রবিবার, ১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

জুলাইতে বছরের রেকর্ড ডেঙ্গুর

জয়শ্রী ভাদুড়ী

জুলাইতে বছরের রেকর্ড ডেঙ্গুর

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭২ জন। শুধু জুলাইতে এর ছয় গুণের বেশি ২ হাজার ২৮৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন ডেঙ্গুতে। করোনা মহামারীর মধ্যে ডেঙ্গু রোগী বাড়ায় তৈরি হয়েছে উৎকণ্ঠা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১৯৬ জন। এর মধ্যে রাজধানীর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৯৪ জন এবং ঢাকার বাইরে হাসপাতালে দুজন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭৭৭ জন। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৭৪৭ জন। অন্যান্য বিভাগে ৩০ জন। গত ৩০ জুলাই আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৭০ জন, গত ২৯ জুলাই আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৯৪ জন। প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। প্রতি বছর এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম ধরা হয়। জুলাই মাসের শুরু থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। এ মাসে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ২৮৬ জন। এ বছরের জানুয়ারিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে নয়জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিনজন, মে মাসে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৬৫৮ জন। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন ১ হাজার ৮৭৭ জন। এ  পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু সন্দেহে চারজনের তথ্য রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে।

ডেঙ্গু থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এপ্রিল-অক্টোবর পর্যন্ত সময় ডেঙ্গু মৌসুম হওয়ায় সতর্কতা খুব জরুরি। জুলাইতে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়েছে। নগরের বাসিন্দারের ঘরের ভিতরের জমে থাকা পানি পরিষ্কার করতে হবে এবং সিটি করপোরেশনকে বাইরে পরিষ্কারে তৎপর হতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে শরীরে প্রচ- ব্যথা ও জ্বর আসতে পারে। এ ছাড়া শরীরে অ্যালার্জির মতো র‌্যাশ উঠতে পারে। এ সময় জ্বর আসলে করোনা টেস্টের পাশাপাশি ডেঙ্গু টেস্টও করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথানাশক ট্যাবলেট খাওয়া যাবে না। জ্বর আসলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।’

ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আলাদা হাসপাতালের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। নন কভিড রোগীর চিকিৎসা, করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা, টেস্ট, টিকা সব মিলিয়ে একসঙ্গে করতে হচ্ছে। তাই আমরা বেশ কয়েকটি হাসপাতাল চিহ্নিত করেছি, যেখানে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা নেব। কারণ যেখানে করোনা রোগীর চিকিৎসা হয়, সেখানে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল, লালকুঠি হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতালসহ আরও কয়েকটি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা হবে।’ গতকাল রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১৯ জন, বিজিবি হাসপাতালে একজন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১১ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৯ জন। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগে একজন এবং খুলনা বিভাগে একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মো. রশীদ-উন-নবী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল সকালে ১০৪ জন ভর্তি ছিলেন, এর আগে দুই দিনে ৯৯ জন ও ৯৬ জন ভর্তি ছিলেন। শিশুদের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার হার এবার কিছুটা বেশি দেখছি। রোগীরা আক্রান্ত হওয়ার পরে দ্রুত হাসপাতালে আসলে সঠিক সময়ে সেবা নিশ্চিত করা যায়। দেরি হলে অনেক সময় জীবন রক্ষা ঝুঁকি হয়ে যায়।’

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে নগরবাসীকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। গতকাল তিনি বলেছেন, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমকে সামাজিক আন্দোলনে রূপান্তরিত করে এডিস মশা প্রতিরোধ করতে হবে। সবাইকে প্রতি শনিবার সকাল ১০টায় ১০ মিনিট স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ নিজ বাসাবাড়ি পরিষ্কার করতে হবে। তিনি ফেসবুক লাইভে এসে এ আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ডিএনসিসির ১০টি অঞ্চলের ৫৪টি ওয়ার্ডে একযোগে ২৭ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত চিরুনি অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। সরকারি কিংবা বেসরকারি যে কোনো ভবনে এডিস মশার উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত হলেই জরিমানাসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর ডিএনসিসি মেয়র উত্তরায় মশক নিধনে চিরুনি অভিযান কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তার উপস্থিতিতেই ১২ নম্বর সেক্টরে একটি ভবনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিয়া আফরীন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় ভবনের মালিককে ১০ হাজার টাকা এবং একটি নির্মাণাধীন ভবনে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় ডেভেলপার কোম্পানিকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

সর্বশেষ খবর