শিরোনাম
শুক্রবার, ২২ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
উৎকণ্ঠা রয়েছে এখনো

বিশেষ ট্রাইব্যুনালের দাবি, সারা দেশে প্রতিবাদ

নিজস্ব ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদ এবং এর সঙ্গে জড়িতদের বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। একই সঙ্গে এসব ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ব্যর্থ আখ্যা দিয়ে তাঁর অপসারণ, রাষ্ট্রধর্ম বাতিলসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

বুধবার বিকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ শীর্ষক ব্যানারে এক বিক্ষোভ                 সমাবেশ থেকে তাঁরা এসব দাবি জানান। এ সময় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সরকার যেভাবে করছে প্রয়োজনে সেভাবে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এসব হামলায় জড়িতদের সঠিক বিচার করতে হবে। তিনি বলেন, আজকে আমরা এমন একটি বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছি, আমাদের পূর্বসূরি যাঁরা মহান মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তাঁরাও হয়তো এ অবস্থার কথা কল্পনা করতে পারেননি। এর আগে আমরা দেখেছি সংখ্যালঘুদের উৎসবগুলো অন্তত নির্বিঘ্ন করার চেষ্টা করা হতো। কিন্তু এবার যে হামলা হয়েছে স্বাধীনতার পর এভাবে ঘোষণা দিয়ে এত বড় হামলা হয়নি। এক নোয়াখালীতেই তিন দিন হামলা হয়েছে। তাদের ঠেকাবার যেন কেউ নেই! আমাদের যেন কোনো সরকার নেই, রাষ্ট্র নেই, যেন কোনো প্রশাসন নেই! বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দী বলেন, আমরা বিভিন্ন পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেছি। হত্যাকান্ড হয়েছে, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, দোকানপাট লুট হয়েছে, অগ্নিকান্ডে ঘরবাড়ি ভস্মীভূত হয়েছে। আজ হিন্দুরা বলছেন এ দেশ কি আমাদের? এ দেশে কি আমরা বসবাস করতে পারব? এ প্রশ্নের উত্তর আপনাদের সবাইকে দিতে হবে। সমাবেশে ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু বলেন, ১৯৭১ সালে মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য। আজকের এই বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেনি। আওয়ামী লীগ সরকার কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে। আজকে ১৩ বছর ধরে জনগণের শাসনতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। সমাবেশ থেকে সাত দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে আছে- সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়িত এবং মদদদাতাদের গ্রেফতার ও বিচার, নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অপসারণ, সভা- সমাবেশ ও ইউটিউব-ফেসবুকে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ, বহুধারার শিক্ষা পদ্ধতি বাতিল করে মাতৃভাষায় এক ধারার বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা পদ্ধতি চালু, পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণ রহিত, সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা তদন্তে ‘গণতদন্ত কমিটি’ গঠন করে তার সুপারিশ বাস্তবায়ন, সংবিধান সংশোধন করে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ বাতিল এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা প্রভৃতি। নাগরিক বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক এ এন রাশেদা, নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ আন্দোলনের নেতা আকরামুল হক, আইনজীবী ও লেখক ইমতিয়াজ মাহমুদ, সাবেক ছাত্রনেতা এস এইচ শুভ্র প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি মশালমিছিল কাঁটাবন, নীলক্ষেত হয়ে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়।

বাগেরহাটে র‌্যালি সমাবেশ মানববন্ধন : বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোংলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণœ রাখতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি র‌্যালি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সকালে দুটি উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের যৌথ আয়োজনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাগেরহাট প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স ফোরাম। সাংবাদিক ও এনজিও কর্মীরা সংহতি প্রকাশ করে মানববন্ধনে অংশ নেন। সমাবেশ ও মানববন্ধন থেকে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুরে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

লক্ষ্মীপুরে সম্প্রীতি সমাবেশ : লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন মসজিদের খতিব ও মন্দির কমিটির নেতাদের নিয়ে সদর মডেল থানার আয়োজনে সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে বক্তারা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করা, গুজব রটিয়ে অন্য ধর্মের মানুষের জানমালের ক্ষতি না করাসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বগুড়ায় মানববন্ধন সমাবেশ : বগুড়া জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের আয়োজনে সাতমাথায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বগুড়ার ১২ উপজেলার প্রায় ১ হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বী অংশ নেন। বক্তারা বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বী যারা আছি তারা ১৯৪৭-এর দেশভাগের সময় দেশ ত্যাগ করিনি, মুক্তিযুদ্ধের সময়ও দেশ ছেড়ে যাইনি। তার অর্থ এই যে আমরা এ দেশেই থাকতে চাই। তাহলে কেন আমাদের সঙ্গে এমনটা হচ্ছে। কেনই বা আমাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

টাঙ্গাইলে মানববন্ধন : টাঙ্গাইলে ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু ম্যুরালের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক সংগঠন। গতকাল সকালে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

 

পটুয়াখালীতে বিক্ষোভ কর্মসূচি : পটুয়াখালী প্রেস ক্লাবের সামনে ‘সম্প্রীতির মঞ্চ’-এর ব্যানারে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় প্রতিবাদী সংগীতও পরিবেশন করা হয়। এতে বিভিন্ন ধর্মের মানুষসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের মানুষ যোগ দেন। বক্তারা বলেন, দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন স্থানে মন্দির, দোকান ও বাসাবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে। জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

নাটোরে সম্প্রীতি সমাবেশ ও র‌্যালি : নাটোরে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সম্প্রীতি সমাবেশ ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্বাধীনতা চত্বর থেকে র‌্যালি শুরু হয়ে আলাইপুরে অনিমা চৌধুরী অডিটোরিয়ামে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, সব ধর্মের প্রতিনিধি, ছাত্র-শিক্ষকসহ সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বরিশালে মানববন্ধন, সম্প্রীতি সমাবেশ ও বিক্ষোভ : ‘রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’ স্লোগান নিয়ে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের পাশে মানববন্ধন ও সম্প্রীতি সমাবেশ করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। বক্তারা সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একই সঙ্গে এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান। একই দাবিতে গতকাল সকাল ১০টায় মহানগরের সদর রোডে অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি। মিছিল শেষে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি দেন তারা।

সর্বশেষ খবর