শুক্রবার, ১২ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

সরকারি ওষুধ চুরিতে ১০ বছর জেল

মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি ওষুধ চুরি করে যদি কেউ বিক্রি করে, তাহলে ১০ বছরের জেল এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘ওষুধ আইন, ২০২২’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এতে ভেজাল ও লাইসেন্স ছাড়া ওষুধ উৎপাদন করলেও ১০ বছরের জেল বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে এবং মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই আইনে ১০৩টি ধারা রয়েছে। ঔষধ প্রশাসন কীভাবে চলবে, ওষুধের মান কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সেসব ঠিক করার জন্য্য একটি নির্বাহী পর্ষদ থাকবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ওষুধ উৎপাদন, বিক্রি, মজুদ, বিতরণ ইত্যাদির জন্য কীভাবে লাইসেন্স প্রদান করা হবে, ফি কী হবে, লাইসেন্সপ্রাপ্তির যোগ্যতা কী থাকবে- এগুলো তারা ঠিক করবে। কেউ যদি তার লাইসেন্সে প্রাপ্ত যেই জিনিসগুলো উৎপাদন করার কথা, তার বাইরে কিছু করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কী অ্যাকশন নেওয়া যাবে, সেগুলো মেনশন করা আছে। সরকারি ওষুধ, ফিজিশিয়ান স্যাম্পল ওষুধগুলো কোনোভাবেই যেন ট্রানজেকশনের মধ্যে না আসে। লাইসেন্স ছাড়া কোনো ওষুধ আমদানি করা যাবে না। আইন লঙ্ঘনের শাস্তি প্রসঙ্গে খন্দকার আনোয়ার বলেন, লাইসেন্স ছাড়া কেউ ওষুধ আমদানি করলে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

নিবন্ধন ছাড়া কেউ ওষুধ উৎপাদন করলে, উৎপাদন করে আমদানি-রপ্তানি, বিক্রি, বিতরণ, মজুদ অথবা প্রদর্শন করলেও ১০ বছরের জেল এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা হবে। ভেজাল ওষুধ তৈরি, বিক্রি, মজুদ করলেও একই মাত্রায় শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়। তাছাড়া সরকারি ওষুধ চুরি করে যদি কেউ বিক্রি করে, তাহলেও ১০ বছরের জেল এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে। এসব অপরাধের বিচারের জন্য প্রত্যেক জেলা সদরে একটি করে আদালত থাকবে। ড্রাগ অথরিটিই তদন্ত করবে। এক প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান, ১৯৮২ সালের ‘ড্রাগ অর্ডিন্যান্স’ এবং ১৯৪০ সালের ড্রাগ অ্যাক্ট দিয়ে এতদিন চলছিল। পাশাপাশি ১৯৮৪ সালের ওষুধ নীতিমালাও অনুসরণ করা হচ্ছিল। পুরনো আইনগুলোকে সমন্বিত ও হালনাগাদ করে এখন নতুন আইন হচ্ছে।

নতুন শিল্পনীতি অনুমোদন : আধুনিক ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম শিল্পপণ্য উৎপাদনের শক্তিশালী ভিত তৈরির লক্ষ্যে ‘জাতীয় শিল্পনীতি-২০২২’ এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এমন তথ্য জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দেশীয় কাঁচামাল ও সম্পদের সুষম ব্যবহার করে শিল্পায়নের পাশাপাশি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা নিয়ে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করবে এ নীতি। খাতভিত্তিক উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে উৎপাদিত পণ্যের গুণগতমানের উৎকর্ষ সাধনের জন্যই এটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এ নীতিমালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে একটি আধুনিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে সক্ষম শিল্পপণ্য উৎপাদনের শক্তিশালী ভিত তৈরি হবে। এতে ২০টি অধ্যায় রয়েছে। এটি রপ্তানিমুখী শিল্পের উন্নয়ন-বহুমুখীকরণ, সেবা খাতের উন্নয়ন, আইসিটিভিত্তিক উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও বিদেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। শিল্প খাতের অবকাঠামো শক্তিশালী করতে, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা, বেসরকারি বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে নীতিমালাটি বেশ ভূমিকা রাখবে।

