বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

দেশে রিজার্ভ ও তেলের ঘাটতি নেই : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে রিজার্ভ ও তেলের ঘাটতি নেই : প্রধানমন্ত্রী

চাহিদার চেয়ে বেশি পেট্রোল-অকটেন দেশে আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশে পেট্রোল-অকটেনের ঘাটতি নিয়ে মিথ্যা কথায় বিভ্রান্ত হবেন না। ডিজেল আমাদের কিনতে হয় ঠিক। কিন্তু পেট্রোল-অকটেন কিনতে হয় না। দেশে রিজার্ভ ঘাটতি না থাকার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এখন যে রিজার্ভ আছে তাতে তিন মাস কেন, ছয় মাস, নয় মাসের খাবার আমরা কিনে আনতে পারব।

গতকাল আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ভার্চুয়ালি তিনি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে গ্যাস উত্তোলন করি সেখান থেকে বাই প্রোডাক্ট (উপজাত) হিসেবে রিফাইন করা পেট্রোলও পাই, অকটেনও পাই। বরং যতটুকু চাহিদা তার থেকে অনেক বেশি পেট্রোল এবং অকটেন ?আমাদের আছে। এগুলো অনেক সময় বাইরে বিক্রিও করি। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যারা আমাদের রিজার্ভ নিয়ে কথা বলেন, সেই বিএনপির আমলে ২০০৬ সালে অর্থাৎ এক সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রিজার্ভ কত ছিল? তিন বিলিয়নের কিছু ওপরে, ৩ দশমিক ৮ এর কমই ছিল। আর আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর আমরা যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি, তার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৫ দশমিক ৬ বিলিয়নের ওপরে রিজার্ভ করেছিল। সেখান থেকে আমরা ৪৮ বিলিয়ন পর্যন্ত রিজার্ভ বাড়াতে সক্ষম হয়েছিলাম।  শেখ হাসিনা বলেন, করোনার সময়ে আমাদের আমদানি বন্ধ ছিল। এরপর আমদানি করতে হয়েছে। আমদানি করতে গিয়ে এবং উন্নয়নমূলক কাজ করতে গিয়ে আমাদের রিজার্ভ খরচ করতে হয়েছে। আমরা বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিলাম। সেখানে তো আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়েছে। এমনকি একটি ভ্যাকসিন দিতে সিরিঞ্জ থেকে শুরু করে যা যা দরকার আমরা তো সেগুলো বিদেশ থেকে কিনে এনেছি। সেখানে বিরাট অঙ্কের টাকা আমরা খরচ করেছি। পাশাপাশি আমাদের আমদানিতে কোনো কার্পণ্য ছিল না। এটা মাথায় রাখতে হবে, যেসব শিল্প গড়ে উঠবে সেগুলো যখন প্রোডাকশনে যাবে তখন প্রচুর মানুষ লাভবান হবে।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে অনেক চক্রান্ত চলছে। ঝড়-ঝাপটা এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশের কারণে অনেক কিছুই মোকাবিলা করতে হবে। আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে যেমন চলি তেমনি বৈশি^ক যে দুর্যোগ সেটাও মোকাবিলা করে আমরা এগিয়ে যেতে পারব, সে বিশ্বাস আমার আছে।  প্রধানমন্ত্রী দেশে কোনো গৃহহীন পরিবার থাকলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের নিজ এলাকায় খুঁজে দেখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কারণ, সরকার সবাইকে ঘর করে দিবে। এ থেকে দলিত শ্রেণি-পেশার মানুষ এমনকি হিজড়া ও বেদে শ্রেণিও বাদ যাচ্ছে না। তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, কে কী বলল সেদিকে না যেয়ে আমরা মানুষের জন্য যে উন্নয়ন করেছি সেই উন্নয়নের কথাগুলো একেবারে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। বারবার বলতে হবে। তিনি বলেন, ষড়ঋতুর দেশ আমাদের। দুই মাস পরপর ঋতু বদলায়, মানুষের মনও বদলায় এবং ভুলেও যায়। কাজেই দুই মাস পর ভুলে যেন না যায়, সে জন্য আমরা কী কাজ করেছি মানুষের কাছে বারবার সেটা বলতে হবে, বোঝাতে হবে। কারণ একটা শ্রেণি আছে যারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। এই জ্ঞানপাপীদের কথা শুনে অজ্ঞান হয়ে কেউ যেন বিভ্রান্ত না হয়।  স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু।

