বুধবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

পুকুরে ভাসছিল বাবা মা ও মেয়ের লাশ

খুলনায় একই পরিবারের তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

খুলনার কয়রায় একই পরিবারের তিনজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহতরা হলেন বাগালী ইউনিয়নের বানিয়া গ্রামের হাবিবুল্লাহ গাজী (৪২), তার স্ত্রী বিউটি খাতুন (৩৫) ও সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে হাবিবা খাতুন টুনি (১৩)। গতকাল সকালে বাড়ির পাশে পুকুরে তাদের লাশ ভাসতে দেখা যায়। পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।

স্থানীয়দের ধারণা, সোমবার রাতের কোনো একসময় তাদের হত্যার পর লাশ পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। হাবিবুল্লাহ ও টুনির মাথায়, মুখে ধারালো  অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাবিবুল্লাহর হাত-পা দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল। তবে বিউটি খাতুনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ। হাবিবুল্লাহ একই গ্রামের আবদুল মাজেদ গাজীর ছেলে। পুলিশ বলছে, পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যার পর লাশ গুম করতে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। স্থানীয়রা জানান, হাবিবুল্লাহ পেশায় দিনমজুর। সোমবার বিকালে এ পরিবারের সদস্যদের বাড়ির সামনের রাস্তায় দেখা গিয়েছিল। বাগালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ গাজী জানান, মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে পুকুরে পানি আনতে গিয়ে এক মহিলা লাশগুলো দেখতে পান। বিশাল পুকুরে তাদের ব্যবহৃত ঘাটের কাছে লাশগুলো ভাসছিল। পানিতে হাবিবুল্লাহ খালি গায়ে লুঙ্গি পরা উপুড় অবস্থায়, তার স্ত্রীর পরনে ব্লাউজ, পেটিকোট আর মেয়ের গায়ে সালোয়ার-কামিজ ছিল। তাদের ঘর থেকে মাত্র ১০-১২ ফুট দূরে পুকুরঘাটের অবস্থান। জানা যায়, রাতের বেলায় প্রতিবেশীরা কোনো ধরনের চিৎকার বা এ ধরনের শব্দ শুনতে পাননি। ঘরের মালামালও তছনছ করা নয়। ঘরের ভিতরে বা বারান্দায় ধস্তাধস্তির চিহ্ন থাকলেও রক্তের দাগ পাওয়া যায়নি। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হত্যার আগে ধর্ষণের ঘটনা ছিল কি না ময়নাতদন্তে তা শনাক্ত করতে বলা হয়েছে। এদিকে হত্যার মোটিভ উদ্ঘাটনে মাঠে নেমেছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান জানান, প্রাথমিকভাবে পূর্বশত্রুতা, নারীঘটিত বা ডাকাতি সব কর্নার থেকেই বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, দ্রুতই মোটিভ বের করা যাবে। কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম জানান, পুলিশ গিয়ে লাশগুলো পানিতে ভাসতে দেখে। হাবিবুল্লাহ ও মেয়ের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন থাকলেও হাবিবুল্লাহর স্ত্রীর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হতে পারে। তবে এখনই একে ডাকাতি বা ধর্ষণের পর হত্যা বা অন্য কিছু নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে হত্যার কারণ সম্পর্কে জানা যাবে। অপরাধীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতারে অভিযান শুরু হয়েছে।

সর্বশেষ খবর