বুধবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
ডিসিদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি

মনে রাখবেন জনগণের টাকায় বেতন হয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

মনে রাখবেন জনগণের টাকায় বেতন হয়

দায়িত্ব পালনে জনগণের সেবা দেওয়ার বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) বলেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশটা স্বাধীন হয়েছিল বলেই আজ আমি রাষ্ট্রপতি, আপনারা সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক হয়েছেন। একবার ভেবে দেখুন তো দেশ স্বাধীন না হলে আমরা কে কী হতে পারতাম? তাই দেশ ও জনগণের স্বার্থকে সবার ঊর্ধ্বে স্থান দিবেন। আমরা-আপনারা জনগণের সেবক। তাই জনগণের সেবক হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন। মনে রাখতে হবে, জনগণের টাকায়ই আমাদের সংসার চলে।’ জনগণকে সেবা পাওয়াটা দয়া-দাক্ষিণ্য বা বদান্যতার বিষয় নয়, সেবা পাওয়াটা যে জনগণের অধিকার, তাও মনে করিয়ে দেন তিনি। ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে গতকাল জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রপতি।

করোনা মহামারীর জন্য দুই বছর বিরতির পর এবার ভেন্যু বদলে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ডিসি সম্মেলন শুরু হয়েছে। সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সম্মেলন উদ্বোধন করেন।

অন্যান্য বছর জেলা প্রশাসকরা বঙ্গভবনে গেলে সেখানে দরবার হলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে জনসমাগম কমাতে এবার ভার্চুয়াল আয়োজন করা হয়েছে। আমলাদের ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করার তাগিদ দিয়ে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘আমলাতন্ত্র ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতিটি স্তরে দায়িত্ব ও ক্ষমতা অর্পণ করা হয়। দায়িত্ব সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য ক্ষমতা প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। কিন্তু ক্ষমতার যাতে অপপ্রয়োগ না হয় তা নিশ্চিত করা আরও বেশি জরুরি। তাই কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব ও ক্ষমতার পার্থক্য সচেতনভাবে বজায় রাখবেন।’ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রকৃত দরিদ্ররা যাতে সুফল পায় তা নিশ্চিত করারও আহ্বান করেন আবদুল হামিদ। ভূমি ব্যবস্থাপনায় জড়িতদের অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং ভূমি সংক্রান্ত জনবান্ধব সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে। কিন্তু ভূমি রেকর্ডের সময় এক শ্রেণির অসাধু কর্মচারী স্থানীয় প্রভাবশালী দালালচক্রের সহযোগিতায় অনেক অনিয়ম করছে এবং অবৈধ সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে জনভোগান্তি বেড়েছে। তাই এসব ব্যাপারে আপনাদের কঠোর হতে হবে এবং যে কোনো অনিয়ম বন্ধ করতে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্ম্যে উষ্মা প্রকাশ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘জেলা ও উপজেলা সদরে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সামনে জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এসব দেখার কেউ নেই। অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে বন, নদী ও পাহাড় রক্ষা করতে কঠোর হতে হবে। এটা করতে পারলেই উন্নয়ন সুষম ও জনমুখী হবে।’ প্রশাসনের সব স্তরে জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দুর্নীতি উন্নয়নের সবচেয়ে বড় অন্তরায়। দুর্নীতির কারণে টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই মাঠ প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।’

ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন কেন্দ্রে এই অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান।

 

সর্বশেষ খবর