রবিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

করোনাভীতি কাটিয়ে কাজে ফিরছেন প্রবাসী নারী শ্রমিক

প্রবাসে গৃহকর্মীর চাহিদা বৃদ্ধি

জিন্নাতুন নূর

করোনাভাইরাসের ভয়ভীতি কাটিয়ে আবারও কাজে ফিরতে শুরু করেছেন দেশের প্রবাসী নারী শ্রমিকরা। বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যে, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত দেশ থেকে এক লাখের বেশি নারী প্রবাসে কাজ করতে যান। কিন্তু করোনা সংক্রমণ শুরুর পর ২০২০ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২১ হাজার ৯৩৪ জনে। এর মধ্যে বিশ্বজুড়ে বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায়, বাইরের দেশগুলো থেকে নারী শ্রমিকদের চাহিদা থাকায় এবং করোনা টিকা নেওয়াসহ জীবিকার তাগিদে আবারও প্রবাসী নারী শ্রমিকরা কাজে ফিরতে শুরু করেছেন। এ কারণে ২০২১ সালে আগের বছরের তুলনায় প্রবাসে চার গুণ বেশি নারী শ্রমিক (৮০ হাজার ১৪৩ জন) কাজ করতে গেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর্থিক সংকট, করোনাকালীন সংকট এবং সহজে টিকাপ্রাপ্তির কারণে নারী শ্রমিকরা আবার প্রবাসে কাজে ফিরে যাচ্ছেন। আবার করোনাকালীন সময়ে বিদেশে নারী শ্রমিকদের চাহিদা বৃদ্ধিও তাদের কাজে ফিরে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ। বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ৫৩ হাজার ৮২ জন নারী শ্রমিক সৌদি আরবে যান। এরপর জর্ডানে যান ১৩ হাজার ৬৪৩ জন, ওমানে যান ১০ হাজার ৩৫ জন, কাতারে যান ১ হাজার ৯৯৭ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান ৭৭৭ জন ও লেবাননে যান ১৪৭ জন। এ ছাড়া অন্যান্য দেশের মধ্যে কুয়েত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালি, হংকং, সাইপ্রাস, মরিশাসসহ অন্যান্য দেশে কাজ করতে গেছেন প্রবাসী নারীরা। আর ২০২০ সালে সৌদি আরবে নারী শ্রমিক গিয়েছিলেন ১২ হাজার ৭৩৫ জন। এ ছাড়া ওমানে তিন হাজার ৩৫৮ জন, কাতারে ৮০৯ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬৬৪ জন ও লেবাননে ১৯১ জন কাজ করতে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ ২০২০ সালের কয়েক মাস বিদেশ যাওয়া নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন কারণে নারী শ্রমিকদের প্রবাসে যাওয়ার হার কম থাকলেও ২০২১ সালে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশগুলোতে কয়েক গুণ বেশি নারী শ্রমিক গিয়েছেন। হিসাব বলছে, করোনা শুরুর আগে ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে যথাক্রমে ১ লাখ ১৮ হাজার, ১ লাখ ২১ হাজার, ১ লাখ ১ হাজার এবং ১ লাখ ৪ হাজার নারী শ্রমিক প্রবাসে গিয়েছেন।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলেন, নারী শ্রমিকরা করোনাভীতি কাটিয়ে আবার বিদেশে ফেরা শুরু করলেও তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা খুবই প্রয়োজন। বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের মালয়েশিয়া যাওয়ার ব্যাপারে কথা চলছে। এ জন্য নারী শ্রমিকদের দক্ষতা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। আর এটি না হলে শ্রমিকদের মান উন্নয়ন হবে না।

বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মহামারির শুরুর পর ২০২১ সালে এসে প্রবাসে নারী শ্রমিকদের কাজ করার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। নারী শ্রমিকরা সবসময় বাধ্য হয়েই বিদেশে কাজ করতে গিয়েছেন। আর মহামারির সংকট তাদের পরিবারের সার্বিক সংকটকে আরও বৃদ্ধি করেছে। সংকট বৃদ্ধির ফলে করোনাভীতি কাটিয়ে হলেও নারীদের প্রবাসে যাওয়ার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার নারী শ্রমিকদের টিকা পাওয়ার প্রক্রিয়াও বেশ সহজ ছিল। এ জন্য তাদের কাজে ফিরে যাওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত হয়েছে। অন্যদিকে করোনাকালীন সময়ে বিদেশে শ্রমিকদের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে মানুষের সেবা দেওয়ার জন্য গৃহকর্মীদের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়াও গার্মেন্টেও নারী শ্রমিকের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর