বাংলাদেশ সরকার চাইলে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো। তিনি বলেন, জাতিসংঘ কোনো দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে না। তবে কোনো দেশের সরকার নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সহায়তা চাইলে জাতিসংঘ তা দিয়ে থাকে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের কোনো সহযোগিতা চাইলে আমরা সেই সহযোগিতা দেব। গতকাল ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত অনুষ্ঠানে নির্বাচন ছাড়াও রোহিঙ্গা সংকট, ভাসানচর, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, আফগানিস্তান পরিস্থিতি, জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারী থেকে উত্তরণ, জেন্ডার ও সহযোগিতাসহ নানান ইস্যুতে কথা বলেন। রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে মিয়া সেপ্পো বলেন, রোহিঙ্গা সংকট কেবল মানবিক নয়, রাজনৈতিকও বটে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা একমত হতে না পারায় রোহিঙ্গা সংকটের রাজনৈতিক সমাধান হচ্ছে না। মিয়া সেপ্পো বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংক যে প্রস্তাব দিয়েছে, সেটা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। জাতিসংঘ বিশ্বব্যাংকের বৈশ্বিক শরণার্থীবিষয়ক নীতিকে সমর্থন করে। যদিও অনেক দেশের স্থানীয় নীতির সঙ্গে বৈশ্বিক নীতির পার্থক্য আছে। এই পার্থক্য থাকবে। রোহিঙ্গা ইস্যুকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজরে রাখা বাংলাদেশের দায়িত্ব। ভাসানচরে জাতিসংঘ যুক্ত হওয়ার সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত হয়েছে উল্লেখ করে মিয়া সেপ্পো বলেন, এটা দ্রুত সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
আলোচিত-সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি বলেন, এই আইন পর্যালোচনা ও তার অপব্যবহার বন্ধ করতে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে জাতিসংঘ। এটা সংস্কার হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া প্রসঙ্গে মিয়া সেপ্পো বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সরকারকে আমরা স্বাগত জানাই। এর মধ্য দিয়ে প্রান্তিক শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে পারবে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি বলেন, মিয়ানমার ও আফগানিস্তান একটি জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলছে। জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ অধিবেশনে দেশ দুটির প্রতিনিধিত্ব কে করবে, সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অপর এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো উন্নয়নই শান্তি ছাড়া সম্ভব নয়, আবার উন্নয়ন ছাড়া শান্তিও সম্ভব নয়। আসলে টেকসই শান্তি বজায় রাখা একটা চলমান প্রক্রিয়া। মিয়া সেপ্পো বলেন, কিছু বিষয় নিয়ে জাতিসংঘ উদ্বিগ্ন। এগুলো বেশ কিছু দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যেমন নারীর প্রতি ক্রমবর্ধমান সহিংসতা বাড়তে থাকা অসমতা এবং সুশীল সমাজের কর্মকান্ড ক্রমেই সংকুচিত হতে থাকা। গণতন্ত্রকে সমর্থন করা রাষ্ট্রে সুশীল সমাজের পরিধি কমে আসার বিষয়টি আসলেই উদ্বেগজনক। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ডিকাব প্রেসিডেন্ট পান্থ রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈনুদ্দিন।