বুধবার, ৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

দুঃসময়ের ছাত্রলীগ নেতা আনিসের আত্মহনন, দায় কার?

শাহজাহান আলম সাজু

কাজী আনিসুর রহমান পোড় খাওয়া একজন ত্যাগী ছাত্রনেতা ছিলেন। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে কুষ্টিয়ায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে গতিশীল করতে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। সে সময় কুষ্টিয়ায় ছাত্রলীগের রাজনীতি করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার ছিল। কুষ্টিয়ায় তখন হাতেগোনা স্বল্পসংখ্যক মানুষ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ করতেন। আওয়ামী রাজনীতির চরম দুঃসময়ে তিনি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

আজ আওয়ামী লীগের সুসময়ে নিজের পাওনা টাকা আদায় করতে না পেরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যা করেছেন। পত্রিকার খবরে প্রকাশ হেনোলাক্স কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করতে গিয়ে তিনি তার সারা জীবনের সঞ্চয় ওই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু হেনোলাক্সের মালিক  তাঁর সঙ্গে বেইমানি করে।

মৃত্যুর আগে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে হেনোলাক্স কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে গেছেন। তাঁর সব কষ্টের কথা বলে গেছেন। তিনি তাঁর পাওয়া টাকার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে একপর্যায়ে হতাশ হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন। একজন মানুষ কতটা কষ্ট পেলে নিজের স্ত্রী-সন্তান, পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করে আত্মহত্যা করতে পারেন; তা সহজেই অনুমেয়।

আমি খুব কাছ থেকে আনিসকে দেখেছি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ায় স্থানান্তরের পর আমরা একসঙ্গে কুষ্টিয়ায় স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে লড়াই করেছি। আমি তখন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি। অসাধারণ একজন সংগঠক ও ত্যাগী নেতা ছিলেন আনিস। কুষ্টিয়ায় হরতালের মিছিল থেকে আমার সঙ্গে আনিসও গ্রেফতার হয়েছিলেন।

আনিসদের মেধা, শ্রম ও আত্মত্যাগে আওয়ামী লীগ আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। অথচ আনিসের প্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগের শাসনামলেই তাঁর পাওনা টাকা আদায় করতে পারেননি তিনি। সেই দুঃসময়ের মুজিব রণাঙ্গনের সাহসী যোদ্ধা আনিস আজ  জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন। আনিসের আত্মহত্যা কি শুধুই আত্মহত্যা, নাকি হত্যা? এ দায় কার? আমি মনে করি, এটা আত্মহত্যা নয়। একটি হত্যাকাণ্ড। হেনোলাক্স কোম্পানি আনিসকে তিলে তিলে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিয়েছে। এ  হত্যাকাণ্ডের  দায় অবশ্যই হেনোলাক্সের মালিককেই  নিতে হবে। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ;

প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

সর্বশেষ খবর