বুধবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
জয়ের হাতছানি

ইতিহাসের সামনে টাইগাররা

মেজবাহ্-উল-হক

ইতিহাসের সামনে টাইগাররা

উইকেট নেওয়ার পর ইবাদত হোসেনের উদযাপন -এএফপি

রোমাঞ্চে ঠাসা মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের চতুর্থ দিন! দুটি ক্যাচের সঙ্গে রান আউটের সহজ একটি সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার পর হয়তো টাইগারভক্তদের দৃষ্টিপটে হতাশার ছবিটাই বার বার ভেসে উঠছিল।

তবে কী নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ঘুরেফিরে সঙ্গী সেই দীর্ঘশ্বাস?

নাহ্, মঙ্গলবারের সকালটি অন্যরকম। এটি অন্য এক ম্যাচ। রোমাঞ্চ আর নাটকীয়তায় ভরপুর একদিন। একের পর এক ম্যাচে নখদন্তহীন বোলিং করে দলে জায়গা অটুট রাখা পেসার ইবাদত হোসেন জ্বলে উঠলেন। আর তার আগুনে বোলিংয়েই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। ইবাদতে উঁকি দিচ্ছে ইতিহাস।

বে ওভালে বাঘের গর্জনে কিউই পাখি রীতিমতো জড়োসড়ো! পরিষ্কার করে বললে জয়টা যেন দেখতেই পাচ্ছে সফরকারীরা। চতুর্থ দিন শেষে টপ অর্ডারের সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে মাত্র ১৭ রানের লিড নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের কাজ একটাই, সকালের সেশনে দ্রুত শেষের পাঁচটি উইকেট তুলে নিয়ে ধৈর্যের সঙ্গে ব্যাটিং করে ইতিহাসের অংশ হয়ে যাওয়া। প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডকে ৩২৮ রানে অলআউট করে দেওয়ার পর বাংলাদেশ করে ৪৫৮ রান। কিউইরা ১৩০ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ইবাদতের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ৫ উইকেট হারিয়ে করে ১৪৭ রান। অথচ এক সময় নিউজিল্যান্ডের স্কোর ছিল ১৩৬/২। মাত্র ৭ বলের মধ্যে তিন তিনজন ব্যাটসম্যানকে ড্রেসিংরুমে পথ ধরিয়ে দেন ইবাদত, স্বাগতিকদের স্কোর লাইন হয়ে যায় ১৩৬/৫। বিস্ফোরক ইবাদত ৩৯ রানে নেন ৪ উইকেট। বাংলাদেশের সামনে এখন প্রধান বাধা রস টেলর। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট সিরিজ খেলতে নামা এই ব্যাটসম্যান দুই দু’বার নতুন জীবন পেয়ে ৩৭ রানে অপরাজিত রয়েছেন। এ ছাড়া কিউইদের আর কোনো স্বীকৃত ব্যাটসম্যান নেই। সে কারণেই নিউজিল্যান্ডের কোচও ইঙ্গিত দিয়েছেন তাদের দলের সামনে ঘোর বিপদ! লুক রনচি বলেন, ‘বলতে গেলে এই টেস্ট এখন বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে! তবে শেষ দিনে আমরা খুবই ইতিবাচক থাকব। নিজেদের সেরাটা উপহার দিয়ে, একটা সম্মানজনক স্কোর করার চেষ্টা করব।’

নিউজিল্যান্ড বরাবরই বাংলাদেশের জন্য একটা বদ্ধভূমি! ব্লাকক্যাপসদের মাটিতে কোনো ফরম্যাটেই জয় নেই টাইগারদের। এমনটি টেস্টে কোনো ড্রও নেই। একটু আধটু সুযোগ তৈরি হলেও দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত হারতে হয়েছে বাজেভাবে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে শুধু বাংলাদেশ কেন, উপমহাদেশের কোনো দেশই সুবিধা করতে পারে না। কিন্তু এবার বাংলাদেশ নতুন ইতিহাস লিখতে যাচ্ছে।

মজার বিষয় হচ্ছে, মুমিনুল হকের এই দল নিয়ে আশা ছিল না বললেই চলে। পেছনে কারণও অনেক, একে তো বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে বাজে একটি বছর কাটিয়েছে। তার ওপর দলে নেই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ড্যাসিং ওপেনার তামিম ইকবালের ইনজুরি। কিউইদের মাটিতে ভালো করা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও তো অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। তরুণদের সমন্বয়ে গড়া সম্পূর্ণ নতুন একটি দল নিয়ে টেস্টের বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলটির ঘরে তাদের মুখোমুখি মুমিনুল বাহিনী। সেই তরুণরাই এখন ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন।

কিন্তু সতর্কবার্তাও আছে! নিউজিল্যান্ডে সবসময়ই শেষের দিনটি ভয়ংকর। কঠিন পরীক্ষা দিতে হয় ব্যাটসম্যানদের। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে বার বার ফেল করা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা এবার সিলেবাস দেখে দেখে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। প্রশ্নপত্র যত কঠিনই হোক উত্তর দেওয়ার সামর্থ্য তাদের আছে। তাই তো ইতিহাসের হাতছানিতে আবেগের স্রোতে আর গা ভাসিয়ে দিচ্ছেন না, বরং ইস্পাত কঠিন মনোবল নিয়ে মাঠে নামছেন  ক্রিকেটাররা। অতিরিক্ত আবেগ ¯œায়ুকে দুর্বল করে, ডেকে আনে বিপদ। তাই শেষ দিন নিয়ে ভীষণ সতর্ক টাইগাররা। বাংলাদেশকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসার অন্যতম কারিগর লিটন কুমার দাস বলেন, ‘আমরা অনেক শান্ত ও স্থির আছি। আমাদের জিততেই হবে, এমন কথা নেই। আমরা একটা প্রক্রিয়া অনুসরণ করছি। এই কদিন সেই প্রসেসটা ধরে রেখে সফল হয়েছি, সামনেও হব বলে আশা করছি।’

শেষ দিনে ক্রিকেটাররা স্নায়ুকে ধরে রাখতে পারলে, এই ম্যাচে জয়টা কেবলই সময়ের ব্যাপার মাত্র। তারপরও ফরম্যাটটি অনিশ্চয়তার টেস্ট ক্রিকেট বলে কথা। কখন, কোথায় থেকে কী হয়ে যায় তা কে জানে?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর