মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

সার্চ কমিটি করে ইসি নিয়োগের প্রস্তাব আওয়ামী লীগের

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সার্চ কমিটি করে ইসি নিয়োগের প্রস্তাব আওয়ামী লীগের

নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সুপারিশ পেশ করে -পিআইডি

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের শেষ দিন গতকাল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সংলাপে সংবিধানের আলোকে ইসি গঠনে আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছে আওয়ামী লীগ।

এ ছাড়া দলটি নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের স্বার্থে সব নির্বাচনে অধিকতর তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত, ইসির আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোসহ রাষ্ট্রপতির কাছে সুনির্দিষ্ট চার দফা প্রস্তাব পেশ করেছে। সংলাপ শেষে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের বিষয়বস্তু তুলে ধরেন দলীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সংলাপে আওয়ামী লীগের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে দেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে পৌঁছলে তাঁকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরে বঙ্গভবনের দরবার হলে ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটির প্রতিনিধি দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন- দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আবদুর রহমান।

সংলাপ শেষে দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সংলাপে রাষ্ট্রপতির কাছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে ইসি শক্তিশালীকরণ, ইসির আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগের বিষয়েও কয়েকটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তাদের নিয়োগের জন্য একটি আইন প্রয়োজন বলেও মনে করে আওয়ামী লীগ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার চলতি সংসদ অধিবেশনেই নির্বাচন কমিশন আইন পাসের সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। নতুন আইন পাস করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে কি না জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘অপেক্ষা করুন। কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।’ তিনি বলেন, সংলাপে রাষ্ট্রপতির কাছে দলের পক্ষ থেকে চার দফা সুপারিশ পেশ করা হয়েছে। সুপারিশগুলো হচ্ছে- সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগদান করবেন। রাষ্ট্রপতি যেরূপ উপযুক্ত বিবেচনা করবেন, সেই প্রক্রিয়ায় তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগদান করবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮-এর বিধান সাপেক্ষে একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। তিনি বলেন, এই বিশেষ ধরনের আইন প্রণয়নের জন্য আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কোনো সুনির্দিষ্ট উদাহরণ ছিল না। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে একটি রাজনৈতিক মতৈক্য প্রতিষ্ঠা করতে একমাত্র বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি সাংবিধানিক রীতি ও রাজনৈতিক অনুশীলন প্রতিষ্ঠা করেছে। এই সাংবিধানিক রীতিটি হলো ‘সার্চ কমিটি’/‘অনুসন্ধান কমিটি’ গঠন করে সবার মতামত ও অংশগ্রহণের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন। এই ব্যবস্থায় এখন পর্যন্ত দুবার (২০১২ এবং ২০১৭) অনুশীলন করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। চতুর্থ দফা সুপারিশে বলা হয়েছে, সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের স্বার্থে সব নির্বাচনে অধিকতর তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রাষ্ট্রপতির দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সুগভীর জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও সুবিবেচনার প্রতি আওয়ামী লীগের পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে এবং রাষ্ট্রপতির গৃহীত যে কোনো ন্যায়সঙ্গত উদ্যোগের প্রতি আমাদের পরিপূর্ণ আস্থা আছে।

বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের জানান, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন প্রস্তাব পেশ করেছে। তিনি জানান, আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলকে বঙ্গভবনে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। ইতোমধ্যে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এবং আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সংলাপে বসতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আওয়ামী লীগসহ মোট ৩২টি রাজনৈতিক দলকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান। গত ২০ ডিসেম্বর প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপতি। বিএনপিসহ মোট সাতটি রাজনৈতিক দল এই সংলাপে অংশ নেয়নি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতির ধারাবাহিক সংলাপ শেষ হলো। 

আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হবে। এই সময়ের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। সে কমিশনের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ খবর