বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
ভয়েস অব আমেরিকাকে সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নির্বাচন হবে অবাধ নিরপেক্ষ

♦ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ♦ গুম হওয়ারা বিএনপির মিছিল করছে ♦ গণতন্ত্র সুরক্ষায় কঠোর আইন করেছি ♦ নতুন করে রোহিঙ্গা নেওয়া সম্ভব নয় ♦ হত্যা-ক্যু ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা দখল শাস্তিযোগ্য অপরাধ ♦ গণমাধ্যম যা ইচ্ছা বলার স্বাধীনতা পেয়েছে ♦ বন্দিখানায় বসে নোট করতাম ক্ষমতায় গেলে কী উন্নয়ন করব

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন হবে অবাধ নিরপেক্ষ

ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান শতরূপা বড়ুয়াকে সাক্ষাৎকার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার হত্যার পর নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছেন, তারাই নির্বাচন প্রক্রিয়াটা ধ্বংস করেন। আমরা দিনের পর দিন আন্দোলন-সংগ্রাম করে গণতান্ত্রিক ধারাটা আবার ফিরিয়ে এনেছি। মানুষ তার পছন্দমতো লোককেই নির্বাচন করবে। আমরা সেটাই চাই। নির্বাচন প্রক্রিয়া আমরাই উন্নতি করেছি। আমাদের আমলে প্রতিটি নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু হয়েছে। আগামীতেও তাই হবে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। মঙ্গলবার ভয়েস অব আমেরিকার ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা হয়েছে। ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান শতরূপা বড়ুয়া এ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এ সময় বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, মিডিয়ার স্বাধীনতা, আগামী নির্বাচন ও রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন শতরূপা বড়ুয়া। ঘণ্টাব্যাপী এ সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব প্রশ্নের জবাব দেন ও নানা বিষয়ে কথা বলেন। আওয়ামী লীগের শাসনামলের নানা অর্জনও তুলে ধরেন। দীর্ঘ এ সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুন-গুম নিয়ে বিএনপিসহ যারা প্রশ্ন করেন এটা অবান্তর। ‘গুম’ হওয়ারা বিএনপির মিছিল করছে। বর্তমান সরকার গণতন্ত্র সুরক্ষায় কঠোর আইন করেছে। মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের আর নতুন করে নেওয়া সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার মানবাধিকার সুরক্ষায় কাজ করছে। বাংলাদেশে আর কেউ হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা দখল করতে পারবে না। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। দেশের গণমাধ্যম যথেষ্ট পরিমাণ স্বাধীনতা ভোগ করছে। আমি বাংলাদেশকে আরও সামনের দিকে নিয়ে যেতে চাই। ২০০৭ সালে ১/১১ সরকারের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর জেলখানায় বসে দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চান সে পরিকল্পনা করেছিলেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-

ভয়েস অব আমেরিকা : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটিয়েছেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহতি রাখতে কী কী প্রস্তুতি নিচ্ছেন?

প্রধানমন্ত্রী : আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি। এ দেশ একটি প্রদেশ ছিল। স্বাধীনতার পর প্রদেশকে উন্নতি করার জন্য সংবিধান, আইন, নীতিমালাসহ যেসব প্রতিষ্ঠান করা দরকার সবই জাতির পিতা দিয়ে গেলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে জাতির পিতা মূল ভিত্তি সব করে দিয়ে গেলেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট আমার বাবা-মাসহ সবাইকে হত্যা করা হলো। আমরা দুই বোন দেশের বাইরে ছিলাম। ছয় বছর রিফুজি হিসেবে ছিলাম। আমার অবর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাকে যখন সভানেত্রী নির্বাচিত করল, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে আসব। তখন জোর করেই দেশে ফিরলাম। সে সময় মিলিটারি ডিক্টেটর সরকারগুলো আমাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করল। আমি জোর করেই দেশে ফিরি। সারা দেশ আমি ঘুরলাম। রাস্তাঘাট ছিল না। প্রত্যেকটা মানুষ যেন কঙ্কালসার, হাড্ডিসার, মানুষের খাবার নেই। আমি আমার পিতার কাছ থেকে শুনতাম, দেশ স্বাধীন হলে কীভাবে গড়ে তুলবেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ দল হিসেবে আমাদের একটি মেনিফেস্টো আছে। অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করি। ২১ বছর পর যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসি তখন থেকে কাজগুলো বাস্তবায়ন করা শুরু করি। অর্থাৎ মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ, পুষ্টি, চিকিৎসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য চাহিদা পূরণ শুরু করলাম। পাশাপাশি মেয়েরা সব সময় অবহেলিত ছিল। আমি ক্ষমতায় এসে মেয়েদের জন্য কাজ শুরু করলাম। আমার বাবা বলতেন, অর্ধেক অঙ্গকে বাদ দিয়ে কোনো উন্নতি হবে না। আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্সসহ প্রশাসনে যাতে মেয়েরা উচ্চ আসনে যেতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। আমার বাবা কিন্তু পুলিশে মেয়েদের চাকরি দিয়েছিলেন। পাকিস্তান আমলে কিন্তু জুডিশিয়ারিতে আইন ছিল মেয়েরা পরীক্ষা দিতে পারবে না বা চাকরি করতে পারবে না। অর্থাৎ আমার পিতার দেখানো পথগুলো আমি অনুসরণ করেছি। প্রথম পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিলাম। মাঝখানে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। এরপর যারা সরকারে ছিল তারা আমাদের অনেক কাজ বন্ধ করে দেয়। আমি গ্রামভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করি। দ্বিতীয়বার যখন সরকারে আসি, আবার সেই কাজগুলো শুরু করি। আমাদের ভিত্তি ছিল আমাদের কতটা সম্পদ আছে, সক্ষমতা সেটা যথাযথ ব্যবহার করা। তিনি বলেন, ২০০৭ সালে বিএনপি সরকারের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুটপাট, সন্ত্রাসের কারণে দেশে একটা চরম অরাজকতার সৃষ্টি হয়। তখন ইমারজেন্সি ডিক্লেয়ার হয়। দুটি বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা আমাকে গ্রেফতার করে। বন্দিখানায় কেউ নেই। আমি একদম একা একটা বাড়িতে আটকা। আমি সময় নষ্ট করিনি। আমার কেন যেন মনে হলো ঠিক আছে, এ অবস্থা থেকে পরিবর্তন তো একদিন আসবেই। আমরা যদি ক্ষমতায় যাই তাহলে কী করব। আমি ওখানে বসে বসে নোট করা শুরু করি যে, এত সালের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়াব, এত সালের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা দেব, এত সালের মধ্যে স্যানিটেশনের ব্যবস্থা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করব। রাস্তাঘাট কী কী করব, কোন জায়গায় কোন ব্রিজ করতে হবে। এগুলো সমস্ত কিছুর একটা নোট করে রেখে দিলাম। এরপর ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হলো জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ইলেকশন মেনিফেস্টোতে রূপকল্প-২১ অর্থাৎ ২০২১কে লক্ষ্য করে আমাদের পরিকল্পনাটা নিলাম। সেটির ওপর ভিত্তি করেই কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু করলাম। আমাদের উন্নয়নটা কিন্তু নিজেদের পরিকল্পনা নিয়েই কাজ শুরু করি। এর ফলে আমরা আস্তে আস্তে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলাম। আমরা নিজেদের পরিকল্পনা নিয়েই কাজ শুরু করি। আস্তে আস্তে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলাম। ২০০৯ সালে আমরা সরকার গঠন করার পর আবার ২০১৪ সালে নির্বাচন হলো। জনগণ আমাদের কাজে খুশি হয়ে আমাদের আবার ভোট দিল। আমরা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এলাম। আবার একটা সুবিধা হলো ধারাবাহিকতা থাকলে কাজগুলো এগিয়ে নেওয়া যায়। এরপর তৃতীয়বারও যখন নির্বাচন হলো তখন আমাদের ব্যাপকভাবে তারা ভোট দিল এবং আমাদের কাজগুলো আমরা করতে পারলাম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যা লক্ষ্য ছিল দারিদ্র্য বিমোচন করা প্রায় ৪১ শতাংশ থেকে আমরা ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নামালাম। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য আরও বেশি ছিল। আমি তো বলেছিলাম আমরা আরও কমিয়ে অন্তত ১৬-১৭ শতাংশ নামিয়ে নিয়ে আসব দারিদ্র্যের হার। এর মাঝে যেটা হলো করোনাভাইরাস এসে অগ্রযাত্রাটা একটু ব্যাহত করে দিল। সেখান থেকে আমরা যখন আবার একটু উত্তরণ ঘটাতে শুরু করলাম ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ সেটাও আজকে একটা বাধা সৃষ্টি করল।

প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর সরকারের সব উন্নয়ন পরিকল্পনা ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন আর ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন ঘিরে তৈরি ছিল। তিনি বলেন, এ উন্নয়ন পরিকল্পনায় আমরা যেটা সবচেয়ে বেশি করেছি সেটা হলো যত বেশি অর্থ সরবরাহ গ্রামে করা যায় অর্থাৎ গ্রামের মানুষকে তুলে নিয়ে আসা। যেমন যারা গৃহহীন মানুষ, এটা স্বাধীনতার পর আমার বাবা শুরু করেছিলেন যে ভূমিহীন মানুষকে তিনি জমি দেবেন, ঘর করে দেবেন। আমরা সে কাজটা আবার শুরু করলাম।

ভয়েস অব আমেরিকা : কল্যাণমুখী প্রকল্প হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্প। স্বামী-স্ত্রী দুজনই সম্পতির মালিক হচ্ছেন। যেখানে সম্পত্তির ওপরে আইনগত, ধর্মীয়ভাবে নারীদের নানা বাধা ছিল।

প্রধানমন্ত্রী : আমাদের পরিবার রক্ষণশীল পরিবার, এটা বলতে বাধা নেই। কিন্তু আমাদের দাদা বা তাঁর পূর্বে যাঁরা ছিলেন তাঁরা মেয়েদের পড়ালেখা, সম্পত্তিতে অধিকারের বিষয়ে সব সময় সচেতন ছিলেন। এখানে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। ১৯৯৬ সালে সরকারে ছিলাম প্রথম যখন আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভূমিহীনদের ঘর দেওয়া শুরু করলাম, তখন ভূমিহীনরা ঘরটা রাখতে পেতেন না। ধনীরা কিছু টাকাপয়সা দিলে ঘরটা বিক্রি করে দিতেন। আবার কেউ কেউ কাজ না পেয়ে ঘর বিক্রি করে দিতেন। শুধু যে সরকারে আসার পর ঘর দিই তা নয়, আমি ১৯৮১ সালে দেশে আসার পর গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে ভূমিহীনদের আমার পক্ষ থেকে ঘর দিতাম। কিন্তু ঘর দেওয়ার পর দেখলাম ঘর বিক্রি করে দেয়। ১৯৯৭ সালে ব্যারাক হাউসের মাধ্যমে আমি ঘর প্রকল্প শুরু করলাম। সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যখন গেলাম, তখন ৭০ জন মানুষের কোনো ঘরবাড়ি ছিল না। আমি চাচ্ছিলাম ঘর করে দেব। সেখানে কোনো খাস জায়গা ছিল না। আমার ইচ্ছা প্রকাশ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতা এগিয়ে এলেন। তাদের সেখানে জমি ছিল। আমি নেভিকে কাজে লাগালাম। ডিজাইন আমি নিজে করে দিলাম। ঘর দিলাম, ঘর দুজনের নামে থাকবে। নীতিমালা করে দিলাম যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে যেন মেয়েদের অধিকার থাকে। ছেলেরা নতুন ঘর পেলে আবার নতুন করে বউ পেতে চায়। বিয়ে করে আবার চলে যায়। সেজন্য সমান অধিকার দিলাম। এ নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন করেনি। আমাদের ইসলাম ধর্মেও নারীর অধিকার রয়েছে। আমার লক্ষ্য বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন, গৃহহীন থাকবে না। গত দুই টার্মে প্রায় ১০ লাখ পরিবারকে, ভূমিহীন পরিবারকে ঘরবাড়ি দিয়েছি। এতে হিসাব করলে ৩৫ লাখ মানুষকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। শুধু ঘরই নয়, তাদের আর্থিক সাহায্যও করেছি। কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। তাদের উৎপাদিত পণ্য যেন বিক্রি করতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি। একজন যখন নিজের বাড়ি পায়, তাহলে তার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। করোনার সময় মুজিববর্ষ উদ্‌যাপন করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সেভাবে করতে পারিনি। পরে উদ্যোগ নিলাম বড় আকারে ঘর তৈরির। আমি ও ছোট বোন আমরা যেটুকু সম্পদ পেয়েছিলাম, তা দিয়ে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট করি। সেখান থেকে ছাত্রদের বৃত্তিইদই। আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের সাহায্য-সহযোগিতা করি। আমাদের ট্রাস্ট থেকে ৫ কোটি টাকা দিয়ে ফান্ড গঠন করি। এরপর অনেকেই এগিয়ে আসেন। আমরা ঘর তৈরি শুরু করি। এখন আরও ৫৬ হাজার ঘর তৈরি হচ্ছে। এটা তৈরি হলে আমি বলতে পারব, আমার দেশের কেউ ভূমিহীন, গৃহহীন নেই। এবারও বন্যা, নদী ভাঙনে কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রত্যেকটা ঘরের সঙ্গে সবজি লাগিয়েছে। অনেকেই আমাকে সবজি, লাউ, হাঁস উপহার পাঠিয়েছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, বেদে সম্প্রদায়, কুষ্ঠরোগীদের ঘর দিয়েছি। রাঙাবালি এলাকার ভাসমান বেদে সম্প্রদায়ের মানুষকে ঘর দিয়েছি। এখানে ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সকল মানুষ বাস করছে। এ ছাড়া কক্সবাজারে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ফ্ল্যাট করে দিচ্ছি। শুঁটকি বাজার তৈরি করছি। সমাজের যত ধরনের অবহেলিত মানুষ ছিল তাদের খুঁজে খুঁজে বের ফ্ল্যাট করে দিয়েছি। বস্তিবাসীকে ফ্ল্যাট করে দিয়েছি। ঘরগুলোর পাশে স্কুল, চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাতৃমৃত্যু হার কমিয়েছি, শিশুমৃত্যু হার কমিয়েছি। খাবারের নিশ্চয়তা দিচ্ছি। ১৫ টাকা কেজিতে যেন চাল কিনতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রায় ১ কোটি পরিবারকে কার্ড করে দিয়েছি যাতে অল্প দামে চাল-ডাল কিনতে পারে।

ভয়েস অব আমেরিকা : আপনি বাংলাদেশে ৯ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছেন, এটা আপনার মানবিক আচরণ সারা বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেছেন আর কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হবে না।

প্রধানমন্ত্রী : ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের হানাদাররা যেভাবে বাঙালিদের নির্যাতন করেছে, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, মেয়েদের ধর্ষণ করেছে, একইভাবে রোহিঙ্গারাও নির্যাতিত হয়েছে। ’৭১-এ ১ কোটি বাঙালি ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল শরণার্থী হয়ে। আমরা এ কষ্ট উপলব্ধি করি। এ মানুষগুলো যখন কষ্ট পাচ্ছিল, তখন সেই চিন্তা করে আমরা আশ্রয় দিয়েছি। রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখে আমরাও তাদের মানবিক কারণেই আশ্রয় দিয়েছি। আমার ছোটবোন রেহানা আমাকে প্রশ্ন করেছে, তুমি ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াও, কয়েক হাজার রোহিঙ্গার দায়িত্ব নিতে পারবে না? আমরা আমাদের সাধ্যমতো তাদের দায়িত্ব নিয়েছি। পরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনও এগিয়ে এসেছে। তখনই আমি বলেছিলাম, প্রয়োজনে এক বেলা খাব, অন্য বেলা না খেয়ে রোহিঙ্গাদের খাওয়াব। আমার দেশের লোকজন, দলের নেতা-কর্মীরা এগিয়ে এলো। পরে বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা এগিয়ে গেল। করোনার সময় তাদের ভ্যাকসিন দিলাম। কত দিন রিফুজি থাকবে? আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দাবি জানালাম, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে ব্যবস্থা করুন। আর কত দিন তাদের পালন করব? কক্সবাজার এলাকায় পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। যেখানে ঘন বন ছিল সেখানে গাছও নেই। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, তাদের থাকার অবস্থা, চাষ উপযুক্ত জমি নষ্ট হচ্ছে। তাদের তো ক্যাম্প করে রাখতে হচ্ছে। আর বেশি রোহিঙ্গা নেওয়া সম্ভব নয়। করোনায় অর্থনীতিতে চাপ পড়ল। এরপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। চাপ তো সামলাতে পারতে হবে। আমাদের অর্থনৈতিক ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। এখন মিয়ানমারে নানা রকমের গন্ডগোল চলছে। সে কারণে আমরা বলেছি আর রোহিঙ্গা ধারণ করা সম্ভব নয়। দেশেরও তো একটা ধারণক্ষমতা থাকতে হবে। আরেকটি কথা, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্র, মাদক ব্যবসা শুরু হয়েছে। নিজেদের মধ্যে মারামারি শুরু করেছে। তাদের শিশু-কিশোররা বড় হতে শুরু করেছে। সেটা ভাবতে হবে। এত লোককে খাওয়ানোর দায়িত্ব সম্ভব নয়। স্থানীয় লোকগুলোরও তো সমস্যা হচ্ছে।

তবে বাংলাদেশ কেন আর কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেবে না- এ প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। আমাদের নানা সংকট রয়েছে। রোহিঙ্গারা যখন এসেছে তখন তাদের ৪০ হাজার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা ছিল। আমরা তাদের চিকিৎসা ও সন্তান জন্ম দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এতে রোহিঙ্গাদের জনসংখ্যা আরও বেড়েছে। করোনার সময় আমরা রোহিঙ্গাদের ভ্যাকসিনও দিয়েছি। কিন্তু দিনশেষে আমাদেরও তো সীমাবদ্ধতা আছে। বনভূমি উজাড় করে তাদের বাসস্থান তৈরি করতে গিয়ে পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ চাপ সামলানো আমাদের জন্য এক প্রকার বোঝা, তাই আমরা বলেছি এখন বিভিন্ন সংস্থা এগিয়ে এসে রোহিঙ্গাদের নিজের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে।

ভয়েস অব আমেরিকা : তরুণদের আন্দোলনের ফলে কোটা তুলে দেওয়া হচ্ছে, এর ফলে সমাজে সংখ্যালঘু, নারীরা আছে, তারা অসম প্রতিযোগিতায় পড়ে যাচ্ছে-এ সমস্যা সমাধানে সরকারের কোনো পরিকল্পনা আছে কী?

প্রধানমন্ত্রী : স্বাধীনতার পর আমার বাবা যেটা করেছিলেন একটা শ্রেণির নারীরা যারা পাকিস্তানি বাহিনী, দেশীয় দালাল-আল বদর বাহিনীর অত্যাচারিত নারীদের সম্মানজনক সুবিধা দিতে বীরাঙ্গনা উপাধি দেন। পাশাপাশি জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করেছিলেন। পাশাপাশি নারীদের জন্য কোটা সৃষ্টি করলেন। দুর্ভাগ্য, আমাদের ছাত্র সমাজ কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার জন্য রাস্তায় নেমে পড়ল, বিশেষ করে নারীরাও মাঠে নামলেন। মেয়েরাও বললেন, তারা কোটা চান না। তাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিয়ে যাচ্ছি, প্রতিবন্ধীদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। চাকরি ক্ষেত্রে তারা যেন সুবিধা পায় তা করা হচ্ছে। চাকরি ক্ষেত্রে মেয়েরাও ভালো করছে।

ভয়েস অব আমেরিকা : গুয়াতেমালা সংবিধান অনুযায়ী সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা কোনো ব্যক্তি সে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। সেই সঙ্গে রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় যেমন- ছেলে-মেয়েরা কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। বাংলাদেশে সে ধরনের আইন করার কথা ভেবেছেন কী? 

প্রধানমন্ত্রী : বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছর পর স্বৈরশাসকরা এসে ক্ষমতা দখল করে নেয়। জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডে যে গোষ্ঠী জড়িত ছিল তারা জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান বানিয়েছে। একদিকে সেনাপ্রধান, অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে সংবিধান ও মিলেটারি রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন ভায়োলেট করল। সবকিছু ভঙ্গ করে ক্ষমতা দখল করল। জিয়া নিহত হলো। এরপর এলো এরশাদ। আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছিলাম স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে। তবে স্বৈরাচারের পতনের পরও সেবার সুষ্ঠু নির্বাচন হলো না। প্রশাসন, সেনা, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সব দফতরে স্বৈরশাসকদের সময়কার লোকজন প্রভাব বিস্তার করে থাকায় নির্বাচনের ফলাফলে কোনো দলই মেজরিটি পায়নি। পরে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এলো। অর্থাৎ সেই ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্টে রয়ে গেল। আমরা ২০০৮-এর নির্বাচনের পর থেকে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭-এ লেখা আছে, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। আমরা সেখানে আরেকটা ধারা যুক্ত করেছি। কেউ যদি এভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিকে হটায়, জোর করে ক্ষমতা থেকে হটায়, এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এটাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে আমরা গণতন্ত্রকে প্রটেকশন করলাম। প্রয়োজনে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট হবে।

ভয়েস অব আমেরিকা : একটা অভিযোগ করা হয়ে থাকে যে, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের অপপ্রয়োগের ফলে বাংলাদেশে এক ধরনের ভয়ের সংস্কৃতি চালু হয়েছে, যার ফলে মিডিয়াগুলো ব্যাপক সেলফ সেন্সরশিপ চর্চা করছে।

প্র্রধানমন্ত্রী : ১৯৯৬ সালে যখন আমি ক্ষমতায় আসি তখন দেশে একটিমাত্র টেলিভিশন, একটি রেডিও ও সামান্য কয়েকটি পত্রিকা ছিল। আমি সরকারে আসার পর গণমাধ্যমে বেসরকারি খাতের অন্তর্ভুক্তি উন্মুক্ত করে দিলাম। টেলিফোন ছিল এনালগ। সেটাকে ডিজিটাল করলাম। মোবাইল ফোন চালু করলাম। কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা করলাম। ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা আমরাই করেছি। এখন দেশে ৪৪টি টেলিভিশনের অনুমোদন আছে এবং ৩২টি চালু আছে, এসব চ্যানেলে টকশোতে বক্তারা সরকারের বিভিন্ন সমালোচনা করছেন। তারা সারা দিন কথা বলেন। সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে নানা কথা বলছেন তারা। সব কথা বলার পর কেউ যদি বলে যে আমাকে কথা বলতে দিল না, তার কী জবাব আছে? একসময় দেশে প্রতি রাতে কারফিউ জারি করা হতো, মানুষ রাস্তায় বের হতে পারত না। জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতা দখল করল, প্রতি রাতে ১১টা থেকে ভোর পর্যন্ত কারফিউ থাকত। একটা কথা প্রচলিত ছিল, সাদা মাইক্রোবাস কাউকে তুলে নিলে আর খুঁজে পাওয়া যেত না। বাংলাদেশে ১৯ বার ক্যু হয়েছে, আরও কয়েকবার ক্যু-এর চেষ্টা করা হয়েছে। সে সময় মানুষ কথা বলতে পারত না। মত প্রকাশের অধিকার ছিল না। এখন মানুষ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারে। প্রতিবাদ করার সাহস পেত না।

ভয়েস অব আমেরিকা : বিএনপি আগামী নির্বাচনের আগে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি করছে-এ প্রসঙ্গে আপনার ভাবনা কী?

