বুধবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

এবার ড্রেনে পড়ে মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

এবার ড্রেনে পড়ে মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর

এবার চট্টগ্রামে নালায় পড়ে মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া (১৯)।  অভিযোগ ওঠেছে, সেবা সংস্থাগুলো পানি-আবর্জনা নিষ্কাশনে ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করে না। ফলে বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। একই সঙ্গে ড্রেনে স্লাব না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে পথচারীদের। এতে নালায় পড়ে অহরহ দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে, মাঝে-মধ্যে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। এ নিয়ে সেবা সংস্থাগুলো দায়িত্বশীল কোনো ভূমিকাই পালন করছে না। বরং সংস্থাগুলো পরস্পরকে দোষারোপ করছে। নগরের নালা পরিষ্কার ও ড্রেনে স্লাব বসানোর দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) হলেও সংস্থাটি বরাবরই দায়িত্ব এড়িয়ে চলছে। এরূপ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত সোমবার রাত ১০টায় নগরের আগ্রাবাদ শেখ মুজিব সড়কে মাজার গেট এলাকায় নালায় পড়ে নিখোঁজ হন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা রুদ্ধশ্বাস উদ্ধার অভিযান পরিচালনার পর রাত ৩টার দিকে আগ্রাবাদের নালা থেকে তাকে উদ্ধার করে। সাদিয়ার বাসা হালিশহরের বড়পোল এলাকার মইন্যাপাড়ায়। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সাদিয়া সবার বড়। বাবা মোহাম্মদ আলী প্রবাসী। বর্তমানে তিনি দেশে আছেন। গতকাল সকালে নগরের আগ্রাবাদের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় তিনি গণমাধ্যমকে এ ঘটনায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ওপর দোষ চাপান। তিনি বলেন, ‘এ সড়কে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএর দায়িত্ব ছিল জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া। কিন্তু তারা খাল-ড্রেনের ওপর কোনো নিরাপত্তাবেষ্টনী না দিয়ে উন্নয়ন কাজ করছে। নালাটি দেড় ফুট জায়গায় এনে ফেলে রাখা হয়েছে। এখান দিয়ে হাঁটতে গেলে তো সুস্থ মানুষও দিনের বেলায় পড়ে যাবে। রাতের বেলার কথা বাদই দিলাম। বড় কথা হচ্ছে সেখানে একটি লোহার নেট ছিল সেটিও তারা তুলে ফেলেছে। নেটটা থাকলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না।’ তিনি বলেন, ‘এখানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। রাস্তায় গর্ত হয়েছে, ফুটপাথের ওপর কাদা জমেছে। বৃষ্টির পর কাদা পিচ্ছিল হয়ে গেছে। কাদার ওপর পা পড়ার পর পিছলে মেয়েটি নালায় পড়ে গেছে বলে শুনেছি। এখানে যারা প্রকল্পের কাজ করছে, তাদের সতর্ক হওয়া দরকার ছিল। পানিতে রাস্তা-নালা এক হয়ে গেছে। খুঁটি গেড়ে লাল পতাকা টাঙিয়ে দিলেও তো মানুষ সতর্ক হতো। কিছুটা অবহেলা আছে। অবশ্যই আছে।’

সাদিয়াকে উদ্ধারকারী ফায়ার সার্ভিসের দলটি জানায়, ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৭০ ফুট গভীরে নালায় আবর্জনার মধ্যে আটকে ছিলেন সাদিয়া। ফায়ার সার্ভিস ও চসিকের দুটি ক্রেন দিয়ে প্রায় এক টন আবর্জনা অপসারণের পর তার নিথর দেহের সন্ধান মিলে। ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন সিকদার বলেন, ফুটপাথ ঘেঁষে সড়কের নিচে ছিল বড় নালা। কিন্তু নালার ওপর কোনো স্লাব ছিল না। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের কারণে সড়কে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়। সেখানে পানি জমে নালার আকার ধারণ করেছে। স্লাব না থাকায় নালা নাকি গর্ত তা বোঝার উপায় ছিল না।

সড়কের ওপরই স্লাব বিহীন প্রায় ১০ ফুট প্রশস্ত নালা। সড়কের নিচে একটা নালা প্রায় ১০ ফুট প্রশস্ত। এর ভিতরে আরেকটা নালা পাওয়া যায়, সেটাও ৮ থেকে ১০ ফুট প্রশস্ত। সম্ভবত ৫০-৬০ বছর আগে সড়ক উঁচু করার সময় অপরিকল্পিতভাবে সেই নালা রেখেই আরেকটি নালা করা হয়। আগের সেই নালা ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ। কমপক্ষে সেখানে তিন টন আবর্জনা জমে আছে। অনেক চেষ্টা করেও ডুবুরি সেখানে যেতে পারেনি। সেটা আবার টার্ন নিয়েছে কর্ণফুলী নদীর দিকে-দক্ষিণে। এরপর দুই ক্রেন মিলে সেই নালার স্লাব উঠিয়ে এক টনের মতো আবর্জনা-মাটি অপসারণ করা হয়। প্রায় চার ঘণ্টা চেষ্টার পর আগের সেই নালার মধ্যে, সড়ক থেকে কমপক্ষে ৭০ ফুট গভীরে আবর্জনায় আটকে থাকা অবস্থায় লাশ উদ্ধার করা হয়। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরে ব্যবসায়ী সালেহ আহমদ (৫০) গত ২৫ আগস্ট পানির স্রোতে নালায় তলিয়ে যায়। এক মাস দুই দিন পার হলেও এখনো মেলেনি ওই ব্যবসায়ীর খোঁজ।

সর্বশেষ খবর