপাতাল নয়, আগ্রাবাদের অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এখনো হাসপাতালের আশাপাশের এলাকা ও সড়ক পানির নিচে।’ গতকাল দুপুরে দেখা যায়, হাসপাতালের নিচতলায় হাঁটুপানিতে টইট¤ু^র। পানিতে ভাসছে ব্যবহৃত গ্লাভস, মাস্ক, গজ ব্যান্ডেজ, ওষুধের প্যাকেট, ময়লা, আবর্জনা, পলিথিনসহ নানা বর্জ্য। তবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন ময়লাপানি মাড়িয়েই চিকিৎসা নিতে আসতে হচ্ছে করোনাসহ নানা রোগে আক্রান্ত অনেক রোগীকে। নিচতলায় থাকা কিছু ওয়ার্ডে নোংরা পানি ঢুকে যাওয়ায় মেঝেতে পা ফেলা যাচ্ছে না। ফলে পা গুটিয়ে বেডের ওপর বসে থাকতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের। হাসপাতালের প্রধান ফটক ও পুরো নিচতলায় অতিরিক্ত পানির কারণে অনেক দূর থেকে চিকিৎসা নিতে এসেও সম্ভব হয় না ভিতরে প্রবেশের। এতে ফিরে যেতে হয় অনেককেই। জানা যায়, পুরো আগ্রাবাদ এলাকার পানি মহেশখাল হয়ে প্রবাহিত হয়ে কর্ণফুলী নদীতে পড়ে। কিন্তু এখন খাল, নালা-নর্দমা দখল ও বিভিন্ন জায়গায় খাল সরু হয়ে যাওয়ায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে মুষলধারে বৃষ্টি হলেই পানি আটকে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। পক্ষান্তরে হাসপাতালের এমন সমস্যা সমাধানে উদাসীন দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই সংস্থা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। দুই সংস্থাকে একাধিকবার চিঠি দিয়েও চলমান সমস্যার সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিচতলা আড়াই থেকে তিন ফুট উঁচু করলেও মিলছে না এর সুফল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ জলাবদ্ধতার নিরসন চায়। প্রসঙ্গত, ১৯৭৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক শিশুবর্ষ উপলক্ষে চট্টগ্রামের কিছু মহৎপ্রাণ সমাজহিতৈষীর উদ্যোগে শিশু হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি ক্রমে চট্টগ্রামে বেসরকারি পর্যায়ে বৃহত্তম স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালের পুরনো ভবনের ৮০০ শয্যায় চলছে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা। এ ছাড়া পৃথক করোনা ওয়ার্ডে আছে ১০টি আইসিইউ, ছয়টি এইচডিইউ, জেনারেল বেড ৪০টি ও কেবিন ৩০টি। প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ৮৫০ শয্যার ১৪ তলাবিশিষ্ট ভবন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর