বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও জনতার দখলে, সংঘর্ষ জরুরি অবস্থা

গোতাবায়া পালিয়ে গেলেন মালদ্বীপে, রনিল ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট, আন্দোলন দমনে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ, রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বন্ধ

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও জনতার দখলে, সংঘর্ষ জরুরি অবস্থা

শ্রীলঙ্কায় প্রধানমন্ত্রীর ভবনও দখলে নিয়েছে বিক্ষোভকারীরা

বিক্ষোভরত শ্রীলঙ্কানরা গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দখল করে নিয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, বিক্ষোভকারীরা কার্যালয়টি তাদের দখলে রেখেছে। তবে তাদের সঙ্গে সেনা ও পুলিশের সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছিল। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে গণবিক্ষেভের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর সংসদের স্পিকার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন। এরপর রনিল দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বন্ধ করে দেন। একই সঙ্গে বিক্ষোভ দমনে তিনি সেনাবাহিনীকে ‘যা দরকার, তাই করার’ নির্দেশ দিয়েছেন। এ অবস্থায় দেশটি ভয়াবহ রক্তপাতের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষকরা জানান। অন্যদিকে পালিয়ে মালদ্বীপে আশ্রয় নেওয়া প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া সেখানেও গণবিক্ষোভের মুখে পড়েছেন এবং তিনি যে কোনো মুহূর্তে মালদ্বীপ ছেড়ে সিঙ্গাপুর যাবেন বলে জানা গেছে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, ডেইলি মিরর।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কায় কয়েক দশকের মধ্যে ভয়াবহ আর্থিক সংকটের কারণে জনমনে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এই ক্ষোভ থেকেই বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো দেশ। পুরো পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে প্রাণের ভয়ে মালদ্বীপে পালিয়ে গেছেন। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের কার্যালয়ও বিক্ষোভকারীদের দখলে চলে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে রনিল বিক্রমাসিংহে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে জানান, তিনি সামরিক বাহিনীকে শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য যা যা করা দরকার তাই করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের সংবিধান লঙ্ঘন করতে পারি না। তিনি বিক্ষোভকারীদের ‘ফ্যাসিস্ট’ বলে আখ্যায়িত করেন। বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিস্টদের ক্ষমতা দখল করতে দিতে পারি না। আমাদের গণতন্ত্রের জন্য এই ফ্যাসিবাদি হুমকির অবসান ঘটাতে হবে।’

এদিকে দেশটির রাষ্ট্রীয় দুটি প্রচার মাধ্যমের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল দুপুরের দিকে দেশটির সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল রুপাভিহিনি শ্রীলঙ্কার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা ওই চ্যানেলের কার্যালয়ে প্রবেশ করায় প্রকৌশলীরা কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান। এর ঘণ্টাখানেক পরই আরও একটি প্রচার মাধ্যমের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে ওই চ্যানেলের নাম জানা যায়নি। সেখানেও বিক্ষোভকারীরা প্রবেশ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

সংবাদ সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিক্রমাসিংহের সর্বশেষ বিবৃতির ফলে রাজধানী কলম্বোতে সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা জোরদার করা হতে পারে। গোতাবায়া রাজাপক্ষে পালিয়ে মালদ্বীপে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মিছিল করে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের দফতরের দখল নেয় হাজারো বিক্ষোভকারী। বিক্ষোভকারীরা টিয়ার গ্যাস উপেক্ষা করে সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা দেয়াল ভেঙে প্রধানমন্ত্রী দফতরের গেট খুলে ফেলার চেষ্টা করে। চরম উত্তেজনাকর এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে তার দফতরে ছিলেন না। তবে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের পক্ষ থেকে সারা দেশে জরুরি অবস্থা জারি এবং পশ্চিম প্রদেশে কারফিউ জারির পাশাপাশি কিছু আদেশ জারি করেন রনিল বিক্রমাসিংহে।

সংবাদ সূত্রগুলো জানায়, পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীরা শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে যায়। তারা কার্যালয়ের ফটক ভেঙে ফেলে। পরে তারা কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকে পড়েন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দখলে নেওয়া বিক্ষোভকারীরা আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে থাকে। তারা চিৎকার-চেঁচামেচি করে সেখানে সেলফিও তুলছিল। বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভিতরে ঢোল বাজিয়ে, চিৎকার করে স্লোগান দেয় ‘রনিল পাগল’, ‘গোতাবায়া পাগল।’

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভকারীদের অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ভবনের বারান্দায় অবস্থান নিয়েছিল। তারা সেখানে দাঁড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিল। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কেউ কেউ বারান্দায় আগুন জ্বালিয়ে দেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ফটকের বাইরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের কয়েক ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢুকে পড়া ঠেকাতে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। তারা জলকামান ব্যবহার করে।

উল্লেখ্য, একসময় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এই দেশটিতে চলছে খাদ্য সংকট। জ্বালানি তেল কিনতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে মৃত্যুও হয়েছে কয়েকজনের। ওষুধসহ নিত্যপণ্যের সংকটে জনজীবন বিপর্যস্ত। দেশের এ পরিস্থিতির জন্য  প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে এবং তার পরিবারকে দায়ী করে আসছে শ্রীলঙ্কার বিক্ষোভকারীরা। গত দুই দশক ধরে এই দ্বীপ রাষ্ট্রটির ক্ষমতায় রয়েছে রাজাপক্ষে পরিবার, যাদের উৎখাতে এবার উঠেপড়ে লেগেছে হাজারো বিক্ষোভকারী।

আরেক খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী রনিলকে শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার। স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে গণমাধ্যমগুলোকে গতকাল জানান, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে পদত্যাগ করবেন। তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেবেন। ২০ জুলাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে।

এদিকে বিক্ষোভকারীরা বলেছে, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের আনুষ্ঠানিক পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত তারা প্রাসাদ ছাড়বে না।

অন্যদিকে গতকাল শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে আশ্রয় না নিতে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রবাসীরা। উল্লেখ্য, বেসামরিক প্লেন ও সমুদ্রপথে চেষ্টার পর অবশেষে সামরিক প্লেনে করে দেশ ছেড়ে পালাতে সক্ষম হন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট  গোতাবায়া রাজাপক্ষে। ৭৩ বছর বয়সী এই নেতা স্থানীয় সময় বুধবার রাত ৩টার দিকে মালদ্বীপের রাজধানী মালে পৌঁছান। মালদ্বীপে পৌঁছানোর সময় শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী ও দুই নিরাপত্তা কর্মকর্তা। খবরে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার বিমান বাহিনীর একটি প্লেনে  দেশ ছাড়েন রাজাপক্ষে। তার ঘনিষ্ঠ একটি সরকারি সূত্র জানিয়েছে, মালে  থেকে রাজাপক্ষে সম্ভবত এশিয়ার আরেকটি দেশে পাড়ি জমাবেন।

তবে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, গোতাবায়া এবার সিঙ্গাপুরে যাবেন। মালদ্বীপের সূত্রগুলো বলছে, আজ (বুধবার) দিনের শেষের দিকে গোতাবায়া  সেখান থেকে সিঙ্গাপুরে যাবেন।

(ওপর থেকে) শ্রীলঙ্কায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষুব্ধ জনতা, আহত একজনকে নেওয়া হচ্ছে, নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের অবস্থান   -সিএনএন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর