শুক্রবার, ৪ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দুই দিন বিচ্ছিন্ন থাকবে বরিশাল

♦ আগেই অবস্থান নিয়েছেন নেতা-কর্মীরা ♦ কাল বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

সড়ক এবং নৌপথে আজ ও আগামীকাল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে বরিশাল। বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে এ দুই দিন বাস ও থ্রি-হুইলার বন্ধের পর এবার ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে লঞ্চ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মালিকদের। এর ফলে বরিশাল কার্যত দুই দিন ‘অবরুদ্ধ’ থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে সব বাধা উপেক্ষা করে বরিশালে স্মরণকালের বৃহৎ গণসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে মহানগর বিএনপি। গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতেই বাস ও থ্রি-হুইলারের পর লঞ্চ চলাচলও বন্ধ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। তবে আওয়ামী লীগ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এদিকে গণসমাবেশের কয়েকদিন আগেই বরিশালে অবস্থান নিয়েছেন প্রত্যন্ত এলাকার বিএনপি    নেতা-কর্মীরা। আত্মীয়স্বজনের বাসা, মসজিদ এমনকি খোলা মাঠেও রাতযাপন করছেন তারা। গতকাল সকালে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে সমাবেশস্থল এলাকায় বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা কয়েক শ নেতা-কর্মীকে দেখা গেছে। তাদের একজন ভোলা সদর উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মো. মাইনুদ্দিন বলেন, তারা লঞ্চ-বাস বন্ধ করে দিয়েছে। বিভাগীয় গণসমাবেশে উপস্থিত থাকার জন্য কৃষক দলের কয়েক শ নেতা-কর্মী নিয়ে মঙ্গলবার বরিশালে এসেছেন তারা। লঞ্চে নিজেরা রান্নাবান্না করে খাচ্ছেন। বরগুনা জেলা যুবদলের সহপ্রচার সম্পাদক শাকিবুল হাসান সুমন বলেন, সরকারি দল হরতাল (লঞ্চ-বাস বন্ধ) দিয়েছে। এ কারণে নেতা-কর্মীদের নিয়ে গতকাল বরিশালে এসেছেন তারা। এদিকে পটুয়াখালীর সব রুটে বুধবার মধ্যরাত থেকে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিএনপির দাবি, সমাবেশ বানচাল করতেই এ ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

আগামীকাল বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিভাগীয় গণসমাবেশ করার লক্ষ্যে এক মাসের বেশি সময় ধরে রাজপথে সক্রিয় বিএনপি। কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা ও মহানগরে, জেলা নেতারা উপজেলায় এবং উপজেলা নেতারা ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রচার চালাচ্ছেন। বিএনপি নেতাদের দাবি, স্মরণকালের বৃহৎ জনসমাগম হবে আগামীকাল। এ অবস্থায় ২৬ অক্টোবর পুরনো বিভিন্ন ইস্যু সামনে এনে ৪ ও ৫ নভেম্বর দক্ষিণাঞ্চলের সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় বাস মালিক সমিতির দুটি সংগঠন। এর চার দিন পর ৩০ অক্টোবর জেলা সিএনজি, অটোরিকশা, ট্যাক্সিক্যাব, বেবিট্যাক্সি, মিশুক (থ্রি-হুইলার) মালিক সমিতি এবং একই শ্রমিক ইউনিয়ন পুরনো বিভিন্ন দাবিতে বরিশালে তিন চাকার সব যান্ত্রিক যান (থি-হুইলার) বন্ধের ঘোষণা দেয়।

তখন থেকেই গুঞ্জন ছিল বন্ধ হতে পারে লঞ্চ চলাচলও। সোমবার মহানগর শ্রমিক লীগ সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস লঞ্চ মালিক সমিতির স্থানীয় কার্যালয়ে গিয়ে অফিস সম্পাদক আমির হোসেনকে ৪ ও ৫ নভেম্বর এক তলা (স্থানীয় রুট) লঞ্চ বন্ধের নির্দেশ দেন। ৪ নভেম্বর থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটেও লঞ্চ না চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। দূরপাল্লার লঞ্চ মালিক রেজিন উল কবির বলেন, ‘শ্রমিকরা লঞ্চ না চালালে মালিকদের কিছুই করার নেই।’

লঞ্চ মালিক সমিতি বরিশালের সভাপতি রিয়াজ উল কবির বলেন, ‘লঞ্চ বন্ধ রাখার বিষয়ে স্থানীয় মালিক সমিতির কোনো সিদ্ধান্ত নেই।’ লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বলেন, ‘তাদের কিছু বলার থাকলে সমিতির কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জানাবে। লঞ্চ বন্ধ রাখার বিষয়ে মালিক সমিতির কোনো সিদ্ধান্ত নেই।’ তবে ক্ষমতাসীনদের এই নির্দেশ মাথা পেতে নিচ্ছেন বলে মুঠোফোনে জানিয়েছেন একাধিক লঞ্চ মালিক। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করতে বাস ও থ্রি-হুইলারের পর লঞ্চ বন্ধ করছে ক্ষমতাসীনরা। এটা তাদের অপকৌশল।’

এদিকে বিএনপির গণসমাবেশের দুই দিন আগে ভোলা-বরিশাল রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাতে ভোলার ভেদুরিয়া ঘাটে নোঙর করা একটি লঞ্চ ভাঙচুর করায় সম্ভাব্য ক্ষতির আশঙ্কায় গতকাল ভোর ৫টা থেকে ওই রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই রুটের নিয়মিত যাত্রীরা। বরিশাল নদীবন্দরেও আটকা পড়েছেন ভোলাগামী যাত্রীরা। ভোলা রুটের নৌযান শ্রমিক মো. সাইদুল ইসলাম জানান, বিএনপির গণসমাবেশ কেন্দ্র করে জানমালের সম্ভাব্য ক্ষতির আশঙ্কায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছেন তারা।

এ রুটের আরেক নৌযান শ্রমিক রুহুল আমীন জানান, বিআইডব্লিউটিএ, ভেদুরিয়া ঘাটের ইজারাদার ও মালিকের নির্দেশে ভোলা রুটের লঞ্চ বন্ধ রাখা হয়েছে।

মানুষ হামলা-মামলায় ভয় পায় না : বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশের প্রধান সমন্বয়ক প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, ‘দেশের মানুষ এখন আর এই সরকারের হামলা-মামলা-গ্রেফতারি পরোয়ানায় ভয় পায় না। গণজোয়ার দেখে ওদের মনে ভয় ঢুকে গেছে বলেই এখন পথেঘাটে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করছে। কোনো কিছুতেই সরকারের শেষরক্ষা হবে না।’ গতকাল সকালে নগরীর সদর রোডে দলীয় কার্যালয় চত্বরে জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের এক বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি মাহবুবুর রহমান পিন্টুর সভাপতিত্বে এতে বিএনপি নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল, এবায়েদুল হক চাঁন, মাহবুবুল হক নান্নু, মীর জাহিদুল কবির, রাজীব আহসান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।৩

সর্বশেষ খবর