রাজধানীর সবুজবাগে গৃহবধূ তানিয়া আফরোজের বাসায় দুই মিস্ত্রি এসি মেরামত করতে এসে লুটপাট শুরু করেন। তানিয়া ১০ মাসের ছেলে তানভীরুল ইসলামকে কোলে নিয়ে রান্নায় ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ শোবার ঘরে ঢুকে দেখেন ওই দুই মিস্ত্রি আলমারি খুলে সব তছনছ করছেন। তিনি চিৎকার করলে বালিশচাপা আর চাপাতির কোপে তাকে খুন করা হয়। তানিয়া হত্যায় তিনজনকে গ্রেফতারের পর নিজ দফতরে সংবাদ সম্মেলন করে এমনই তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. আবদুল আহাদ। ডিসি বলেন, এসি টেকনিশিয়ান বাপ্পীকে সোমবার ঝালকাঠির নলছিটির গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল ঢাকার রামপুরা থেকে সুমন হোসেন হৃদয় ও রুবেলকে গ্রেফতার করা হয়। তারা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, শনিবার বিকালে বাপ্পী ও হৃদয় ওই বাসায় এসি সার্ভিসিং করতে যান। পরে রুবেলও ওই বাসায় যান। তানিয়া তখন ১০ মাসের ছেলেটিকে নিয়ে রান্নাঘরে রান্না করছিলেন। এর মধ্যে তানিয়া হঠাৎ বেডরুমে গিয়ে দেখেন বাপ্পী ও হৃদয় তার আলমারি খুলে সব বের করে কিছু একটা খুঁজছেন। ঘটনা দেখে তানিয়া চিৎকার করে ওঠেন। সঙ্গে সঙ্গে হৃদয় তাকে ফেলে দিয়ে মুখে বালিশচাপা দেন। তারপর বাপ্পী ব্যাগ থেকে চাপাতি বের করে তাকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করেন। তানিয়া বিছানায় পড়ে থাকেন। সন্ধ্যায় সবুজবাগের বেগুনবাড়ী মাস্টারগলির মজিবুরের বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটে তানিয়া খুন হন।
লাশ উদ্ধারের সময় সেখানে নিহতের চার বছর বয়সী মেয়ে মায়মুনা জাহান ও ১০ মাসের ছেলেকে রক্তমাখা অবস্থায় পাওয়া যায়।
তানিয়ার স্বামী মো. ময়নুল ইসলাম ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকরির কারণে সেখানে অবস্থান করছিলেন। পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল আহাদ বলেন, বাচ্চারা কান্নাকাটি শুরু করলে ব্যাগে থাকা স্কচটেপ বের করে তাদের মুখে পেঁচিয়ে দেয়, স্কচটেপ দিয়ে হাতও বেঁধে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে চার বছরের মায়মুনা বেশি কান্নাকাটি করলে তাকেও হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। বাপ্পী চার বছরের মেয়েটিকেও কোপাতে চায়। তখন হৃদয় তাকে আটকায়। এরপর হাত ও মুখ বাঁধা অবস্থায় তারা শিশুটিকে বাথরুমে ঢুকিয়ে রাখে। খুনিরা যখন লুটপাট ও হত্যাকান্ড শেষ করে চলে যায় তখনো বাসার চুলা জ্বলছিল। সে সময় চার বছরের শিশুটি বাথরুমের দরজা খোলা পেয়ে বেরিয়ে আসে। হাত-মুখ বাঁধা অবস্থায় পাশের বাসায় গিয়ে কনুই দিয়ে সে দরজায় নক করে। ওই বাসার নারী দরজা খুলে জিজ্ঞেস করেন কী হয়েছে? জবাবে শিশুটি বলে, মারছে মারছে, মাকে মারছে। তারপর ওই নারী জিজ্ঞেস করেন কে মারছে? শিশুটি বলে, লোক লোক। এরপর তিনি বাসায় ঢুকে আগে চুলা নেভান। পরে পুলিশে খবর দেন। নিহতের স্বামী বাদী হয়ে সবুজবাগ থানায় মামলা করেন।