রবিবার, ২৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

হঠাৎ বিএনপি কেন আন্দোলনমুখী

♦ ফয়সালা হবে রাজপথে : ফখরুল ♦ ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি : মোশাররফ

শফিউল আলম দোলন ও শফিকুল ইসলাম সোহাগ

হঠাৎ বিএনপি কেন আন্দোলনমুখী

বিএনপি কেন হঠাৎ আন্দোলনমুখী! সরব হয়ে উঠছে দল ও অঙ্গসংগঠনগুলো। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের চাঙা করতে শক্ত অবস্থান নিয়েছে দলটি। চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পূর্ণাঙ্গ মুক্তির বিষয়টিও সামনে আনা হচ্ছে ভোটের আগে। কৌশল বদল করেছে দলটি। ভোটের আগে তৈরি করা হচ্ছে দরকষাকষির নানা ইস্যু। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছেন। ছাত্রদল-যুবদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য অঙ্গসংগঠনগুলোও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যেই দল ও অঙ্গসংগঠনের সর্বস্তরের কমিটি গঠন-পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় হাইকমান্ড। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যোগাযোগ ও তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। এ অবস্থায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা মনে করেন, আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে আছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। রোজার ঈদের পর চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা দেখা করেছেন। চেয়ারপারসন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে তাঁর পরিষ্কার মতামত ব্যক্ত করেছেন। একইভাবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছেন। তিনি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে এসব তথ্য।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ সরকারের সময় শেষের দিকে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। এর আগে ফয়সালা হবে রাজপথে। এটা বুঝতে পেরেই ক্ষমতাসীনরা এখন দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তাদের ছাত্র সংগঠনকে ছাত্রদলসহ সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর লেলিয়ে দিচ্ছে। তারা এখন প্রকাশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গিয়ে পর্যন্ত সশস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। তারা একটা ভীতিকর পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় জনআন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য। কারণ এ সরকার জানে যে, তাদের সময় শেষ হয়ে আসছে। ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। হামলা চালিয়ে মামলা দিয়ে জোর করে ক্ষমতায় থাকার দিন শেষ। সমগ্র জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। আন্তর্জাতিক মহলও তাদের সুস্পষ্ট মতামত ব্যক্ত করছেন। এ দেশে আর কোনো প্রতারণার নির্বাচন হবে না এবং হতেও দেওয়া হবে না। নিরপেক্ষ সরকার ও কমিশনের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে নির্বাচনে জনগণ নিজেদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিয়ে তাদের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে ইনশা আল্লাহ।’

এদিকে জানা গেছে, বর্তমান অবস্থায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা মনে করেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের টোপে পড়লে দল লাভজনক অবস্থানে যেতে পারবে না। আন্তর্জাতিক মহল থেকেও বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে একই মত ব্যক্ত করছেন। আন্তর্জাতিক মহলকে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উদারহণ টেনে বিএনপি নেতারা বলছেন, দলীয় সরকারের অধীনে কখনই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এ জন্য ভোটের আগে তারা মাঠে শক্ত অবস্থান ধরে রাখার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি এবার আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতারণার (নির্বাচনী) ফাঁদে পা দেবে না। আবার দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতেও দেবে না। সুতরাং এবারের নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই হতে হবে। আর এসব হামলা নির্যাতন করে জনআন্দোলন দমানো যাবে না। সরকারকে বিদায় নিতেই হবে। তিনি বলেন, সরকারি দল আজ অত্যন্ত মারমুখী। সমগ্র পৃথিবী আজ দেখছে, তারা কীভাবে সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালাচ্ছে। আর কারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে ক্ষমতাসীনদের কর্তৃক এই সশস্ত্র নারকীয় হামলার শিকার হচ্ছে। আসলে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তাদের ছাত্র সংগঠনকে হাতিয়ার বানিয়ে ছাত্রদলের ওপর নির্মম হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু এতে তাদের শেষরক্ষা হবে না। জনগণ জেগে উঠছে। ছাত্র শ্রমিক জনতা- সবাই মিলেই এবার ধাক্কা দেবে। রাজপথেই এবার ফয়সালা হবে। জানা গেছে, সম্প্রতি ছাত্রলীগের কয়েক দফা হামলা-নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর সারা দেশে দল ও অঙ্গসংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের কাছে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। কেন্দ্র থেকে শুরু করে দেশের জেলা-উপজেলা পর্যন্ত সবখানেই তারা সহানুভূতি পাচ্ছেন। আগামীতে ছাত্রদল মাঠে নামলে মূল সংগঠনসহ অন্য অঙ্গসংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও অনেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে তেমন কোনো ভূমিকা না রাখলেও বড় ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছ থেকে নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে টুকটাক পরামর্শও দিচ্ছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের দলের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো রকমের ব্যত্যয় হবে না। এর আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় নিতে হবে। কাজেই আওয়ামী লীগের উচিত, সময় থাকতেই সম্মান নিয়ে চলে যাওয়া। নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। অন্যথায় সময় চলে গেলে সে সময়টুকুও হয়তো আর তারা পাবে না।’ সম্প্রতি ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের নারকীয় হামলার ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, এসব করে কোনো লাভ নেই। সরকারের শেষরক্ষা হবে না। বরং তাদের অপরাধের পরিমাণই শুধু বাড়বে। জনগণ এসব অপরাধের হিসাব একদিন কড়ায়-গণ্ডায় ফিরিয়ে দেবে।

সর্বশেষ খবর