বুধবার, ১১ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

ইভিএম বিষয়ে সিদ্ধান্ত আমরাই নেব : সিইসি

৩০০ আসনে সক্ষমতা নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইভিএম বিষয়ে সিদ্ধান্ত আমরাই  নেব : সিইসি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কত আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ হবে সে সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, এ মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট করার সক্ষমতা নেই। এ বিষয়ে ইসি রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত শুনবে। তবে কত আসনে ইভিএমে ভোট হবে বা নির্বাচন কীভাবে হবে- সে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনই নেবে।

গতকাল সকালে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের জন্য প্রশিক্ষকদের          প্রশিক্ষণ’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সিইসি এসব কথা বলেন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভোট গ্রহণ ইভিএমে কীভাবে হবে, ব্যালটে কীভাবে হবে, কতটা ইভিএমে হবে, কতটা ব্যালটে হবে?- এসব ব্যাপারে ইসি এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি, বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। সিইসি বলেন, গণমাধ্যমে বিভিন্ন দলের বক্তব্য আসছে। এটা জানি না, এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নাকি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেছেন। এটা স্পষ্ট নয়। আমাদের বক্তব্যও জানানো হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠান করার দায়িত্ব আমাদের। আপনারা জানেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলা আর বিএনপি প্রধান বলা, জাসদের কথা বলা- এটা ভিন্ন জিনিস। অনেকে তাদের ইচ্ছা ব্যক্ত করতে পারেন। সিইসি বলেন, এখন পর্যন্ত ১০০-এর মতো আসনে ইভিএমে ভোট করার সক্ষমতা ইসির আছে। তবে ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়ার সামর্থ্য এখনো নেই। ৩০০ আসনের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো ইসি নেয়নি। সিদ্ধান্ত আমাদের। সবার কথা আমরা বিবেচনা করতে পারি। রাজনৈতিক দল মতামত দিতে পারে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে আমরা স্বাধীন। আরেক প্রশ্নের উত্তরে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিষয়ে আমরা এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। আমরা ইতোমধ্যে অনেকগুলো সভা করেছি। সময় হলে সিদ্ধান্ত হবে। ভোট আমরা পরিচালনা করব, এটা আমাদের এখতিয়ার, পদ্ধতিও আমাদের এখতিয়ারভুক্ত।

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের ‘শুদ্ধ ও সিদ্ধভাবে’ ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা দেন সিইসি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। আরও বক্তব্য দেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ ও নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক আবদুল বাতেন।  

অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান বলেন, একটা নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়নের চেষ্টা করতে হবে। এই ভোটার তালিকা থেকে ১৮ বছর বয়সের কেউ যেন বাদ না পড়ে। আর এই জন্য এই প্রশিক্ষণ। আশা করি আপনারা একটি সুন্দর-নির্ভুল ভোটার তালিকা উপহার দেবেন। পরবর্তীতে সংসদ নির্বাচনে যেটাকে আমরা কাজে লাগাতে পারি।

নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, ভোটের প্রধান প্রাণ হচ্ছে ভোটাররা। ভোটার না থাকলে ভোট নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। এ জন্য ভোটার তালিকা করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আগামী জাতীয় নির্বাচনে যাতে একটা নির্ভুল ভোটার তালিকা হয়, এ জন্য এই প্রশিক্ষণ। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, বাসায় বাসায় গিয়ে ভোটার তালিকা কিছু কিছু ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে যায়। অনেক সময়ে দেখা যায় ২৫/৩০ তলা বিল্ডিংয়ে গার্ডরা ভোটার তালিকার কাজে নিয়োজিত মাঠকর্মীদের ভিতরে ঢুকতে দেয় না। এই ধরনের নানা সমস্যা হয়।

তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে সিইসিসহ পাঁচজনকে না ডেকে সিইসিকে একাধিক অনুষ্ঠানে ডাকার পারমর্শ দেন। অন্য কোর্সে আবার একজন কমিশনারকে ডাকেন, তাহলে ভালো হয়। এ বিষয়ে সিইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

ইসি আনিছুরের ক্ষোভ : প্রশিক্ষণ কর্মসূচি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। তিনি ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অনুষ্ঠানে আনিছুর রহমান বলেন, আমি অনুষ্ঠানে আসব কি, আসব না তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম। ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক দলবলসহ গিয়ে তাকে অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানান। সোমবার রাত ১০টা ২ মিনিটে তাকে কর্মসূচির কাগজ পাঠানো হয়। এতে তিনি দেখতে পান, সেখানে তার নাম নেই। এর কয়েক মিনিট পর মহাপরিচালক ফোন করে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং আমন্ত্রণপত্রটি সংশোধন করেন।

এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আনিছুর রহমান বলেন, ইসি সচিব এবং সাবেক সচিব বর্তমান নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর কর্মকর্তাদের প্রশংসা করেন। তাঁরা বলেন, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা অত্যন্ত দক্ষ। এর সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমি সেটা ডিফার (ভিন্নমত পোষণ) করি এবং প্রথম থেকেই আমি ডিফার করি। আমি ডিফার করেই যাব। এটা হওয়া উচিত না।’ আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমি কেন আসলাম? আমার তো আসা উচিত ছিল না। আমি আগে থেকেই বলেছি, ঘটা করে চারজনকে আনার দরকার নাই। আমাদের বক্তব্য মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাহেব থাকলেই যথেষ্ট। আর তো কারও থাকার দরকার নাই ঘটা করে। দক্ষতার প্রমাণ কিন্তু এটা।’ এই নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ‘কেউ অসন্তুষ্ট হলে আমার কিছু আসে যায় না। আমি আনিছুর রহমান ৩৪ বছর যেভাবে কাজ করেছি, সেভাবেই বাকি ৫ বছরও করে যাব। এভাবেই করে যাব।’ তিনি বলেন, কারও চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে তার কষ্ট লাগে না। চোখ বন্ধ করে থাকলেও কষ্ট লাগে না। বক্তব্যের শেষে আনিছুর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের অনুষ্ঠানে আমাকে না ডাকলে ভালো হবে। আমি আর এ ধরনের প্রোগ্রামে থাকতে চাই না।’ পরে ওই অনুষ্ঠানেই ইসি সচিবালয়ের সচিব হুমায়ুন কবির খোন্দকার দাওয়াতপত্রে নাম থাকার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মহাপরিচালক হোয়াটসঅ্যাপে যে দাওয়াতপত্র আনিছুর রহমানকে পাঠিয়েছেন সেখানে তাঁর নাম ছিল না। এটা নিঃসন্দেহে ‘মিসকন্ডাক্ট’। এ বিষয়ে যে অফিশিয়াল ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তা নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর