শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
উপজেলা চেয়ারম্যানের মারধর

মারা গেলেন আহত ছাত্রলীগ নেতা

নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদের মারধরে গুরুতর আহত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম ফিরোজের ভাতিজা ছাত্রলীগ নেতা জামিউল ইসলাম জীবন মারা গেছেন। গতকাল দুপুরে রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শামীম ইয়াজদানী। তিনি বলেন, সোমবার রাতে জীবনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তাকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। জীবন নলডাঙ্গা উপজেলার রামশাকাজিপুর আমতলী গ্রামের ফরহাদ হোসেনের ছেলে ও উপজেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ছিলেন এবং নলডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের ছাত্র। জীবনের চাচা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম ফিরোজ বলেন, ‘জীবনকে বুধবার সকালে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। এরপর চিকিৎসকরা মৌখিকভাবে জানান জীবন মারা গেছে। কিন্তু হঠাৎ করেই তাকে আবারও আইসিইউতে নিয়ে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। পরে আমরা আইসিইউ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তবে আমাদের জানানো হয় জীবন জীবিত থাকায় তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে এবং আরও ৭২ ঘণ্টা লাইফ সাপোর্টে থাকবে। এ ধরনের নাটক শেষে শুক্রবার দুপুরে আমার ভাতিজার মৃত্যুর সংবাদটি জানানো হয়েছে। এখন চলছে ময়নাতদন্তের কার্যক্রম। ময়নাতদন্ত শেষে রাজপাড়া থানার মাধ্যমে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে বলে জেনেছি। ময়নাতদন্ত শেষে আরও কোনো নাটকের অবতারণা হতে পারে বলে শঙ্কায় রয়েছি।’ উল্লেখ্য, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জেরে নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদের পিটুনিতে আহত হন জামিউল ইসলাম জীবন ও তার বাবা ফরহাদ হোসেন। দুজনকেই রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় জীবনকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। ওই দিনই জীবনের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে নিহতের পরিবারে শুরু হয় শোকের মাতম। পরদিন পরিবারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকর্মীদেরও জানানো হয় জীবনের মৃত্যুর সংবাদ। এতে বেশকিছু গণমাধ্যমে জীবনের মৃত্যুর খবর প্রচার হয়। মঙ্গলবার দিনভর মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা-কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদকে গ্রেফতার ও তার বিচারের দাবিতে নলডাঙ্গা উপজেলা সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদের বিরুদ্ধে মসজিদের মাইক চুরির সালিশে পক্ষপাতিত্ব এবং দুর্নীতির অভিযোগ তোলে ফেসবুক লাইভ করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক জামিউল ইসলাম জীবন। এর জের ধরে পরের দিন ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে নলডাঙ্গা উপজেলার রামশাকাজিপুর আমতলী বাজারে জীবনকে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পেটান আসাদুজ্জামান আসাদ এবং তার দুই ভাইসহ পাঁচজন। এ সময় বাধা দেওয়ায় জীবনের বাবা ফরহাদ হোসেনকেও পেটানো হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে রাতেই নাটোর সদর হাসপাতাল ও পরে রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। পরের দিন ফরহাদ হোসেনকে ছাড়পত্র দেন চিকিৎসকরা। তবে জীবনকে পাঠানো হয় আইসিইউতে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরেই জীবনের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ ও তার দুই ভাইসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলার পরদিন পুলিশ মামলার আসামি উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদের ভাই আলিম আল রাজীকে গ্রেফতার করে। নলডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর