প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এত দিন প্রবাসীরা আমাদের দিয়েছেন এখন আমরা তাদের দেব। করোনার কারণে যারা দেশে ফিরে এসেছেন তারা যেন সম্মানজনক কোনো পেশায় যুক্ত হতে পারেন। কিংবা আরও উন্নত প্রশিক্ষণ নিয়ে আবারও বিদেশে ফিরে যেতে পারেন। এ ছাড়া নারীদের প্রশিক্ষণের জন্য আলাদা প্রকল্প না নিয়ে রাজস্ব খাতে নিয়মিত প্রশিক্ষণের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এমন নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বৈঠক পরবর্তী ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকে ২ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা ব্যয় সংবলিত ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। সেতু ও কালভার্ট নির্মাণে নৌ-চলাচলের জন্য উপযোগী উচ্চতা ঠিক রাখাসহ একনেক বৈঠকে সাতটি অনুশাসন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন অর্থবছরের প্রথম এবং বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের ৬১তম একনেক সভায় এ অনুশাসন দেন বলে বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের জানান। পরে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমও এসব অনুশাসনের ব্যাখ্যা দেন। ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, রাস্তা নির্মাণ ও সম্প্রসারণে ওভারপাস, আন্ডারপাস ও ইউলুপ তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, রাস্তার কারণে যাতে যান ও মানুষের চলাচল বাধাগ্রস্ত না হয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সড়ক ও জনপ্রশাসন বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। করোনাকালে দেশে ফেরত আসা প্রবাসীদের কর্মসংস্থানে নেওয়া একটি প্রকল্প পাস হওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার উদ্ধৃতি দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘তারা (প্রবাসীরা) এতদিন আমাদের দিয়েছেন। এখন তাদের আমাদের দিতে হবে। তারা যাতে পুনরায় আমাদের সমাজে রিইন্টিগ্রেড হতে পারে। তারা যেন সম্মানজনক পেশায় যুক্ত হতে পারেন, তার জন্য সহায়তা দিতে হবে।’
এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৫ লাখ প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন। এরমধ্যে প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণের লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃজনে সহায়ক প্রকল্পের মাধ্যমে ২ লাখ শ্রমিককে সহায়তা করা হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রবাসী শ্রমিকদের ডাটাবেজ করা হবে।’
নারীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্য নেওয়া একটি প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নারীদের জন্য এ ধরনের প্রশিক্ষণ ব্যাপকভাবে গ্রহণ করতে বলেছেন। তিনি এ বিষয়গুলো প্রকল্পের মধ্যে না এনে রাজস্ব বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছেন।’
এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নারীদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি রাজস্ব বাজেটে যেতে পারে। এটাকে প্রকল্প আকারে আনার দরকার পড়ে না। নিয়মিত কার্যক্রমের মধ্যে নিয়ে আসা যায়।’ ব্রিজ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর সতর্কতার কথা ?উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী আগেও কয়েকবার বলেছেন। আজও বলেছেন যে, ব্রিজ নির্মাণে উচ্চতা যেন ঠিক থাকে। জোয়ার-ভাটায় বাংলাদেশে পানি বাড়ে-কমে। এ জন্য নৌ, সড়ক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে সমন্বয় করে এসব ব্রিজ-কালভার্ট তৈরি করবেন। সেতুগুলোর উচ্চতা যেন যথাযথ হয়, সেটা দেখতে হবে।’ মুন্সীগঞ্জে পদ্মার ভাটিতে বাঁধ নির্মাণ বিষয়ে প্রকল্প পাসের সময় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এখানে-সেখানে অনেক বালুমহাল গড়ে উঠেছে। এগুলো যথাযথ স্থানে স্থানান্তর করতে হবে। বালু ব্যবসা বন্ধের কথা বলছি না। কিন্তু যার যেখানে ইচ্ছা এটা করবে, এটা ঠিক নয়। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী নৌসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।’
বিসিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পনগরী প্রকল্প পাসের সময় প্রধানমন্ত্রী ওই শিল্পনগরীকে অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের পাশাপাশি দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য তৈরির ইউনিট রাখার নির্দেশনা নিয়েছেন বলে মন্ত্রী জানান। এক প্রশ্নের জবাবে ড. শামসুল আলম বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আয়রন ব্রিজ পুনর্নির্মাণ বা পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় জরাজীর্ণ ৮০৫টি লোহার ব্রিজ ভেঙে সেখানে আরসিসি বা পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ১ হাজার ২৪৪টি লোহার ব্রিজ পুনর্নির্মাণ বা পুনর্বাসন করা হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভুল পরিকল্পনার কারণে বুড়িগঙ্গা নদীতে নির্মিত শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু (বছিলা সেতু নামে পরিচিত) ভেঙে ফেলার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। কারণ, ওই সেতুর নিচ দিয়ে নৌযান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
একনেকে ১০ প্রকল্প অনুমোদন : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক ২ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ের ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ২ হাজার ১৫০ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ ৪২৫ কোটি টাকা। গতকাল প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো- ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে তিনটি আন্ডারপাস ও পদুয়ার বাজার ইন্টারসেকশনে ইউলুপ নির্মাণ প্রকল্প’ এবং ‘জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (ময়মনসিংহ জোন) (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প। ‘অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় বাংলাদেশ চ্যান্সারি ভবন নির্মাণ প্রকল্প’। ‘ইনস্টিটিউট অব টিস্যু ব্যাংকিং অ্যান্ড বায়োমেটেরিয়াল রিসার্চ-এর সেবা ও গবেষণা সুবিধাদির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্প। ‘জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ (৬৪ জেলা) (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্প। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ শিশু কার্ডিওলজি ও শিশু কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট স্থাপন’ প্রকল্প। ‘দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আয়রণ ব্রিজ পুনর্নির্মাণ/পুনর্বাসন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প। ‘পদ্মা বহুমুখী সেতুর ভাটিতে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলাধীন বিভিন্ন স্থানে পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ’ প্রকল্প। ‘প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণের লক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক’ প্রকল্প এবং ‘বিসিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পনগরী, ঠাকুরগাঁও’ প্রকল্প।
