প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পরিস্থিতির কারণে আমাদের একটু সাশ্রয়ী হতে হচ্ছে। তার মানে এই নয়, দেশের মানুষ বিদ্যুৎ পাবে না। মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে, পাবে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের মিতব্যয়ী হতে হচ্ছে।’
গতকাল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল (পারমাণবিক চুল্লি) বসানোর কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে ওই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
বর্তমান পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বে আবার একটি যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। তার ওপরে আবার নিষেধাজ্ঞা। এ কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। আমরা আশা করি, পৃথিবীর মানুষ এই অবস্থা থেকে দ্রুত মুক্তি পাবে।’ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব জিয়াউল হাসান স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর একটি ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়।স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরের মধ্যে রূপপুর প্রকল্পই দেশের সবচেয়ে বড় ব্যয়বহুল প্রকল্প। এর কাজ সম্পন্ন হলে, বাংলাদেশ হবে পারমাণবিক জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অধিকারী বিশ্বের ৩৩তম দেশ। এর আগে গত বছরের ১০ অক্টোবর প্রথম ইউনিটের রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুরো দেশকে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করতে পেরেছি। কিন্তু বিশ্বে কভিড, যুদ্ধাবস্থা ও মূল্যস্ফীতির কারণে উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। তারাও প্রতিটি বিষয়ে সাশ্রয়ের দিকে নজর দিয়েছে। আমরাও সেই দিক থেকে পিছিয়ে নেই। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে তা অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব হবে। আর পরিবেশবান্ধব এই বিদ্যুতে বাড়বে উত্তরাঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান। আগামী ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল যে, সবার জন্য আমরা বিদ্যুৎ দেব। আমরা আমাদের কথা রেখেছি। বাংলাদেশের প্রত্যেক ঘরে ঘরে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছাতে পেরেছি এবং আমরা বাংলাদেশকে আলোকিত করতে পেরেছি। শেখ হাসিনা বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের মিতব্যয়ী হতে হচ্ছে। আমরা বাধ্য হচ্ছি বর্তমান পরিস্থিতির কারণে। কারণ যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে, তার ওপর স্যাংশন। এই স্যাংশন দেওয়ার ফলে আরও বেশি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমি আশা করি, পৃথিবী এ রকম একটা অবস্থা থেকে খুব দ্রুত মুক্তি পাবে। তিনি বলেন, আমরা চাই, আমাদের দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি। সে জন্য আমরা যেমন একদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সেটা গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে দিচ্ছি, পাশাপাশি আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নয়ন করছি। বিশেষ করে রূপপুর পাওয়ার প্রজেক্ট থেকে যে বিদ্যুৎ আসবে, আমাদের উত্তরবঙ্গের মানুষ; যেখানে চিরদিন মঙ্গা-দুর্ভিক্ষ লেগে থাকত, আশ্বিন-কার্তিক মাস এলেই সেখানে দুর্ভিক্ষ হতো, এখন সেগুলো আমরা দুর্ভিক্ষমুক্ত করতে পেরেছি। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র যখন বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে তখন সেখানে মানুষের আরও সুযোগ সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের। আর্থ-সামাজিক আরও উন্নতি হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এ কাজগুলো করে যাচ্ছি। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ বলেন, আজ আমরা রূপপুর প্রকল্পের একটি মাইলস্টোন অর্জন করার সময়ে উপস্থিত হয়েছি। দ্বিতীয় ইউনিটের রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফলক। বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সব বাধ্যবাধকতা রোসাটম পূরণ করছে। আমরা আগামী বছর ফ্রেশ পারমাণবিক জ্বালানির প্রথম ব্যাচ আনার জন্য নিরলসভাবে চেষ্টা করছি। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যে বিশেষজ্ঞরা কাজ করবেন তাদের আমরা এরই মধ্যে প্রস্তুত করেছি। আমরা এরই মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন করেছি।