রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

রিজার্ভ কেউ চিবিয়ে খায়নি গিলে খায়নি নিয়েও যায়নি

আওয়ামী লীগ সরকার এক পয়সাও অপচয় করে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

রিজার্ভ কেউ চিবিয়ে খায়নি গিলে খায়নি নিয়েও যায়নি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার একটা পয়সাও অপচয় করে না। সব অর্থ ব্যয় করা হয় মানুষের স্বার্থে, মানুষের কল্যাণে। রিজার্ভ থেকে কেউ পয়সা নিয়ে চলে যায়নি। কেউ চিবিয়ে খায়নি, গিলেও খায়নি আর নিয়েও যায়নি।

গতকাল ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর   মুখ্য সচিব  ড. আহমদ কায়কাউস। এতে বক্তব্য রাখেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। শেখ হাসিনা বলেন, আজকাল বিরোধী দল থেকে প্রশ্ন করে রিজার্ভের টাকা গেলো কোথায়, সারাদেশে অপপ্রচার করে। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন রিজার্ভ ছিল ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিল তারা। এ সময় রিজার্ভ ৫ বিলিয়নের মতো বৃদ্ধি পেয়েছিল। আমরা সেই রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়নে পৌঁছাই। তবে হ্যাঁ, বিএনপি বলবে, কারণ বিএনপির তো এটা অভ্যাস। তারা নিজেরা চুরি করে অর্থ-সম্পদ বানিয়েছে। তিনি বলেন, তাদের (বিএনপি) মনে সব সময় ওই রকম ভয় থাকে। তাদের নেতা তারেক জিয়া মানি লন্ডারিং কেসে সাত বছরের কারাদন্ড পেয়েছে। ২০ কোটি টাকা অর্থদন্ড পেয়েছে এবং সে পলাতক আসামি। মানি লন্ডারিং যাদের অভ্যাস তারা ওইটাই জানে যে, টাকা বুঝি সব নিয়েই যেতে হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে কিন্তু পয়সা কেউ তুলে নিয়ে চলে যায়নি। তাদের মনে সব সময় ওরকম ভয় থাকে, এ কথা তারা বলে। বলার কারণটা হচ্ছে, তাদের নেতা তারেক জিয়া মানিলন্ডারিং কেসে সাত বছরের কারাদন্ড ও ২০ কোটি টাকা অর্থদন্ড পেয়েছে এবং সে পলাতক আসামি। কাজেই মানিলন্ডারিং যাদের অভ্যাস তারা শুধু ওইটাই জানে টাকা বোধ হয় সব নিয়ে যেতে হয়। রিজার্ভ কমার কারণ তুলে ধরে টানা তিনবারের সরকারপ্রধান বলেন, তাদের আমি বলতে চাই, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন রিজার্ভ ছিল মাত্র ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত এটা বেড়েছিল মাত্র ৫ বিলিয়নের মতো। সেই জায়গা থেকে আমরা এই রিজার্ভ প্রায় ৪৮ বিলিয়নের কাছাকাছি বাড়াতে সক্ষম হই। সেটা হয়েছে এজন্য করোনা ভাইরাসের কারণে যোগাযোগ-যাতায়াত-আমদানি সবকিছু প্রায় বন্ধ ছিল। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে। অর্থনৈতিক যে মন্দা দেখা দিয়েছে তার আঘাতটা আমাদের দেশে এসে পড়েছে। তিনি বলেন, আজকে রিজার্ভের টাকা থেকে আমাদের যেমন আমদানি ব্যয় মেটাতে হচ্ছে, পাশাপাশি আমরা বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি। করোনা টেস্টিং ব্যবস্থাও বিনা পয়সায় করেছি। সরকার প্রধান বলেন, খাদ্যপণ্যের দাম কিন্তু সারা বিশ্বে বেড়ে গেছে। পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। জ্বালানি-ভোজ্যতেল, গম, ভুট্টা, ডাল- যা কিছু আমাদের আমদানি করতে হচ্ছে। আমরা চাল উৎপাদন করছি, খাদ্য উৎপাদন করছি। আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ, তারপরও কিছু আমাদের আমদানি করতে হয়। যখন বন্যা-ঘূর্ণিঝড়ে ফসল নষ্ট হলো তখন আমাদের আমদানি করতে হয়েছে। আমরা যেটুকু খরচ করেছি সেটা হলো জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে। তিনি বলেন, জনগণের খাদ্য, ক্যানসারের ওষুধ কেনা...জনগণের মঙ্গলের জন্য আমাদের করতে হয়েছে। সার, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ আমাদের কিন্তু ক্রয় করতে হচ্ছে। নগদ টাকা দিয়ে আমরা কিনছি। তাছাড়া আমাদের রিজার্ভের টাকা দিয়ে আমরা কিন্তু বিমান কিনেছি। নদী ড্রেজিং, সেটাও আমরা নিজেদের রিজার্ভের টাকা দিয়ে করছি। শেখ হাসিনা বলেন, কিছু কিছু আমরা বিনিয়োগ করছি এই কারণে সেটা হলো, আমরা যদি অন্য দেশ থেকে লোন নিই আমাকে সুদসহ সেই ডলার পরিশোধ করতে হয়। আমাদের ডলার যদি আমরা খরচ করি, আমরা সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে দিচ্ছি, তাতে করে সুদসহ টাকাটা...আমাদের দেশের টাকা দেশেই থেকে যায়। সেটাকে লক্ষ্য করে ৮ বিলিয়নের মতো আমরা খরচ করেছি। যখন শ্রীলঙ্কা খুব অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়ে তাদেরও কিছু টাকা আমরা ধার দিয়েছি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের একটা দায়বদ্ধতা আছে জনগণের প্রতি। যে আদর্শ দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে আমরা সেটাই পূর্ণ করতে চাই। আর সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা রাষ্ট্র চালাচ্ছি বলেই গত ১৩ বছরে এই বাংলাদেশ বদলে গেছে। আশুলিয়া বাজারের কাছে প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড-৩ প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, বেনজীর আহমেদ এমপি, এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক লি ইউয়েন জিয়ান,  ভাইস চেয়ারম্যান জো জিং জিয়াং সিএমসি ও সাউথ এশিয়ান রিজিওনাল বিজনেস সেন্টারের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জো ইয়াং লিসহ কর্মকর্তারা।  

ঢাকায় যেন গাজীপুরের পুনরাবৃত্তি না হয়, সচিবকে সতর্ক করলেন কাদের : আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সেতু সচিবকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সেতু সচিব আপনি শুনুন, গাজীপুরের পুনরাবৃত্তি এখানে যেন না হয়। এখানে জনভোগান্তি যাতে না হয়। সে ব্যাপারে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট এবং বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করে রাখবেন। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আমাদের ধারাবাহিক উন্নয়নের আরেকটি মাইলফলক। প্রধানমন্ত্রী একদিনে ১০০ সেতু উদ্বোধন করেছেন। অনেকে জানতে চাইছে কীভাবে সম্ভব। শুধু আপনার (শেখ হাসিনা) ম্যাজিক লিডারশিপের কারণে হয়েছে। সেতুমন্ত্রী বলেন, সমতল থেকে পাহাড় পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ পথে আমাদের নেটওয়ার্ক আমরা সম্প্রসারিত করেছি। সেনাবাহিনী আমাদের সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করেছে। এটাও একটা নতুন সংযোজন, নতুন মাইলফলক।

সর্বশেষ খবর