প্রধানমন্ত্রী : বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন একটি নির্বাচনের আয়োজন করেছিল, তখন ১ কোটি ভুয়া ভোটার তৈরি করে। তখন কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান হওয়ার জন্য তাদের মনমতো লোক যেন প্রধান উপদেষ্টা হতে পারে সেজন্য আইন সংশোধন করল। যার ফলে মানুষ কিন্তু ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট করল। ৩০ মার্চ আন্দোলনের ফলে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। তাদের আমলে প্রচলন ছিল ১০টি হুণ্ডা, ২০টি গুণ্ডা, নির্বাচন ঠাণ্ডা। আমাদের আমলে ভোটের সময় স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স তৈরি করলাম। কেউ ভোটটা দিলে যেন দেখা যায়। আমার কথা হচ্ছে, মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দেবে। ভোটের মাধ্যমে সরকার পছন্দ করবে। আমার কাজের মাধ্যমে কেউ ভোট দিলে সরকার গঠন করব, না দিলে নাই। আমরা যখন ভোটের জন্য আন্দোলন করেছিলাম, তখন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, শিশু আর পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তারা আবার সেই দাবি করছে। আমরা একটা আইন করেছি, নির্বাচন কমিশন আইনের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে। আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল। আমরা সেটাকে স্বাধীন করে দিয়েছি। নির্বাচন যেন সুষ্ঠুভাবে করতে পারে সেজন্য সব ব্যবস্থা করেছি। তাহলে এখন কেন এসব দাবি করা হচ্ছে। আর আমরা তো টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার ফলে দেশ তো পিছিয়ে যায়নি। এখন তো আর ভিক্ষা চেয়ে মানুষ ঘুরে বেড়ায় না। সবার পরার ভালো কাপড় আছে।  মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করে দিচ্ছি। মিলিটারি ডিক্টেটরদের হাতে গড়া দল বিএনপি-জাতীয় পার্টি। যে পার্টি প্রধান সেনা অফিসার থেকে অবৈধভাবে, অস্ত্রের মুখে ক্ষমতায় এসেছে, তারপর দল গঠন করেছে। সেসব দল তো গণতন্ত্র পছন্দ করবে না- এটাই স্বাভাবিক। কারণ তারা মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিশতে অভ্যস্ত না। ভোট চুরি করেই ক্ষমতায়, জোর করে ক্ষমতায় আসতে অভ্যস্ত।

ভয়েস অব আমেরিকা : বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশেষ করে খুন, গুম নিয়ে যে অভিযোগ আছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশন যখন বাংলাদেশে সফর করেছেন, তখন একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি করেছেন- এ ব্যাপারে আপনার সরকারের পরিকল্পনা কী?

প্রধানমন্ত্রী : বাংলাদেশে কিন্তু স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন আছে। তারা কিন্তু তদন্ত করছে। মানবাধিকার কমিশন কিন্তু তদন্ত করছে। অনেক কথা বলার পর, যখন আমরা তালিকা চাইলাম, তখন ৭০ জনের একটি তালিকা দেওয়া হলো। সেখানে দেখা গেল বেশির ভাগই বিএনপির অ্যাকটিভিস্ট, তারা মিছিল করছে। অনেকে ব্যক্তিগত কারণে ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না, এ জন্য নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। মারা গেছে এমন সাতজনের তথ্য পাওয়া গেছে। যেখানে কোনো রকম অন্যায় হচ্ছে, আইনসম্মতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ দেশেই জিয়ার আমলে শত শত এয়ারফোর্স, আর্মি অফিসার, সৈনিক, নৌবাহিনীর অফিসার, আওয়ামী লীগের শত শত নেতা-কর্মী গুম, খুন হয়েছে। তাদের লাশও পাওয়া যায়নি। বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। তাদের কী অপরাধ ছিল? এ কথাগুলো যারা বলে তাদের আমলে কী হয়েছে? এটা একটা অপবাদ দেওয়া ছাড়া কিছুই না। আমাদের আমলে যারাই অপরাধ করে সে যেই হোক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমরা মানবাধিকার লঙ্ঘন না, মানবাধিকার সংরক্ষণ করেছি।

ভয়েস অব আমেরিকা : আপনি শিল্প-সাতিহ্য অনুরাগী, সাম্প্রতিক সময়ে আপনার পড়া বইগুলো যেটাকে দাগ কেটেছে সেটা নিয়ে যদি কিছু বলেন?

প্রধানমন্ত্রী : আমার বাবার বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সাল থেকে ’৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা যে রিপোর্ট করেছিল, সেটা প্রথম মেয়াদে সংগ্রহ করি। আমার এক বান্ধবী কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক বেবি মওদুদসহ এগুলো সংগ্রহ করি। সেটা আমার সম্পাদনায় প্রকাশ করছি। সেজন্য পুলিশের এসবির একটি ২০ জনের টিম গঠন করে দিই। ইতোমধ্যে ১১ খণ্ড বের হয়েছে। ১৪ খণ্ড বের হবে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে কোনো গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে কোনো রিপোর্ট বের হয়নি। আমি অনেক বই লিখেছি, বাংলা একাডেমির ফেলো হিসেবে সম্পাদনা করেছি। মুজিববর্ষে যত প্রকাশনা আমি এডিট করেছি। বিশেষ করে আমার বাবার ওপরে লেখা বইগুলো আমি এডিট করে দিয়েছি। পৃথিবীতে আমার কাছে এটা সবচেয়ে বড় কাজ। যা কেউ করেনি। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা জাতির পিতার বিরুদ্ধে যে রিপোর্ট করেছিল, সেটা প্রকাশ করে দিয়েছি। আমাদের সংগ্রাম, ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। কারণ ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর তাঁর নাম মুছে ফেলা হয়েছিল।

ভয়েস অব আমেরিকা : বাংলাদেশকে নিয়ে আপনার উচ্চাকাক্সক্ষা কী?

প্রধানমন্ত্রী : বাংলাদেশকে আমি আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। কারণ আমি যে কাজই করেছি এডহক বেসিসে করিনি। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা একটা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করলাম। তার ভিত্তিতে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা করে এগোচ্ছিলাম। উন্নত দেশ হিসেবে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব তা ২০২১-২০৪১ সালের প্রেক্ষিত বাস্তবায়নে মাথায় রেখে পরিকল্পনা নিয়েছি। পাঁচ বছর মেয়াদি কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ একটি ব-দ্বীপ। জলবায়ু অভিঘাত থেকে মানুষ যেন রক্ষা পায় সেদিক লক্ষ্য রেখে ডেল্টা প্লান ২১০০ করেছি। আমি কাঠামোটা দিয়ে যাচ্ছি। কতদিন বাঁচব তা জানি না। স্কুল জীবন থেকে রাজনীতির যে ধারাবাহিকতা, উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ব। শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। মানুষের জীবন সুন্দর হয়েছে। আমাদের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ ছিল পদ্মা সেতু। আন্তর্জাতিক একটি চক্রান্তে আমাদের ওপর মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছিল। কারও সাহায্য না নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করেছি। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা বদলে যাবে। যে পরিকল্পনা করে দিয়ে গেলাম, তাতে অন্তত কেউ যদি দেশটাকে সঠিকভাবে পরিচালনা করে তাহলে অবশ্যই সঠিকভাবেই গড়ে উঠবে।

 

সর্বশেষ খবর