রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ আর নেই

ফিন্যানশিয়াল হেরাল্ড সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ আর নেই। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মিতাচারী, সদালাপী, কর্মনিষ্ঠ, বন্ধুবৎসল ও ন্যায়পরায়ণ হিসেবে পরিচিত এই সিনিয়র সাংবাদিক গতকাল বেলা দেড়টায় ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে কভিড আইসিইউতে ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে, বহু স্বজন, বন্ধুবান্ধব আর গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর জানাজা আজ বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে হবে। শ্রদ্ধা জানানোর জন্য লাশ প্রেস ক্লাব আঙিনায় রাখা হবে। রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের ছেলে এম মাসরুল রিয়াজ জানান, জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রথম জানাজা শেষে দ্বিতীয় জানাজা হবে বাদ জোহর জন্মস্থান নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার গ্রামের বাড়িতে। শেষ জানাজা হবে বাদ আসর রাজধানীর বনানীর বাসভবনে। পরে দাফন করা হবে বনানী কবরস্থানে তাঁর মায়ের কবরে। সম্পাদক পরিষদ তাদের সদস্য রিয়াজউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে। শোক প্রকাশ করেছে নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। স্বাধীন বাংলাদেশে সাংবাদিকতার মানমর্যাদা সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে যাঁরা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন তাঁদের অন্যতম রিয়াজউদ্দিন একুশে পদকে ভূষিত হন ১৯৯৩ সালে। রিয়াজউদ্দিনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ। এ ছাড়া শোক প্রকাশ করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। জাতীয় প্রেস ক্লাবের চারবারের সাবেক সভাপতি রিয়াজউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান। এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, তিনি ছিলেন সাংবাদিকসমাজের অভিভাবক। তাঁর মৃত্যুতে সাংবাদিকসমাজের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। তাঁর মৃত্যুতে আরও শোক প্রকাশ করেন বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক ও মহাসচিব দীপ আজাদ এবং বিএফইউজের আরেক অংশের সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আলম রোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, আরেক অংশের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু।

এ ছাড়া ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনা, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়া, সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার, কুমিল্লা জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন, সাংবাদিক ইউনিয়ন দিনাজপুর, সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়া, সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহ, সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুর, সিলেট মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন। এডিটর গিল্ডসও তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে।

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে প্রবীণ এই সাংবাদিকের মৃত্যুর খবর জানার পর সর্বস্তরের সাংবাদিকের মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের অনেক সাংবাদিক ও কর্মচারী তাঁর মৃত্যুর সংবাদ শুনে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। রিয়াজউদ্দিন আহমেদ করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১৩ ডিসেম্বর। তাঁর জন্ম ১৯৪৫ সালের ৩০ নভেম্বর নরসিংদীর মনোহরদীতে। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ও ১৯৭২ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর কিছুদিন ঢাকার হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ ও কাপাসিয়া কলেজে শিক্ষকতা করেন তিনি। ১৯৬৮ সালে ‘পাকিস্তান অবজারভার’-এ তাঁর সাংবাদিকতা শুরু। তিনি ডেইলি স্টারের উপসম্পাদক, ফিন্যানশিয়াল এক্সপ্রেসের প্রধান সম্পাদক, ডেইলি টেলিগ্রাফের সম্পাদক ও নিউজ টুডের সম্পাদক ও প্রকাশকের দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ছিলেন ফিন্যানশিয়াল হেরাল্ডের সম্পাদক ও প্রকাশক। ১৯৭০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যকরী সদস্য হিসেবে ট্রেড ইউনিয়নে যুক্ত হন রিয়াজউদ্দিন আহমেদ। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব এবং ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত সভাপতি ছিলেন তিনি। একাত্তরের ২৫ মার্চ রিয়াজউদ্দিন আহমেদ পত্রিকার চাকরি ছেড়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেন। দেশ স্বাধীন হলে আবার পেশায় ফিরে আসেন। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ অবজারভারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রজীবনে শুরুতে করতেন ছাত্রলীগ; পরে বাংলা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন। ২০০০ সালে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার তথ্য উপদেষ্টাও ছিলেন। রিয়াজউদ্দিন আহমেদ সার্কভুক্ত দেশসমূহের সাংবাদিকদের ফেডারেশন সমন্বয়ে গঠিত দক্ষিণ এশিয়া সাংবাদিক সমন্বয় পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সাউথ এশিয়ান ফ্রি মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের (সাফমা) সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। এরপর ২০০২ থেকে আবারও দুই দফা প্রেস ক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হন। সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য রিয়াজউদ্দিন আহমেদ শেরেবাংলা পদক, মাওলানা আকরম খাঁ স্বর্ণপদক, নরসিংদী প্রেস ক্লাব পদক, মাদকবিরোধী ফেডারেশন স্বর্ণপদকসহ বিভিন্ন পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হন।

সর্বশেষ খবর