বিশ্ব কঠিন সময় পার করছে : গতকাল ডি-৮ মন্ত্রীদের ২০তম কাউন্সিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কভিড-১৯ মহামারি, সংঘাত, খাদ্য এবং জ্বালানি সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্ব একটি কঠিন সময় পার করছে।  রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।  রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং পরবর্তীতে নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে সারা বিশ্বে সৃষ্ট মানবিক সংকট সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং পরবর্তীতে নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় সারা বিশ্বে খাদ্য, সার, বিদ্যুৎ-জ্বালানি এবং অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্লকে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে একসঙ্গে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী পাঁচ দফা প্রস্তাবও রেখেছেন। যাতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) প্রয়োগ করা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর মাধ্যমে ব্যবসায়িক সম্ভাবনার সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং পরবর্তী দশকে ১২৯ বিলিয়ন ডলার থেকে আন্ত-ডি-৮ বাণিজ্য দ্বিগুণ করার সুযোগ রয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ ঐতিহাসিক এই মুহূর্তটি উদযাপন করায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ২৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ডি-৮ এখন সমন্বয় তৈরির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণ করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং আমাদের সরকারি ও বেসরকারি খাতের অর্থপূর্ণ সহযোগিতার মাধ্যমে এটা সম্ভব হয়েছে। আমাদের অপার সম্ভাবনা যদি সঠিকভাবে উপলব্ধি করা যায় তাহলে একটি অর্থনৈতিক ব্লক হিসেবে শক্তি বৃদ্ধি পাবে।  সরকার প্রধান জানান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া এবং তুরস্কের মতো অন্তর্ভুক্ত ডি-৮ দেশগুলো অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করছে শুনে তিনি আনন্দিত। তিনি আরও বলেন, এটি আন্তদেশীয় বাণিজ্যকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে সাহায্য করবে। বাধাগুলোকে উদারীকরণ করবে এবং সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে উদ্দীপিত করবে।  প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের অধিবেশনের ফাঁকে দ্বিতীয় ডি-৮ সিসিআই সাধারণ অধিবেশনে এবং বিজনেস এক্সপোতে বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের চেম্বারের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তারা অংশগ্রহণ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যে সময় আমরা সবাই কভিড-১৯ মহামারিতে বিপর্যস্ত ছিলাম, সে সময় রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বিশ্বকে নতুন করে বিপদে ঠেলে দিয়েছে। সংঘাত এবং পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞা খাদ্য, সার, শক্তি ও বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যাহত করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলো যুদ্ধের প্রভাব সবচেয়ে বেশি বহন করছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম অধিকাংশ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তিনি বলেন, আমাদের সবার উচিত সাহসের সঙ্গে এই মানবিক সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে আসা। তিনি বলেন, আন্ত-ডি-৮ বাণিজ্য আমাদের ব্যবসার সম্ভাবনা এবং সুযোগগুলোকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে। আগামী দশকে ১২৯ বিলিয়ন ডলার থেকে আন্ত-ডি-৮ বাণিজ্য দ্বিগুণ করা আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সদস্য দেশগুলোর বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জায়গা দিতে প্রস্তুত। আমরা যদি এখনই প্রক্রিয়া শুরু করি, তাহলে আগামী দশকের মধ্যে আমাদের একটি শক্তিশালী ডি-৮ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে। তিনি বলেন, আইসিটি এমন একটি ক্ষেত্র যার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ডি-৮ দেশের যুবকদের শক্তিশালী কর্মশক্তিতে পরিণত করা যেতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ ৪০ বছরের নিচে এবং আমাদের সাড়ে ৬ লাখ নিবন্ধিত আইটি ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। সরকার প্রধান বলেন, এই বিশাল জনশক্তিকে আমরা আইটি ভিত্তিক শিল্প তৈরি করতে এবং তরুণদের বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে পারি। তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীল খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে ডি-৮-এর বৈচিত্র্যময় কৃষি উৎপাদনে মনোনিবেশ করা উচিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ তার সেরা অনুশীলন এবং অভিজ্ঞতা অন্যান্য ডি-৮ সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে ভাগ করে নিতে প্রস্তুত। আগামী দশকের মধ্যে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য আমাদের কৃষি উৎপাদনে মনোযোগ দেওয়া উচিত’। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, ডি-৮ মহাসচিব রাষ্ট্রদূত ইসিয়াকা আবদুল কাদির ইমাম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং ডি-৮ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডি-৮সিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। অনুষ্ঠানে ডি-৮-এর ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর