সোমবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
দুই দলে দুই সংকট

বিএনপির উপজেলা পৌরসভায় পাল্টাপাল্টি কমিটি

শফিউল আলম দোলন

বিএনপির উপজেলা পৌরসভায় পাল্টাপাল্টি কমিটি

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সব পর্যায়ের কমিটি পুনর্গঠনের সময় বেঁধে দিয়েছে বিএনপি হাইকমান্ড। বলা হয়েছে, এসব কমিটিতে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে। নির্দেশ অনুযায়ী জেলা থেকে শুরু করে উপজেলা, থানা, পৌর ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠনের তোড়জোড় শুরু হলেও এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিয়েছে। অনেক উপজেলা ও পৌরসভায় পাল্টাপাল্টি কমিটি হচ্ছে। জেলা কমিটির কিছু নেতার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং কমিটি বাণিজ্যের মাধ্যমে পকেট কমিটি গঠনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছে। দলের কেন্দ্রীয় দফতরসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মাধ্যমে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা জেলায়, আর জেলা পর্যায়ের নেতারা তৃণমূলে  গিয়ে কমিটি গঠন করে আসলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা মানছেন না তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, নড়াইল, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ইতিমধ্যেই পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠনসহ নবগঠিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। কেন্দ্রীয় দফতরে অভিযোগের পাহাড় জমেছে- জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাংগঠনিক ইউনিট কমিটিগুলোর বিরুদ্ধে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে ইউনিয়ন বিএনপির ৩১ সদস্যের কমিটির ১৬ জনই সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগ করেছেন। উপজেলার আহ্বায়ক কমিটি থেকে পদত্যাগ করা নেতা ও সাবেক সদস্য সচিব মো. আশেক মিয়া এ অভিযোগ করেন। কোম্পানীগঞ্জে বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল করেছেন বিক্ষুব্ধ স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তাদের অভিযোগ- ত্যাগী, পরীক্ষিত ও যোগ্য ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা আর স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অযোগ্য ও টাউট শ্রেণির লোকদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে, নড়াইলে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তুলে জেলা বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন নেতা-কর্মীরা।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বেঁধে দেওয়া সময়ে থানা-উপজেলা কমিটি করতে পারেনি অনেক জেলার সাংগঠনিক ইউনিট কমিটি। এসব ইউনিট কমিটিতে যারা কাজ করছেন, তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। কেন্দ্র থেকে এসব কার্যক্রমের নজরদারি না থাকায় পকেট কমিটি গঠন প্রক্রিয়ারও অভিযোগ আসছে। সারা দেশে তৃণমূলে কমিটি গঠন নিয়ে প্রতিদিনই লিখিত শত শত অভিযোগ জমা পড়ছে এবং পড়ছে বিএনপি কেন্দ্রীয় দফতরে।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের প্রতি ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়নের পরামর্শ দিয়ে উপজেলা, থানা ও পৌরসভাসহ সব পর্যায়ের কমিটি গঠনের কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে যারা মাঠে ছিলেন, যারা দলীয় কর্মসূচিতে নিয়মিত ও ভালো সংগঠক- তাদের দিয়ে কমিটি করতে হবে। কিন্তু কেন্দ্রের এসব নির্দেশনা দায়িত্বপ্রাপ্তরা মানছেন না। নিজেদের খুঁটি শক্ত করতে অযোগ্যদের কমিটিতে স্থান দিতে দ্বিধা করছেন না। আবার অনেক স্থানে সিনিয়র নেতাদের খুশি করতে গিয়ে ত্যাগী ও যোগ্যদের বাদ দেওয়া হচ্ছে।

দফতর সূত্রমতে, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলাসহ বেশ কয়েকটি থানা-উপজেলা পৌরসভার কমিটি গঠনে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন স্থানীয় নেতারা। এতে বলা হয়েছে, জেলার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে পাশ কাটিয়ে নিজের লোক দিয়ে কমিটি দিতে চাচ্ছেন সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। লিখিত এক অভিযোগে বলা হয়, আড়াইহাজার উপজেলায় আহ্বায়ক হিসেবে ভাঙারি ইউসুফ মেম্বারের নাম তালিকায় রাখা হয়েছে, যিনি রাজনীতিতে একেবারেই সক্রিয় নন। গত ১৫ বছরে তাকে কোনো দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে তিনি সাভার উপজেলায় বসবাস করেন এবং এলাকায় যান না। কিন্তু তাকে আড়াইহাজার উপজেলায় আহ্বায়ক পদে নাম দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবু বলেন, দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা ইউসুফ মেম্বারকে নেতৃত্বে আনার আলোচনা শুরু হওয়ায় নেতা-কর্মী ক্ষুব্ধ। নারায়ণগঞ্জের মতো পাবনায় কমিটি হওয়ার পর থেকেই মারাত্মক জটিলতা দেখা দিয়েছে। সেখানে এক প্রভাবশালী নেতার অনুসারী নেতা-কর্মীদের কোণঠাসা করতে গিয়ে কমিটি গঠনে লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় নেতাদের দ্বন্দ্বে মাদারীপুর জেলা কমিটিও বহু দিন ধরে স্থগিত রয়েছে।

বিএনপির তৃণমূল ও পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, কেন্দ্র ঘোষিত কোনো কর্মসূচি পালনে জেলা বিএনপির সভাপতি বা সম্পাদকের দেখা পাওয়া যায় না। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশনা ছিল- জেলা কমিটির প্রথম সারির পাঁচজন নেতার মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠনসহ সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা। কিন্তু সেই নির্দেশনা না মেনে গত ১৮ মে নড়াইল জেলার উপজেলা ও পৌর বিএনপির মোট সাতটি শাখার ‘পকেট কমিটি’ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম সেই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যোগ্যদের নিয়েই সাতটি শাখার আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। দীর্ঘ ১২ বছর পর নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলা এবং দুটি পৌরসভার বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার পর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কমিটি বাতিলের দাবিতে শনিবার বসুরহাট বাজারে তৃণমূলের কিছু বিক্ষুব্ধ কর্মী ঝাড়ু মিছিল করেছে। নোয়াখালী জেলা বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক ওমর ফারুখ টপি কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলা এবং দুটি পৌরসভাসহ মোট ৪টি আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদনের কথা নিশ্চিত করেন। তবে নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান টাকার বিনিময়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি দেওয়ার অভিযোগ নাকচ করে দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর