বুধবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

চার স্তরের নিরাপত্তাবলয়ে ঢাকা

ঢাকার বাইরে বিশেষ নিরাপত্তা, পরীক্ষার্থীদের বেশি সময় নিয়ে বের হওয়ার অনুরোধ

বিশেষ প্রতিনিধি

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, মহান বিজয় দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন এবং ভারতের রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা কার্যকর করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। ভিআইপি ও ভিভিআইপিদের চলাচলের কারণে বন্ধ রাখা হবে বেশ কিছু সড়ক। আজ  থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ          নিরাপত্তাব্যবস্থা কার্যকর থাকবে। এ সময় এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের একটু বেশি সময় হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। প্রয়োজনে ৯৯৯ এ কল করে সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে। ঢাকার বাইরেও নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিশেষ করে বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরগুলোতে বাড়তি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নিরাপত্তার প্রশ্নে কাউকে ছাড় নয়। সন্দেহ হলে প্রতিটি ব্যক্তি ও যানবাহনকে যথাযথভাবে তল্লাশি করা হবে। তিন দিন সংসদ ভবন ও সংলগ্ন এলাকা, সংসদ ভবন থেকে ৩২ নম্বরসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানস্থল ঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ নিরাপত্তায় পুলিশের বিশেষ টিম সোয়াত ও বোম ডিসপোজাল ইউনিট ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত থাকবে। আমন্ত্রিত দেশি বিদেশি অতিথিদের নিরাপত্তা তল্লাশির মধ্য দিয়ে ভেন্যুতে প্রবেশ করতে হবে।’

সারা দেশের নিরাপত্তায় গৃহীত ব্যবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি হায়দার আলী খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এবারের বিজয় দিবস একটু ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উদযাপিত হচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সঙ্গে মুজিব জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। এবারের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের অনেক ভিভিআইপি অতিথি আসবেন। তাদের বিষয়ে আমরা বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। ঢাকার বাইরে আমরা অধিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। যাতে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী হামলা না ঘটে, জঙ্গিদের অপতৎপরতা রোধ, নাশকতা ঘটতে না দেওয়া এসব বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে কোনো ঝুঁকি থাকলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।

এদিকে গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘বিজয় দিবস ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সংসদ ভবনের আশপাশের এলাকার প্রতিটি ভবনে পোশাকে ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন। আমন্ত্রিত দেশি বিদেশি অতিথিদের নিরাপত্তা তল্লাশির মধ্য দিয়ে ভেন্যুতে প্রবেশ করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যেসব বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে তা কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে। ডিএমপি জানায়, বিজয় উৎসব ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন দিন চলবে। অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও পাশের দেশ ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে শুরু করে ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন, সংসদ ভবন চত্বরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বিজয় দিবসের সকালে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে যে প্যারেড হয় সেটি আয়োজন করা হবে। এবারের প্যারেডটি বিশেষ বলে অন্যবারের চেয়ে আরও বর্ণিল ও বর্ণাঢ্য করার চেষ্টা করা হচ্ছে। গতকাল বিকালে বিজয় দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানমালা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ‘নিরাপত্তা ব্রিফিং’ করেন কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ডিএমপি পুলিশের পাশাপাশি মাঠে থাকবে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, এসএসএফ ও পিজিআর। পাশাপাশি প্রতিটি ভেন্যুতে আগে থেকে এসএসএফ, এসবি, র‌্যাব ও ডিএমপির ডগ স্কোয়াড এবং বোম ডিসপোজাল ইউনিটি সুইপিং করা হবে। অনুষ্ঠানস্থলে যেসব ভিআইপি ও ভিভিআইপি অতিথি প্রবেশ করবেন সবাইকে নিরাপত্তা চেকিং হয়ে প্রবেশ করতে হবে। সোয়াত ও বোম ডিসপোজাল ইউনিট ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত থাকবে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় নোটিস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা কাজ শুরু করবেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবেন। তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে পোশাকে থাকা পুলিশকে জানাবে। ডিএমপি কমিশনার জানান, ভিভিআইপি ও ভিআইপি অতিথিরা যেসব সড়ক ব্যবহার করে চলাচল করবেন সেসব সড়ক বন্ধ থাকবে। এমনকি সংসদ ভবন এলাকায় যতগুলো ভবন আছে প্রতিটি ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সংসদ ভবন এলাকা ঘিরে প্রতিটি সড়কে ডাইভারশন থাকবে।

পরীক্ষার্থীদের ব্যাপারে তিনি বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা সবাই হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে বাসা থেকে বের হবেন। কারণ আজ বুধবার ভারতের প্রেসিডেন্ট আসবেন। তার নিরাপত্তার স্বার্থে বেশ কিছু রাস্তা বন্ধ রাখা হবে। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের হাতে সময় নিয়ে বের হতে অনুরোধ করব। আর যদি কোথাও আটকে যান তখন ৯৯৯ এ কল দিলে আমাদের পুলিশ সদস্যরা আপনাদের পরীক্ষার হলে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। ডিএমপি কমিশনার জানান, প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে সাতটি দেশের ৩০২ জন বিদেশি অতিথি অংশ নেবেন। তাদের জন্য আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। সাধারণ মানুষের জন্য ৩, ৪, ৫, ১৪, ১৫, ১৬ নম্বর গেট খোলা থাকবে। এই গেটগুলো দিয়ে পায়ে হেঁটে প্রবেশ করতে হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে নিরাপত্তা চেক হয়ে প্রবেশ করতে হবে।

মঙ্গলবার রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের শহীদ শিরু মিয়া মিলনায়তনে তিনি ডিএমপির সব ইউনিটের পুলিশ কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা ব্রিফিং দেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, বিজয় দিবস এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী  উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, ভারতের রাষ্ট্রপতিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করবেন।  তাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকব আমরা। এ নিরাপত্তা ডিউটির গুরুত্ব সর্বাধিক। রাষ্ট্রের এত গুরুত্বপূর্ণ ডিউটি সবসময় আসে না। শতভাগের  উপরেও যদি কিছু করার থাকে তা করতে হবে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা পালন করা পুলিশের জন্য অহংকার, মর্যাদা ও সম্মানের বিষয়। আমরা যেন আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারি সে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। নিরাপত্তার ওপর জোর দিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সন্দেহ হলে প্রতিটি ব্যক্তি ও যানবাহনকে যথাযথভাবে তল্লাশি করা হবে। নিরাপত্তার প্রশ্নে কাউকে  ছাড় দেওয়া হবে না। ব্রিফিংয়ে এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মীর রেজাউল আলম, কৃষ্ণ পদ রায়, ড. এ এফ এম মাসুম রব্বানী, এ কে এম হাফিজ আক্তার, সব যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, উপ-পুলিশ কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর