শুক্রবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নবায়নে আগ্রহী ইরাক

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে ১৯৮১ সালে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছিল। তবে ১৯৯০ সালে ইরাকের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের পর ওই চুক্তিটি আর নবায়ন করা হয়নি। এখন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি চাইছে বাংলাদেশের সঙ্গে ’৮১-এর সেই চুক্তি আবারও নবায়ন করে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে।

সূত্রগুলো জানান, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও যোগাযোগ স্থাপন করতে চাইছেন দেশটির ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। এরই মধ্যে কূটনেতিক পর্যায়ে তাঁরা বাংলাদেশের কাছে এ বার্তাটি পাঠিয়েছেন। বাণিজ্য সচিব তপনকান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১৯৮১ সালে ইরাকের সঙ্গে যে চুক্তিটি হয়েছিল বাংলাদেশের, তা মূলত গুডউইল জাতীয়। এর মাধ্যমে মূলত একটি যৌথ কমিটি থাকে, যারা দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে বিভিন্ন সুপারিশ করে। এখন ইরাক চাইছে আবার সেই চুক্তিটি নবায়ন করতে। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিটি নবায়ন করতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গেও বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ইরাকের চার্জ দি অ্যাফেয়ার্স আবদুলসালাম সাদ্দাম মোহাইসেন। গতকাল মন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে চার্জ দি অ্যাফেয়ার্স বলেন, ইরাক বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী। এর জন্য ১৯৮১ সালের বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন ও সময়োপযোগী করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীকে ইরাক সফরের আমন্ত্রণও জানান। এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ইরাকের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। এজন্য দুই দেশে প্রতিনিধি দলের সফর বাড়লে বিনিয়োগের খাতগুলো চিহ্নিত করা সহজ হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে এরই মধ্যে চুক্তির একটি খসড়াও পাঠিয়েছে ইরাক। ওই খসড়ার ওপর সম্প্রতি একটি সভাও করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি অনুবিভাগ। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘চুক্তির বিষয়ে আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। আমরা মূলত ইরাকের আগ্রহের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি।’ বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জ্বালানি ও কৃষি খাতে ইরাকের আগ্রহ রয়েছে বলে জানান তিনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ইরাকের ব্যবসায়ীরাও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থপন করতে চাইছেন। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন নাজাফ চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসায় আগ্রহ দেখিয়ে গত বছরের শুরুর দিকে বাগদাদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে চিঠিও দিয়েছে। ওই চিঠিতে ইরাকের সঙ্গে বাণিজ্যে আগ্রহী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের তালিকা পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়। চিঠির বিষয়টি যথাসময়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইকে অবহিত করা হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় ইরাকে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। চলমান কভিড-১৯ পরিস্থিতিতেও ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ইরাকে ৩৮ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। একই সময়ে ইরাক থেকে আমদানি করেছে ৫ কোটি ৩৪ লাখ ২০ হাজার ডলার মূল্যের পণ্য।

দেশটিতে তৈরি পোশাক ছাড়াও ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক, নিউজপ্রিন্ট, পেপার ও পেপারবোর্ড, শাকসবজি, জুট ইয়ার্ন, কমপ্রেসর, চাসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রচলিত পণ্যের বাইরে বাংলাদেশ থেকে হোম অ্যাপ্লায়েন্স ও প্রযুক্তিপণ্য আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে ইরাক। এরই মধ্যে ইরাকের একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে প্রযুক্তিপণ্য নিতে এ দেশের একটি ব্র্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিও করেছে। ওই চুক্তির আওতায় ইরাক রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, টিভিসহ অন্যান্য প্রযুক্তিপণ্য নেবে বাংলাদেশ থেকে।

সর্বশেষ খবর