প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী আসন্ন বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ ও খাদ্য সংকট মোকাবিলায় খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থাও বলছে, বিশ্বে আগামীতে খাদ্যাভাব ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। সে অবস্থায় বাংলাদেশকে এর থেকে মুক্ত রাখতে হলে আমাদের প্রতি ইঞ্চি জমি যেমন আবাদ করতে হবে, তেমনি খাদ্য পণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। সেক্ষেত্রে আমি আমাদের যুবসমাজকে আহ্বান করব যেন আরও উদ্যোগ নেন।’ গতকাল সকালে ‘জাতীয় যুব দিবস-২০২২’ উদ্বোধন এবং ‘জাতীয় যুব পুরস্কার-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মেসবাহ উদ্দিন ও যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আজহারুল ইসলাম খানও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ‘জাতীয় যুব পুরস্কার-২০২২’ বিজয়ী ২১ জনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। পুরস্কার হিসেবে একটি ক্রেস্ট, সনদ এবং নির্দিষ্ট মূল্যমানের চেক প্রদান করা হয়। পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে মো. জাকির হোসেন এবং রীতা জেসমিন অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় যুব দিবসের একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি এবং এর থিম সংও পরিবেশিত হয়। প্রতি বছর ১ নভেম্বর জাতীয় যুব দিবস পালিত হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘প্রশিক্ষিত যুব উন্নত দেশ : বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যার যার এলাকা ভিত্তিকও কাজ করতে পারেন। কেননা খাদ্য পণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে আমরা যেমন নিজেদের চাহিদা মেটাতে পারব, তেমনি অনেক দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশকে সহায়তা করতে পারব। আমাদের মাটি উর্বর আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমাদের জনশক্তি, সেই জনশক্তিকেই আমাদের কাজে লাগাতে হবে। যুবকদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির দিকেই তাঁর সরকারের দৃষ্টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের মাঝে নেতৃত্বের যে গুণাবলি ও প্রতিভা আছে তা যেন বিকশিত হয় এবং তাদের কর্মক্ষতা যেন দেশের কাজে লাগে সেজন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর সরকার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতি জেলা-উপজেলায় যুব কাউন্সিল গঠন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা যেন কাজ করতে পারে এবং দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কারণ একটি প্রশিক্ষিত যুবশ্রেণি গড়ে তোলা একান্তভাবে অপরিহার্য। তবে আমাদের দেশে এখন কত প্রশিক্ষিত যুবশ্রেণি রয়েছে তার একটি ডাটাবেজ তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা হলে বোঝা যাবে কারা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে এবং কারা এর বাইরে রয়েছে। তাদেরও তাঁর সরকার কর্মসংস্থানের আওতায় আনতে প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তিই আমাদের যুবসমাজ। আর আজকে পৃথিবীর অনেক দেশই বয়োবৃদ্ধের দেশ হয়ে গেছে। এখনো বাংলাদেশের একটা বিরাট কর্মক্ষম যুবসমাজ রয়ে গেছে, যেটা আমাদের কাজে লাগাতে হবে। তিনি ৬৪টি জেলায় ৬৪ হাজার যুবক-যুবতীকে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনে ঋণ দেওয়ার জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের প্রশংসা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি এই উদ্যোগটি সময়োপযোগী। বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দেশকে বাঁচাতে পারব, যদি আমরা বায়োগ্যাস প্লান্ট এবং সৌরশক্তি স্থাপন করতে পারি’। শেখ হাসিনা বলেন, যুবকদের কর্মসংস্থানে আমরা সমগ্র বাংলাদেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। কাজ কোনোটাই ছোট নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে কোনো কাজ করে নিজের অর্থ নিজে উপার্জন করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোটা অত্যন্ত গর্বের বিষয়। কারণ কোনো কাজকে আমরা ছোট করে দেখি না। কোনো কাজকে আমরা ছোট করে দেখব না। করোনার সময় ছাত্রদের আহ্বান জানালে তারা কৃষকদের ধান কেটে দিয়েছে যা অত্যন্ত গর্বের বিষয় উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ঠিক এভাবেই যুবসমাজ যে কোনো কাজ করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখবে, যা আমাদের দেশকে উন্নত করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবকদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে চাই। আর সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই সারা দেশে আমরা হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, বিশেষায়িত ল্যাব, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছি, যেখানে আমাদের যুবসমাজ প্রশিক্ষণ নিতে পারে। কারণ আমি বিশ্বাস করি আমাদের যুবসমাজ মেধাবী এবং তারা সব কাজেই পারদর্শিতা দেখাতে পারবে। ২০০৮-এর নির্বাচনী ইশতেহারে ‘রূপকল্প-২১’ এর মাধ্যমে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা তাঁর সরকারের একটি লক্ষ্য ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মাঝে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি এবং উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি। আর এই মর্যাদা ধরে রেখেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে সেজন্য সরকার ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা আমাদের দেশ দিয়ে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাতেই আমাদের এদেশকে গড়ে তুলতে হবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালে আমাদের যুবকরাই হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল। যার যা কিছু ছিল তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করেই আমাদের জন্য বিজয় অর্জন করেছে। সেই বিজয়ী জাতি হিসেবে আমাদের সবসময় মাথা উঁচু করে চলতে হবে। তিনি বলেন, কারও কাছে হাত পেতে নয়, আমরা নিজের দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করব নিজের শক্তি, মেধা সম্পদ দিয়ে। এই চিন্তা আমাদের যুবকদের মাঝে সবসময় থাকতে হবে। এটা সম্ভব হলেই জাতির পিতার ভাষায় ‘বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।’
শিরোনাম
- পরকীয়া প্রেমিকা ও তার স্বামীর হাতে খুন হলেন প্রেমিক!
- ঢামেকের সামনের ফুটপাতে মিলল বৃদ্ধার মরদেহ
- হোয়াটসঅ্যাপে নতুন ফিচার, স্ক্যান করে পাঠানো যাবে নথিপত্র
- যাত্রাবাড়ী থেকে হত্যা মামলার দুই আসামি গ্রেফতার
- ২ ঘণ্টা পর টিকাটুলির ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে
- দাঁড়িয়ে থাকা বোয়িং বিমানে আঘাত করলো লাগেজ ট্রলি
- শরীরে ‘ইসলামিক’ ট্যাটু করা কি জায়েজ
- খেলাধুলার মানোন্নয়নে ক্রীড়া সাংবাদিকতার ভূমিকা
- পর্যটনের স্বপ্ন ফাইলেই বন্দি
- স্বস্তির জয়ে ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ আটের মঞ্চে রিয়াল
- উড্ডয়নের ৭ মিনিট পরই বিধ্বস্ত বিমান, নিহত ৬
- ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
- ভরপেট খেলেও মোটা হবেন না, জানুন কোন খাবারগুলো নিরাপদ
- দাম কমলো ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের, আজ থেকেই কার্যকর নতুন প্যাকেজ
- টিএসসিতে রিকশার ভেতরেই মিলল চালকের মরদেহ
- চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার জাকির হোসেন বরখাস্ত
- ১৯৭৩ সালের পর ডলারের সবচেয়ে বড় পতন: সংকটে যুক্তরাষ্ট্র
- প্রেমে ব্যর্থ হলে বাথরুম পরিষ্কার করেন যে অভিনেতা
- কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নতুন নির্দেশনা
- ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু