আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে চার দেশীয় যোগাযোগ (বিবিআইএন) পরিকাঠামো গড়ে তোলার যে উদ্যোগ রয়েছে, সেটিতে এখন যুক্ত হতে চাইছে বিশ্বব্যাংক। ওয়াশিংটনভিত্তিক এই ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, তারা চার দেশীয় বাণিজ্যের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে বাংলাদেশের তিনটি স্থলবন্দরকে নির্বাচন করেছেন। এই বন্দরগুলোকে অবকাঠামো আধুনিকীকরণ, ডিজিটালাইজেশন ও পেপারলেস বাণিজ্যের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে চান। বিশ্বব্যাংকের উল্লিখিত তিন স্থলবন্দর হচ্ছে- বেনাপোল, ভোমরা এবং বুড়িমারী।
সূত্র জানায়, ‘বিবিআইএন-এর আঞ্চলিক পরিবহন ও বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধি (প্রথম পর্যায়)’ নামের একটি কর্মসূচির আওতায় বিশ্বব্যাংক এই বন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে যুক্ত হতে চাইছে। এ জন্য তারা ৭৫০ মিলিয়ন (৭৫ কোটি) মার্কিন ডলারের প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছে। এই কর্মসূচিতে চারটি উপাদান থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও শাখার মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই কর্মসূচির একটি পরিবেশগত ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা কাঠামো প্রস্তাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। আঞ্চলিক যোগাযোগ কার্যকর করতে বিবিআইএন চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হলেও বিশ্বব্যাংক এই কর্মসূচিটি সাজিয়েছে মূলত বাণিজ্য সুবিধা বা ট্রেড ফেসিলিটেশনকে কেন্দ্র করে। সে কারণে এর সমন্বয়ক হিসেবে তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে রেখেছে। আর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তিনটি পৃথক মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ যুক্ত থাকবে। বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এ কর্মসূচির আওতায় তারা মোট চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এগুলো হচ্ছে- ‘স্থলবন্দর ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প’, ঢাকা ও চট্টগ্রামের কাস্টম হাউসের আধুনিকায়ন এবং রাজস্ব স্টেশনের উন্নয়ন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন কমিটিকে (এনটিসিএফ) শক্তিশালী করা এবং জাতীয় বাণিজ্য ও পরিবহন সুবিধার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং সিলেট-চারখাই-শেওলা-সুতারকান্দি মহাসড়কের উন্নয়ন। সূত্র জানায়, স্থলবন্দর ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পটির অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাংক দেশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর- বেনাপোল, ভোমরা এবং বুড়িমারীর অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এর মাধ্যমে সীমান্ত পরিবরহন ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ও ডিজিটাইজেশন করা হবে, যাতে কাগজ ছাড়াই অর্থাৎ পেপারলেস বাণিজ্য নিশ্চিত করা যায়। ভারতের সঙ্গে একটি সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলাই এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে বিশ্বব্যাংক তার প্রস্তাবে উল্লেখ করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিবিআইএন-এর আওতায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে তিনটি রুটকে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে, তার একটি হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পেট্রোপোল-বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে আখাউড়া-আগরতলা স্থলবন্দর দিয়ে ত্রিপুরা পর্যন্ত; দ্বিতীয় রুটটি ভারতের আগরতলা হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত; আর তৃতীয় রুটটি ভারতের শিলচর থেকে বাংলাদেশের সিলেট হয়ে পাটুরিয়া দিয়ে বেনাপোল-পেট্রাপোল দিয়ে কলকাতায় পর্যন্ত বিস্তৃত। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকে ভারতের স্থলভাগ (শিলিগুড়ি) ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত আরেকটি রুটের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব রুটের বাংলাদেশের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে আলোচ্য তিন বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিশ্বব্যাংক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সংস্থাটির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বেনাপোল-পেট্রাপোল মালবাহী যানবাহন, মূল্যবান পণ্যের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম স্থলসীমান্ত সংযোগস্থল। সড়কপথে বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের ৮০ শতাংশ এই স্থলপথের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বেনাপোল স্থলবন্দরের আধুনিকায়নের ফলে যানজট কমবে এবং ভারতের পেট্রাপোল ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট থেকে ট্রাক চলাচল ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ভোমরা-ঘোজাডাঙ্গা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলসীমান্ত সংযোগ উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক বলেছে, পদ্মা বহুমুখী সেতুর কাজ শেষ হলে এই স্থলবন্দরে বাণিজ্য বাড়বে। কারণ ভোমরা কলকাতা থেকে ঢাকার সবচেয়ে ছোট রুটে অবস্থিত। বন্দরটি প্রতিদিন প্রায় ৬৫০টি ট্রাক লোড-আনলোড করে, যার মাধ্যমে বছরে ৪০ লাখ টন পণ্য পরিবহন হয়। বুড়িমারী-চ্যাংরাবান্দা বন্দরটি নেপাল ও ভুটানের পণ্য পরিবহনের ট্রানজিট পয়েন্ট উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক বলেছে, স্থলবন্দরটি দিয়ে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার ট্রাক লোড-আনলোড হয়। কিন্তু ক্রমবর্ধমান মালবাহী যানবাহন লোড-আনলোডে বন্দরটি অক্ষম। যার ফলে যানজট এবং সীমান্ত অতিক্রমে প্রচুর বিলম্ব হয়।