শুক্রবার, ১৩ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

রফিকুল আমীন ও হারুন-অর-রশীদসহ ৪৬ জনের জেল

আদালত প্রতিবেদক

রফিকুল আমীন ও হারুন-অর-রশীদসহ ৪৬ জনের জেল

গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের দায়ে ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রফিকুল আমীন, কোম্পানির প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশীদসহ ৪৬ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি আসামিদের অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন।

ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির প্রায় ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের এ মামলার রায়ে রফিকুল আমীনকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ডেসটিনির প্রেসিডেন্ট, সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশীদকে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বাকি আসামিদের পাঁচ থেকে নয় বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আসামিদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল এম হারুন-অর-রশীদ, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. দিদারুল আলম, জেসমিন আক্তার মিলন, জিয়াউল হক মোল্লা ও সাইফুল ইসলাম রুবেল জামিনে ছিলেন। আর রফিকুল আমীন ও মোহাম্মদ হোসেন ছিলেন কারাগারে। রায় ঘোষণার পর জামিনে থাকা আসামিদের জামিন বাতিল করা হয়েছে। পরে আদালতে উপস্থিত সাত আসামিকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

দণ্ডপ্রাপ্ত বাকি ৩৯ আসামি শুরু থেকেই পলাতক। তারা হলেন- ডেসটিনির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গোফরানুল হক, পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন, ফারাহ দীবা, সাঈদ-উর-রহমান, জমশেদ আরা চৌধুরী, ইরফান আহমেদ, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, শেখ তৈয়বুর রহমান, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, নেপালচন্দ্র বিশ্বাস, জাকির হোসেন, মোসাদ্দেক আলী খান, আবদুল মান্নান, এস এম আহসানুল কবির, জুবায়ের হোসেন, আবুল কালাম আজাদ, মো. আকবর হোসেন সুমন, আজাদ রহমান ও মো. সুমন আলী খান।

এ ছাড়া শিরীন আকতার, রফিকুল ইসলাম সরকার, কাজী মো. ফজলুল করিম, মোল্লা আল আমীন, মো. মজিবুর রহমান, ড. এম হায়দারুজ্জামান, মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, মো. শফিউল ইসলাম, ওমর ফারুক, সিকদার কবিরুল ইসলাম, মো. ফিরোজ আলম, সুনীল বরণ কর্মকার, ফরিদ আকতার, আবদুর রহমান তপন, এস সহিদুজ্জামান চয়ন, সাকিবুজ্জামান খান, এস এম আহসানুল কবির, খন্দকার বেনজীর আহমেদ, এ এইচ এম আতাউর রহমান রেজা, এ কে এম সফিউল্লাহ, শাহ আলম, মো. দেলোয়ার হোসেন, গোলাম কিবরিয়া মিল্টন, মো. আতিকুর রহমান ও মো. শফিকুল হকও পলাতক।

১০ বছর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা এ মামলায় ২৭ মার্চ উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়। এ মামলার বিচারে রাষ্ট্রপক্ষের ২০২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে আদালত। এ ছাড়া আসামিদের মধ্যে ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন।

দুদকের উপপরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় ডেসিটিনির কর্তাব্যক্তিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি ও ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন প্রজেক্টের অর্থ আত্মসাতের দুটি মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৫ মে দুদক আদালতে উভয় মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে। এর মধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ আর ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন লিমিটেডে দুর্নীতির মামলায় ১৯ জনকে আসামি করা হয়। হারুন-অর-রশীদ ও রফিকুল আমীন দুই মামলাতেই আসামি।

অভিযোগপত্রে বলা হয়- ২০০৮ সাল থেকে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ প্রজেক্টের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। ওই অর্থ আত্মসাতের ফলে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন। আর ট্রি প্লান্টেশন প্রজেক্টের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে ডেসটিনি। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়- ডেসটিনি গ্রুপের নামে ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল নামসর্বস্ব। আসামিরা প্রথমে প্রজেক্টের টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করতেন। তারপর বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে তা স্থানান্তর করা হতো।

দুদক ৩৪টি ব্যাংকে এ রকম ৭২২টি হিসাবের সন্ধান পায়, যেগুলো পরে জব্দ করা হয়। আত্মসাৎ করা ৪ হাজার ১১৯ কোটি টাকার মধ্যে ৯৬ কোটি বিদেশে পাচারের অভিযোগও আনা হয় দুই মামলায়। এর মধ্যে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলাটির রায় হলো। ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন লিমিটেডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা এখন সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

সর্বশেষ খবর