শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যেই আজ রংপুরে বিএনপির সমাবেশ

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের হুঁশিয়ারি

প্রতিদিন ডেস্ক

পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যে আজ রংপুরে বিভাগীয় গণসমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে গতকালই দলীয় নেতা-কর্মীরা রংপুরে এসে অবস্থান নেন। এদিকে জেলা মোটর মালিক সমিতির ডাকা পরিবহন ধর্মঘটের কারণে আন্তজেলা ও দূরপাল্লার সব ধরনের বাস, ট্রাক, পিকআপ চলাচল বন্ধ রয়েছে।

গণসমাবেশ সম্পর্কে রংপুর থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, রংপুরে বিএনপির গণসমাবেশ হবে আজ বিকালে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে। সমাবেশে অংশগ্রহণ করার জন্য বৃহস্পতিবার রাত থেকেই নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন জেলা থেকে এসে নগরীর বিভিন্ন স্থানে এবং সমাবেশস্থলে অবস্থান করেন। এদিকে গতকাল দুপুরে দলীয় কার্যালয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিয়েছে, কোনো প্রকার বিচ্ছৃঙ্খলা করা হলে কঠোরভাবে তা প্রতিহত করা হবে। আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনকে কাউন্টার করে বিকালে সমাবেশস্থলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তারা এ সময় অভিযোগ করেন, দলের নেতা-কর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।  সংবাদ সম্মেলনে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়ার রহমান সফি অভিযোগ করে বলেন, রংপুরে আওয়ামী লীগের বিলবোর্ডের ওপর গণসমাবেশের বিলবোর্ড টাঙিয়েছে, যা একটি দলের প্রতি আরেকটি দলের প্রতিহিংসামূলক আচরণ। অবিলম্বে তাদের ব্যানার সরিয়ে নেওয়া না হলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের  নেতা-কর্মীরা বিএনপির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। গণসমাবেশের নামে নগরীতে বিচ্ছৃঙ্খলার চেষ্টা করা হলে তা প্রতিহত করা হবে। আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনের কয়েক ঘণ্টা পরই সমাবেশস্থলে বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, সমাবেশে নেতা-কর্মীরা অমানবিক কষ্ট করেছেন। অথচ প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগ হুমকি ধমকি দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে হুমকি দিচ্ছেন। আর যারা পরিবহন ধর্মঘট দিয়েছেন আমরা ক্ষমতায় গেলে করায় গন্ডায় এর হিসাব  নেব। তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্র উদ্ধার, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, জনগণের দাবি নিয়ে সারা দেশে যে গণসমাবেশ শুরু হয়েছে, তাতেই আওয়ামী লীগ সরকারের ভয় ধরে গেছে। সমাবেশে নেতা-কর্মীদের আসতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে। কিন্তু এসব আমাদের সমাবেশে কোনো বাধা হতে পারবে না, মানুষের জোয়ার আসা শুরু হয়েছে। জনগণ জেগে উঠেছে, তারা তাদের অধিকার আদায়ে এখন সোচ্চার, তাই জনগণের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জনগণ আর ঘরে ফিরবে না। এদিকে মালিক সমিতির ডাকা পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সকালে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ের মডার্ন মোড়, কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট মহাসড়কের মাহিগঞ্জ সাতমাথা, দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়-নীলফামারী মহাসড়কের মেডিকেল  মোড়, নগরীর কামারপাড়া ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মহাসড়কে কোনো যাত্রীবাহী বাস চলছে না। এমনকি কোনো ট্রাক কিংবা পিকআপও চলাচল করছে না। বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, যাত্রীরা কোনো গাড়ি না ছাড়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন। বিকল্প উপায় হিসেবে তাদের অনেকেই অটোরিকশা নিয়ে স্বল্প দূরত্বে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, রংপুর বিভাগীয় সমাবেশে যোগদানের জন্য পঞ্চগড়ের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আগে থেকেই দলে দলে যাত্রা শুরু করেন। সমাবেশের দুই দিন আগে থেকেই তারা রওনা দেন। এরই মধ্যে অনেকে পৌঁছে গেছেন। সেখানেই তারা অবস্থান করছেন। অনেকে বৃহস্পতিবার রাত থেকে রওনা দেন। বৃহস্পতিবার রাতে জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে সভাস্থলে যাওয়ার এবং অবস্থান নিয়ে নানা পরামর্শ দেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। এ সময় নেতা-কর্মীরা জানান, চাল, চিঁড়া আর গুড় নিয়ে তারা যেন সমাবেশে যোগদানের জন্য রওনা দেন। এদিকে রংপুরে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে গতকাল সকাল থেকে পঞ্চগড়-রংপুর সরাসরি রুটে বিআরটিসিসহ সব বাস বন্ধ থাকে। তবে অন্যান্য রুটে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। আন্তজেলার ছয়টি রুটে বাস মিনিবাসসহ সব ধরনের যানবাহন চলছে। মোটর মালিক সমিতি ও পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা জানান, পঞ্চগড় থেকে রংপুর-বগুড়াসহ বিভিন্ন রুটে ৩০ থেকে ৩২টি বিআরটিসির গাড়ি নিয়মিত চলাচল করে।

রংপুরে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে এসব গাড়ি গতকাল সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। পঞ্চগড়-রংপুর রুটে বিআরটিসি ছাড়াও অন্য যানবাহনও চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে রংপুর যাতায়াতকারী যাত্রীরা পঞ্চগড়-দিনাজপুর রুটের দশ মাইল এলাকা পর্যন্ত যাতায়াত করছেন। পঞ্চগড় থেকে দিনাজপুর গেটলক বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। দশ মাইল থেকে তারা তাদের মতো করে সৈয়দপুর এবং রংপুর যাতায়াত করছেন।

সর্বশেষ খবর