সোমবার, ২৭ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

বন্যার উন্নতি, বাড়ছে রোগব্যাধি

এখনো কাটেনি খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট, ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বন্যার উন্নতি, বাড়ছে রোগব্যাধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরাবাদ এলাকায় বসতবাড়ি থেকে নামেনি পানি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমতে থাকায় সারা দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে বন্যা উপদ্রুত এলাকাগুলোয় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক এলাকায় পানি নেমে যাওয়ার পর রোগব্যাধি বাড়ছে। প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণ সরবরাহও পর্যাপ্ত নয়। নিচু এলাকাগুলোয় পানি জমে থাকায় অসংখ্য মানুষ ঘরে ফিরতে পারছে না। এদিকে মাধবপুরে                 বানের জলে নৌকা উল্টে এক শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

সিলেট : সিলেটে ধীরগতিতে নামছে বন্যার পানি। ধীরে ধীরে পানির নিচ থেকে ভেসে উঠছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট। আশ্রয় কেন্দ্র থেকে মানুষ ফিরতে শুরু করেছে বাড়িতে। বাড়ি ফিরে তাদের পড়তে হচ্ছে হতাশায়। কেউ দেখছেন পড়ে আছে শূন্য ভিটা, চিহ্ন নেই বসত ঘরের। কারও ঘর মিশে আছে মাটিতে। খেতের ফসল আর খামারের মাছ তো সেই বন্যার শুরুতেই গেছে ভেসে। কৃষকের সম্বল গোয়ালের গরু আর গুদামের ধান সবই কেড়ে নিয়েছে বানের পানি। বন্যার মাঝে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে জয়ী হয়ে বাড়ি ফিরে এখন তাদের করতে হচ্ছে ঠিকে থাকার লড়াই। ঘুরে দাঁড়ানোর সেই লড়াই শুরু করতে হচ্ছে একেবারেই শূন্য থেকে।

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় প্রায় ভেঙে পড়েছে জেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা। বানের পানির তোড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে সড়ক। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু সেতু কালভার্ট ও এগুলোর সংযোগ সড়ক।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমতে থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। তবে নিম্নাঞ্চলের বানভাসীদের দুর্ভোগ এখনো যথেষ্ট রয়েছে। চলতি বন্যায় এ পর্যন্ত পানিতে ডুবে জেলায় শিশুসহ চারজনের মৃত্যু ঘটেছে। গত দুই সপ্তাহের বন্যায় শুধু ত্রাণের জন্য দেখা দেয় বানভাসিদের কষ্ট। কয়েকটি এলাকার প্রায় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বন্যায় ভেসে যায়।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় বানের পানিতে ডিঙি নৌকা উল্টে ময়না আক্তার নামে (৭) একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে উপজেলার আদাঐর ইউনিয়নে হালুয়াপাড়া গ্রামের ফয়সল মিয়ার মেয়ে। শনিবার দিবাগত রাত ১টায় এ তথ্য জানিয়েছেন আদাঐর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মীর খুরশেদ আলম। তিনি জানান, সকাল ১০টার দিকে ময়না একটি ডিঙ্গি নৌকায় উঠে বন্যার পানিতে খেলা করছিল। হঠাৎ নৌকাটি উল্টে গেলে সে পানিতে তলিয়ে যায়। পরে আশপাশের লোকজন গিয়ে পানির নিচ থেকে শিশুটিকে তুলে আনলেও ততক্ষণে সে মারা যায়।

মৌলভীবাজার : চলমান বন্যার কারণে মৌলভীবাজারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হয়েছে। ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, প্রাণিসম্পদ সবক্ষেত্রেই হয়েছে ব্যাপক ক্ষতি। বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন ৫২ হাজার পরিবারের প্রায় ৩ লাখ মানুষ। মৌলভীবাজারে সাতটি উপজেলা ও ৪১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫২ হাজার ১১১টি পরিবারের ২ লাখ ৬৩ হাজার ৪০০ সদস্য ক্ষতির মুখে পড়েছেন বন্যায়। ১৩ হাজার ২৬০টি ঘরবাড়ি ও ৪ হাজার ৭৫০ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

রংপুর : রংপুরে বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ না করলেও রয়ে গেছে বন্যার ক্ষত। তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচে থাকলেও যে কোনো সময়ে পানি বৃদ্ধি পেয়ে আবারও বন্যা দেখা দিতে পারে- এমনটাই শঙ্কা করছেন নদী তীরবর্তী মানুষ। বন্যায় রংপুর বিভাগের চার জেলায় ১৮ হাজার হেক্টরের বেশি জমির আমনের বীজতলাসহ অন্যান্য ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এ ছাড়া ৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ৩১৯ মেট্রিক টন পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। অপরদিকে বন্যাদুর্গত এলকার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে রংপুর বিভাগে ৭০৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : এ বন্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ছোট-বড় মিলে ১০টি সেতু ও কালভার্ট পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েকটি সেতু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যাকবলিত ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার কাঁচা-পাকা মিলে ৩৪৫ কিলোমিটার সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। সড়কের অধিকাংশই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধার সবকটি নদ-নদীর পানি নামতে শুরু করেছে। তবে এখনো স্বাভাবিক হয়নি জেলার চার উপজেলার চর-নিম্নাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা। এমন অবস্থায় নিজেদের খাদ্য সংকটের পাশাপাশি গবাদিপশুর খাদ্যসংকট নিয়েও চরম বিপাকে পড়েছে চরাঞ্চলের বন্যাকবলিত এসব পরিবারগুলো। অপরদিকে বন্যাকবলিত এলাকা থেকে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয়েছে ভাঙন। অনেকেই বসতবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। যাদের সামর্থ্য আছে তারা উঁচু এলাকায় চলে যাচ্ছেন, তবে নিতান্তই যাদের উপায় নেই, নিয়তিই তাদের একমাত্র ভরসা।

নেত্রকোনা : নেত্রকোনা জেলার পাহাড়ি নদী সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার নিচে নামলেও কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে। যে কারণে প্লাবিত এলাকার পানি নামছে ধীর গতিতে। কোনো কোনো বাড়িঘরে এখনো মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে পানি। আবার কোথাও ঘর থেকে পানি নেমে বারান্দায় এসেছে।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি কমায় বসতবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন বন্যাকবলিতরা। ক্ষতিগ্রস্ত বসতভিটা দেখে মেরামত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন তারা। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত ফসল দেখে কৃষকরা হাপিত্যেশ করছেন। কীভাবে ক্ষতি পোষাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। বন্যায় নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় চলাচলেও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাঁতের সরঞ্জামাদি নষ্ট হওয়ায় তাঁতিরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর