বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

জ্বালানি সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত ডি-৮

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বব্যাপী চলমান জ্বালানি সংকটের প্রেক্ষাপটে নিজেদের মধ্যে জ্বালানি সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছে ডি-৮ (উন্নয়নশীল ৮ রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক জোট) সদস্য রাষ্ট্রগুলো। এ জন্য প্রথমবারের মতো জোটের জ্বালানি মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই বৈঠকের দিনক্ষণ ঠিক করবে জোট সচিবালয়।

গতকাল রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ডি-৮ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের হাইব্রিড বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। ডি-৮ এর সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ এ সভার আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন। এ ছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, ডি-৮ মহাসচিব অ্যাম্বাসেডর ইসিয়াকা আবদুল কাদির ইমাম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, ডি-৮ সিসিআই প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। হাইব্রিড মাধ্যমে অনুষ্ঠিত সভায় তুরস্ক ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ভার্চুয়ালি যোগ দেন। এ ছাড়া ডি-৮ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ২০২২ সালে ডি-৮ প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন করছে। এ শুভলগ্নে ডি-৮ এর সদস্যপদ লাভের জন্য আজারবাইজান আবেদন করেছে। এবারের সভায় আজারবাইজানের সদস্যপদ লাভের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে ডি-৮ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে আন্তবাণিজ্য প্রসারের লক্ষ্যে ডি-৮ নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। প্রতিষ্ঠাকালীন ডি-৮ এর সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে আন্তবাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৪ বিলিয়ন ডলার যা বর্তমানে ১২৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ডি-৮ দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা বেশি। এখন একটি সমঝোতায় পৌঁছানো গেছে। ইতোমধ্যে, মিসর ব্যতীত অন্যান্য সাতটি সদস্য রাষ্ট্র ডি-৮ পিটিএ (অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি) অনুসমর্থন করেছে। এবারের সভায় মিসর জানিয়েছে, তারা শিগগিরই ডি-৮ পিটিএ অনুসমর্থন করবে। এ ছাড়াও ডি-৮ পিটিএ দ্রুত কার্যকর করতে বাণিজ্য সুবিধা কৌশলের খসড়া চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়া চলছে। খসড়াটি শিগগিরই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য তৃতীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে গৃহীত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আগামী অক্টোবর থেকে অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এ কে মোমেন বলেন, এবারের সভায় ডি-৮ দেশসমূহের মধ্যে বিশেষত বাণিজ্য, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্প সহযোগিতা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, পরিবহন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ এবং পর্যটন খাতে আন্তসহযোগিতা বৃদ্ধির ব্যাপারে আলোচনা করা হয়। সভায় ডি-৮ এ নতুন সদস্য রাষ্ট্র অন্তর্ভুক্তির নীতিমালা প্রণয়ণের জন্য সদস্য রাষ্ট্রসমূহের কাছে মতামত প্রেরণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া নাইজেরিয়া কর্তৃক প্রস্তাবিত ডি-৮ যুব পরিষদ গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ইরান থেকে তেল আমদানির বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওই দেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। আমরা সেগুলো মেনে চলি।

তিনি বলেন, এ বছর ডি-৮ চেয়ারম্যানশিপ মিসরের কাছে হস্তান্তরের কথা ছিল। কিন্তু মিসরের অনুরোধের কারণে বাংলাদেশ আরও এক বছর চেয়ারম্যান থাকবে এবং অন্য দেশগুলোও এতে আপত্তি করেনি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন এবং বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালে ঢাকায় দ্বিতীয় ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনটি সফলভাবে আয়োজন করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ৮ এপ্রিল ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে ডি-৮ এর সভাপতিত্ব গ্রহণ করেন। দশম শীর্ষ সম্মেলনে ডি-৮ নেতৃবৃন্দ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তবায়নের অগ্রগতি ২০তম ডি-৮ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সভায় পর্যালোচনা করা হয়। সভায় ডি-৮ মহাসচিব আন্ত ডি-৮ সহযোগিতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিষয়াদিতে বিগত বছরে গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন।

 

 

সর্বশেষ খবর