শুক্রবার, ১৩ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

ঈদে সড়কে ঝরেছে ৩৭৬ প্রাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে ১৪ দিনে (২৫ এপ্রিল-৮ মে) দেশে ২৮৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণহানি হয়েছে ৩৭৬ জনের। আহত হয়েছেন অন্তত দেড় হাজার। সর্বাধিক (২৭.৬২%) দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেলে। সর্বাধিক (৪১.৪৮%) প্রাণহানি হয়েছে মোটরসাইকেল আরোহী ও চালকের। এই সময়ে সাত নৌ দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন দুজন। ১৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। গত বছরের ঈদুল ফিতরের চেয়ে এ বছর সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৮.৪১ শতাংশ আর প্রাণহানি বেড়েছে ১৯.৭৪ শতাংশ।

গণমাধ্যমে উঠে আসা দুর্ঘটনার খবর বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পেয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। গতকাল সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে গত চার বছরের ঈদুল ফিতর উদ্যাপনকালীন সড়ক দুর্ঘটনার চিত্রও তুলে ধরা হয়। তাতে দেখা যায়, ২০১৯ সালে ১৪ দিনে ১৪৬ দুর্ঘটনায় ১৯৪ জন নিহত ও ৪০২ জন আহত হন। ২০২০ সালে ১২ দিনে ১২৮ দুর্ঘটনায় ১৪৭ জন নিহত ও ৩১৮ জন আহত, ২০২১ সালে ১৪ দিনে ২৩৯ দুর্ঘটনায় ৩১৪ জন নিহত ও ২৯১ জন আহত এবং চলতি বছর ১৪ দিনে ২৮৩ দুর্ঘটনায় ৩৭৬ জন নিহত ও ১ হাজার ৫০০ জন আহত হয়েছেন। তবে নিহত না হওয়ায় অনেক দুর্ঘটনার খবর গণমাধ্যমে আসেনি বলে উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৩২টি জাতীয় মহাসড়কে, ৮৭টি আঞ্চলিক সড়কে, ৪১টি গ্রামীণ সড়কে ও ২৩টি শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে। নিহতের মধ্যে ১৫৬ জন মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী, ৭৮ জন ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-টেম্পু যাত্রী, ৩২ জন বাসযাত্রী, ২০ জন ট্রাক-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি আরোহী, ১৫ জন মাইক্রোবাস-প্রাইভেট কার-অ্যাম্বুলেন্স-জিপ যাত্রী, ১৩ জন নসিমন-ভটভটি-টমটম-মাহিন্দ্রা যাত্রী ও আটজন ছিলেন প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান-বাইসাইকেল আরোহী। দুর্ঘটনায় ৫৪ জন পথচারীও নিহত হয়েছেন।

সর্বাধিক (৩৯.৫৭%) দুর্ঘটনা ঘটেছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৪৯৬। এর মধ্যে মোটরসাইকেল ১৩৭, থ্রি-হুইলার ৯৭, বাস ৯২, ট্রাক ৫৬, নসিমন-ভটভটি-মাহিন্দ্রা ২৩, পিকআপ ২২, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ১৮, প্রাইভেট কার ১৬, মাইক্রোবাস ১৩, ট্রলি ৬, অ্যাম্বুলেন্স ৪, ট্রাক্টর ৪, কাভার্ড ভ্যান ৩, লরি ৩ ও জিপ ২টি। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার প্রকৃতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অন্য যানবাহনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে ১৬.১৯ ভাগ, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪১.৯৫ ভাগ, মোটরসাইকেলে অন্য যানবাহনের ধাক্কায় দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৯.০৪ ভাগ ও অন্যান্য কারণে ২.৮ ভাগ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতের ৫১.৪২ শতাংশের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছর। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- ঈদযাত্রায় এত বেশি মোটরসাইকেল আগে কখনো দেখা যায়নি। গণপরিবহন সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী না হওয়ায় এবং যানজট এড়াতে এবার ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা করেছে। চার চাকার যানবাহনের চেয়ে ৩০ গুণ ঝুঁকিপূর্ণ মোটরসাইকেল। এ কারণে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে। কিশোর-যুবকরা বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোয় নিজেরা দুর্ঘটনায় পড়ছে, অন্যদেরও আক্রান্ত করছে। মোটরসাইকেল উৎপাদন ও আমদানিতে সরকার নানা সুবিধা দেওয়ায় মোটরসাইকেলের ব্যবহার ব্যাপকহারে বাড়ছে। বছরে ৫ হাজার কোটি টাকার মোটরসাইকেলের ব্যবসা করতে গিয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার জনসম্পদ নষ্ট হচ্ছে। সরকারের উচিত উন্নত গণপরিবহন নিশ্চিত করার মাধ্যমে মোটরসাইকেল নিরুৎসাহ করা। সেই সঙ্গে অপ্রাপ্তবয়স্করা যাতে মোটরসাইকেল চালাতে না পারে সেজন্য কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি ও গণপরিবহনে চাঁদাবাজিকে দায়ী করেছে সংগঠনটি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর