পণ্য সরবরাহ না করে গ্রাহকের ২৫০ কোটি টাকা আটকে রাখার অভিযোগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রিপন মিয়াকে রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে আটক করা হয়েছে। পরে পল্টন থানায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও প্রতারণার মামলা করেন এক ভুক্তভোগী। সেই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হলে বিচারক আশেক ইমাম দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কিউকমের সিইও রিপন মিয়াকে গ্রেফতার করেছে ডিবির মতিঝিল বিভাগ। করোনাকালে ই-কমার্স ব্যবসার দ্রুত প্রসার ঘটে। নাগরিকরাও এতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। কিউকমও করোনাকালীন তাদের ব্যবসা শুরু করে। বর্তমানে কিউকমের অনেক ক্রেতাই পণ্য কিনে না পেয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। রিপন মিয়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, কিউকম প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে পণ্য অনলাইনে কেনাবেচা করে আসছিল। তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডিং করার জন্য ব্যাপকভাবে মোটরসাইকেল বিক্রি করে। বিভিন্ন অফারের মাধ্যমে কিউকম লোভনীয় দামে মোটরসাইকেল বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিল। তিনি বলেন, বাজারে যে মোটরসাইকেলের দাম ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা সেটি তারা ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রির বিজ্ঞাপন দিত। বিপুল সংখ্যক ক্রেতা অর্ডার করে মোটরসাইকেল না পেয়ে হতাশায় ভোগেন। এক্ষেত্রে রিপন মিয়া মোটরসাইকেল সরবরাহ না করে ১ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার চেক দিতেন গ্রাহকদের। হাফিজ আক্তার বলেন, বর্তমানে আমরা জানি যে বাংলাদেশ ব্যাংক জুন মাস থেকে এস্ক্রো সিস্টেম চালু করেছে। এর অধীনে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পেমেন্ট গেটওয়ে সিস্টেম চালু করা হয়। তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ফোস্টার নামে একটি কোম্পানিকে এ দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহকের পেমেন্টটি ফোস্টারের কাছে থাকবে, পণ্য ডেলিভারির পর পেমেন্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠাবে ফোস্টার। কিউকমের পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে চেক প্রদানের বিষয়টি ফোস্টারের নজরে আসে। পরে ফোস্টার কিউকমের সব পেমেন্ট আটকিয়ে দেয়। ফোস্টার এখন পর্যন্ত কিউকমের ৩৯৭ কোটি টাকা মোটরসাইকেলের পেমেন্ট আটকে দিয়েছে বলে রিপন মিয়া তাদের কাছে দাবি করেছেন। এ ছাড়া তার কাছে গ্রাহকের পণ্য ডেলিভারির ২৫০ কোটি টাকা আটকে আছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকম ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাজারমূল্যের চেয়ে কমে পণ্য দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের ধোঁকা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কিউকম অনলাইনে পণ্য বিক্রি করত। ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার জন্য কিউকম ‘বিজয় আওয়ার’ ‘স্বাধীনতা আওয়ার’ ‘বিগ বিলিয়ন’ নামে দুই থেকে ১৫ দিন সময় দিয়ে ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকার মোটরসাইকেল ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু সময়মতো কিউকম পণ্য সরবরাহ করতে পারেনি।
জানা গেছে, পল্টন থানায় রিপন মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন সৌরভ দে। এজাহারে তিনিসহ ১৫ জনের নাম ভুক্তভোগী হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। কিউকম থেকে তাদের পাওনার পরিমাণ ৩ কোটি ৩০ লাখ ৩৯ টাকা।