আপিল কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা পাচ্ছেন জেলা জজরা : ট্রাইব্যুনাল গঠন না হওয়া পর্যন্ত জেলা জজদের এস্টেট অ্যাকুইজিশন আইনের মামলা নিষ্পত্তির আপিল কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা দিয়ে ‘দ্য এস্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেনেন্সি (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০২২’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জমি-জমা আমরা এস্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যাক্টের আওতায় ম্যানেজ করি। এখানে একটি ট্রাইব্যুনাল করার বিধান আছে। এটার আদালত এখনো ফিক্সড করা হয়নি। এ জন্য অনেক মামলা জমে যায়। তাই একটি সংশোধনী নিয়ে আসা হয়েছে। সেটা হলো জেলা পর্যায়ে একজন যুগ্ম জেলা জজকে ট্রাইব্যুনালের বিচারকের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সহকারী জজ অথবা সিনিয়র সহকারী জজকে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে নিয়োগ বা ক্ষমতা অর্পণ করা। যতক্ষণ পর্যন্ত ফর্মাল ট্রাইব্যুনাল না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সহকারী জজ বা সিনিয়র সহকারী জজ বিচারগুলো করতে পারবেন। এটা ছোট একটা অ্যামেন্ডমেন্ট। জেলা জজ হবেন অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের বিচারক। এটা করতে গিয়ে একটি আলোচনা এসেছে, ১৪৪ ধারায় ডিস্ট্রিক কালেকটররা ক্লারিক্যাল মিস্টেকগুলো যাতে কারেকশন করতে পারেন। এ ছাড়া আলোচনায় এসেছে বাবার নাম যদি ভুল থাকে বা ছোট ভুল যদি কালেক্টররা কারেকশন করতে পারেন তাহলে ট্রাইব্যুনালের মামলা অনেকটা কমে যাবে। এগুলো অ্যামেন্ডমেন্টে আসেনি। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে আরও অ্যামেন্ডমেন্ট এলে তখন এটা আনা হবে।

বাণিজ্য সহজ করতে সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি : দুই দেশের শুল্ক বিভাগের যোগাযোগ স্থাপন এবং বাণিজ্য সহজ করতে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে ‘এগ্রিমেন্ট অন কো-অপারেশন অ্যান্ড মিচুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্স ইন কাস্টমস মেটার্স’ শীর্ষক চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে এ চুক্তি হচ্ছে। এর ফলে পাঁচটি সুবিধা হবে। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি করবে, দুই দেশের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ সুসংহত হবে, পণ্যের অবৈধ বাণিজ্য ও চোরাচালান প্রতিরোধে তথ্য আদান-প্রদান করা যাবে, গোয়েন্দা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহায়তা দেওয়া যাবে এবং শুল্ক বিভাগের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সৌদি আরবের কাছ থেকে আমরা কো-অপারেশন নিতে পারব।

সার্বিয়া যেতে সরকারি পাসপোর্টধারীদের ভিসা লাগবে না : বাংলাদেশ ও সার্বিয়া সরকারের মধ্যে কূটনৈতিক ও অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরা অনেক দেশের সঙ্গে এরকম চুক্তি করছি। সার্বিয়ার সঙ্গে আমাদের একটা চুক্তি হলো- কূটনৈতিক বা অফিশিয়াল পাসপোর্ট যাদের থাকবে, তাদের পারস্পরিক যোগাযোগ ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভিসা নিতে হবে না। এ চুক্তি সই হলে সার্বিয়া যেতে বাংলাদেশি কূটনৈতিক ও অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা লাগবে না। একই নিয়ম সার্বিয়ার কূটনৈতিক ও অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর