বুধবার, ১৮ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

চন্দ্রিমায় বিএনপি পুলিশ সংঘর্ষ

পরিকল্পনা সচিবের গাড়িতে হামলা, ভাঙচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

চন্দ্রিমায় বিএনপি পুলিশ সংঘর্ষ

রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে গতকাল পুলিশ ও বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর শেরেবাংলানগরে জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনে যাওয়া বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সকালে সংঘর্ষের সময় পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেটে অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। আহতদের মধ্যে ঢাকা মহানগর বিএনপির উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, সদস্য সচিব আমিনুল হক, যুগ্ম-আহ্বায়ক ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা শাহজাহান মিয়া সম্রাটও রয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক এ জে এম  শামসুল হকসহ ১২ নেতা-কর্মীকে। সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া একটি বেসরকারি টেলিভিশনের একজন সাংবাদিক ও দুজন ক্যামেরাম্যানও আহত হয়েছেন।

হঠাৎ করে এ সংঘর্ষের জন্য পুলিশ ও বিএনপি পরস্পরকে দায়ী করেছে। পুলিশ বলছে, তাদের ওপর বিএনপি কর্মীরা অতর্কিত হামলা করেন। আর বিএনপি বলছে, পুলিশ বিনা উসকানিতে এ হামলা চালিয়েছে। এদিকে হামলার প্রতিবাদে আজ বুধবার ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের থানায় থানায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। আহত নেতা-কর্মীদের চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।

সংঘর্ষ শেষ হওয়ার পর বেলা ১২টার দিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে চন্দ্রিমা উদ্যানে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে যান এবং ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তিনি বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ একটা কর্মসূচিতে পুলিশ গুলি করে, লাঠিপেটা করে অসংখ্য নেতা-কর্মীকে আহত করেছে। এই সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। তারা সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ জন্যই তারা পুলিশ দিয়ে নির্যাতন করে, গুলি করে, লাঠিপেটা করে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করে রাখতে চায়।

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সদস্য সচিব রফিকুল আলমসহ বিভিন্ন স্তরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আমানউল্লাহ আমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছিল এবং পুলিশকে অবহিত করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ বিনা উসকানিতে হামলা করেছে, গুলি করেছে।’

ঘটনার বিষয়ে শেরেবাংলানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম মুন্সি সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিকই ছিল। আগেও তারা এখানে এসে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু আজ (মঙ্গলবার) বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমানের পক্ষের উচ্ছৃঙ্খল কয়েকজন এসে হট্টগোল শুরু করে পুলিশের ওপর চড়াও হন। অতর্কিত হামলা করেন পুলিশের ওপর।’

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গতকাল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নবগঠিত কমিটির নেতা-কর্মীদের দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর কর্মসূচি ছিল। এ জন্য সকাল থেকেই কয়েক হাজার নেতা-কর্মী চন্দ্রিমা উদ্যানের সামনে জড়ো হন। এ সময় চন্দ্রিমা উদ্যানের সব গেট বন্ধ ছিল। পরে অনেকেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মাঠের পাশের দেয়াল টপকে জিয়ার সমাধিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন। সে সময় পুলিশ তাদের ভিতরে যেতে বাধা দেয়। এ সময় বিএনপির মহানগর উত্তরের কমিটির সদস্য সচিব জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার আমিনুল হকের সঙ্গে পুলিশের তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে বলেও অভিযোগ বিএনপির নেতা-কর্মীদের। এ সময় আমিনুল হকসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। আমিনুলের শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল। পুরো পাঞ্জাবি রক্তে ভেজা ছিল।

এরপর বেলা পৌনে ১১টার দিকে উত্তরের নেতা-কর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে জিয়ার সমাধিমুখী সড়কে যেতে থাকলে পুলিশ ফের কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় নেতা-কর্মীরা এদিক-ওদিকে ছুটতে থাকেন। কয়েকজন নেতা-কর্মীকে লাঠিপেটা করতে দেখা যায়। পরে জড়ো হয়ে নেতা-কর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে লাঠি ও ইটপাটকেল ছোড়েন। এ সময় থেমে থেমে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশ সদস্যও আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক দলীয় নেতা-কর্মীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় শেরেবাংলানগর, ফার্মগেট এলাকার আশপাশের রাস্তায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা রাস্তায় নেমে বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুরও করেন। এর মধ্যে পরিকল্পনা কমিশনের সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারীর গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।

এদিকে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে আজ বুধবার ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের থানায় থানায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। গতকাল বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতরের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর