শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে আবেদন নিবেদন, উপহারের ছড়াছড়ি

বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ধরনা এমপি মন্ত্রী সুলতানের কাছে

জুলকার নাইন

বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ধরনা এমপি মন্ত্রী সুলতানের কাছে

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ঘিরে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা এখন ধরনা দিচ্ছেন সে দেশের মন্ত্রী-এমপিদের বাড়িতে। বাদ নেই কোয়ালিশনে থাকা পার্টিগুলোর শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে সুলতানও। এমপিদের বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে নতুন নতুন জনশক্তি রপ্তানিকারক এজেন্সির নাম সম্পৃক্ত করতে চিঠি দেওয়া হচ্ছে দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে। প্রধানমন্ত্রী আবার সেই চিঠি দেখার জন্য পাঠাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের কাছে। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে বিব্রতকর পরিস্থিতি। এর মধ্যে ২০-২২ জন ব্যবসায়ী গিয়ে সাক্ষাৎ করেছেন সুলতানের সঙ্গে। তাঁরা চান তাঁদের নাম যুক্ত হোক শ্রমিক পাঠানো এজেন্সিগুলোর তালিকায়।

এর বাইরে মালয়েশিয়ার এমপিদের বাড়িতে প্রতিদিনই ধরনা দিচ্ছেন জনশক্তি রপ্তানি প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক ও কর্ণধাররা। কেউ কেউ অর্থ ব্যয় করে নিয়োগ দিয়েছেন লবিস্ট। লবিস্টরা আলাদা করে এমপিদের দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাচ্ছেন অনুরোধপত্র। ব্যবসা বাগানোর এ প্রতিযোগিতায় কেউ কেউ চেষ্টা করছেন বর্তমান শ্রমবাজার ক্ষতিগ্রস্ত করতে। বন্ধ করতে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠানো। এজন্য বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যে-কোনোভাবে অর্থ ব্যয় করে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন মালয়েশিয়ার রাজনীতিবিদদের। লবিস্ট ফার্মগুলোকে কাজে লাগানো হচ্ছে একই উদ্দেশ্যে। এমন পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, এতে সংকটে পড়ছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শ্রমবাজার। বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে আসা একাধিক চিঠির অনুলিপিতে দেখা যায়, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজি মুহাম্মদ সেলিম বিন শরিফ বাংলাদেশি দুটি রিক্রুটিং এজেন্সির নাম উল্লেখ করে অনুরোধপত্র পাঠিয়েছেন। এ দুই রিক্রুটিং এজেন্সিকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানোর ২৫ জনের লিস্টে অন্তর্ভুক্তির অনুরোধ জানানো হয়েছে। আরেকটি তালিকা নতুন করে ভিন্ন ২৫ এজেন্সির নাম উল্লেখ করে পাঠানো হয়েছে। সেখানে ১০টি মূল এজেন্সি ও তার সঙ্গে সহযোগী আরও ১৫ এজেন্সির নাম তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু ছবিতে মালয়েশিয়ার মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে এজেন্সি মালিকদের সাক্ষাৎ ও মূল্যবান উপঢৌকন দেওয়ার তথ্যপ্রমাণও এসেছে।

শ্রমবাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বহু প্রতীক্ষার পর চালু হওয়া বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় ৮ আগস্ট আবার কর্মী যাওয়া শুরু করেছে। চলতি সপ্তাহেই আরও ৫ হাজার কর্মী যাওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই প্রতিদিন নিয়মিত কর্মী যাওয়া শুরু করবে। তখন প্রতি মাসে ১৫-২০ হাজার কর্মী যাবে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের তৎপরতা শ্রমবাজারকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কারণ ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। চূড়ান্ত করা হয়েছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর তালিকা এবং অভিবাসন ব্যয় থেকে শুরু করে কর্মীদের সব সুযোগ-সুবিধা ও অধিকারের বিষয়গুলো। এখন যে-কোনো অপতৎপরতায় নতুন করে তৈরি হতে পারে দীর্ঘসূত্রতা।

জানা যায়, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার তিন বছর পর গত বছরের ডিসেম্বরে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। পরে গত মাসে ঢাকায় যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে শ্রমবাজার খোলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু দীর্ঘসূত্রতা কিছুতেই পিছু ছাড়ছিল না মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের। এজেন্সির সংখ্যা নিয়ে দীর্ঘ সময় পার করে দেয় প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও মালয়েশিয়ার হাইকমিশন। মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তাদের ডিমান্ড লেটার সত্যায়নের পরিবর্তে কখনো মেডিকেল সেন্টারের অনুমোদন, কখনো ডাটা ব্যাংকের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগে বাধ্যবাধকতা, কখনো র‌্যানডম স্যাম্পলিং, কখনো বা মালয়েশিয়ার কাছে মন্ত্রণালয়ের নতুন সিস্টেম সমন্বয়ের প্রস্তাব করা হয়। ফলে দীর্ঘসূত্রতা দিন দিন বাড়ছিল। এতে নেপাল থেকে কর্মী নেওয়ার দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা। কিন্তু সব বাধা কাটিয়ে গত সপ্তাহের ফ্লাইটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় জনবল পাঠানোর দরজা এবার খুলেছে। জনশক্তি রপ্তানিকারকরা বলছেন, বর্তমানে দেশটিতে প্রায় ৬ লাখ বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছেন। তাদের যে চাহিদা তাতে এবার মালয়েশিয়ায় আরও প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী যেতে পারবেন।

সর্বশেষ খবর