রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রতিশোধ নাকি পুনরাবৃত্তি

ইংল্যান্ড পাকিস্তান ফাইনাল আজ

মেজবাহ্-উল-হক

প্রতিশোধ নাকি পুনরাবৃত্তি

একই ভেন্যু, প্রতিপক্ষও একই। দুই দলের লক্ষ্যও অভিন্ন। ঐতিহাসিক ক্রিকেট ভেন্যু সেই মেলবোর্নে আজ টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে ৩০ বছর আগের দুই ফাইনালিস্ট (৫০ ওভারের বিশ্বকাপ) ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান।

এ ফাইনালটি ইংলিশদের জন্য প্রতিশোধের। ১৯৯২ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে এ ভেন্যুতেই ইংলিশদের স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে শিরোপা জিতেছিল ইমরান খানের পাকিস্তান। গ্রুপ পর্বের সাদামাটা পাকিস্তান ফাইনালে ইংল্যান্ডের সামনে  হয়েছিল ভয়ংকর এক প্রতিপক্ষ। মেলবোর্নের ফাইনালে সেই হার এখনো যন্ত্রণা দেয় ইংলিশদের। ৩০ বছর আগের সেই হিসাব চুকিয়ে ফেলতে আজ মাঠে নামছে ইংল্যান্ড। আজকের ফাইনালটি পাকিস্তানের সামনে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর সুযোগ এনে দিয়েছে। অনেকেই ক্যাপ্টেন বাবর আজমের মধ্যে তিন দশক আগের ইমরান খানের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছেন। হয়তো বাবর আজম নিজেও ’৯২-এর ইমরান হতে চাচ্ছেন। অবশ্য সেই দলের সঙ্গে এই দলের অনেক মিল! সেবার পাকিস্তানের শিরোপা জয়ের প্রধান কারিগর ছিলেন ‘তরুণ’ ওয়াসিম আকরাম। পরপর দুই ডেলিভারিতে দুই ইংলিশ তারকা ব্যাটসম্যান অ্যালান ল্যাম্ব ও ক্রিস লুইসকে বোল্ড করে শিরোপা পাকিস্তানের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছিলেন। আকরামের সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে শাহিন শাহ আফ্রিদি কিংবা হারিস রউফকে। শক্তিমত্তা কিংবা বাস্তবতা দিয়ে চিন্তা করলে এ ম্যাচে যোজন যোজন ব্যবধানে এগিয়ে থাকবে ইংল্যান্ড। পরিসংখ্যানেও অনেক পিছিয়ে পাকিস্তান। বিশ্বকাপের আগে পাকিস্তান গিয়ে টি-২০ সিরিজ জিতেছে বাটলারের দল। তা ছাড়া এ আসরের সুপার পাওয়ার দল ভারতকে তারা সেমিফাইনালে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছে। অবশ্য অন্য সেমিফাইনালে পাকিস্তানও পাত্তাই দেয়নি শিরোপার অন্যতম দাবিদার নিউজিল্যান্ডকে। দুই দলই তাদের পেশিশক্তি ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েই ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। তা ছাড়া টি-২০ ক্রিকেটে কোনো দলকে আগে থেকে ফেবারিট ভাবাও কঠিন। নির্দিষ্ট দিনে যে-কেউ যে-কোনো ঘটনা ঘটিয়ে দিতে পারে। কে ভেবেছিল নেদারল্যান্ডসের মতো এক ‘পুঁচকে’ দল শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো তারকায় ভরপুর দলকে হারিয়ে দেবে। অবশ্য ডাচ্দের সেই দাপটের কারণেই পাকিস্তানের সামনে এসে যায় দারুণ এক সুযোগ! প্রথম দুই ম্যাচে হারার পর যে পাকিস্তান আশাই ছেড়ে দিয়েছিল, তারাই পরের চার ম্যাচে অন্য রূপে হাজির হয় বিশ্বকাপে। লাইফলাইন পেয়ে বদলে যায় পাকিস্তান। একের পর এক দারুণ জয়ে সোজা ফাইনালে বাবর আজমরা। অবশ্য গ্রুপ পর্বে দারুণ একটা ধাক্কা খেয়েছে ইংল্যান্ডও। এ আসরে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই তারা হেরে যায় আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে। যে হারের কথা এখনো ভুলতে পারছেন না ইংলিশরা। অবশ্য ওই পরাজয়টা ইংল্যান্ডকে দারুণ এক শিক্ষা দিয়েছে। সে ধাক্কায় আরও বেশি সতর্ক ও শক্তিশালী হয়েছে দলটি। ফাইনালের আগে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি উল্লেখ করতে ভোলেননি ক্যাপ্টেন বাটলার, ‘আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি টুর্নামেন্টজুড়ে আমাদের জন্য ব্যাপক হতাশার বিষয় হয়ে ছিল। তবে এটা অনেক আগের বিষয় বলে মনে হয়। বিশ্বকাপ ফাইনালের এই জায়গায় আসতে পেরে আমার মনে হচ্ছে, সেই ম্যাচ থেকে আমরা বেশ কিছু শিক্ষা লাভ করেছি এবং সেটিই আমাদের পরবর্তীতে চালিত করেছে।’ পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজমের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে ’৯২-এর ইতিহাস; যা থেকে তিনি অনুপ্রাণিত হচ্ছেন, পুরো দলকে অনুপ্রাণিত করছেনও। ’৯২-এর সঙ্গে এই দলের মিল সম্পর্কে পাক ক্যাপ্টেন বলেন, ‘হ্যাঁ, (১৯৯২ বিশ্বকাপের সঙ্গে) মিল তো আছেই। আমরা ট্রফিটা জেতার চেষ্টা করব আর এই দলটির অধিনায়কত্ব করাও গর্বের, বিশেষ করে এমন একটা মাঠে (মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড)। আগামীকালের (আজকের) ম্যাচে আমরা নিজেদের শতভাগ উজাড় করে দেব।’ ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানের ভরসা তাদের ওপেনিং জুটি। ক্যাপ্টেন বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান আছেন সুপার ফর্মে। দুই ওপেনারকে দ্রুত আউট করতে না পারলে পাকিস্তানকে আটকানো কঠিন। তবে তাদের দুজনকে দ্রুত আউট করতে পারলে উল্টো ঘটনা ঘটতে পারে। অন্যদিকে, ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ খুবই লম্বা। অধিনায়ক বাটলারের দাবি, তাদের ১১ জনই স্বীকৃত ব্যাটসম্যান। তবে দুই ওপেনার যদি একসঙ্গে জ্বলে ওঠেন তাহলে ট্রফি যে ইংলিশদের ঘরেই যাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বোলিংয়ে দুই দল কেউ কারও থেকে কম নয়। মার্ক উড ইনজুরি থেকে ফিরলে ইংল্যান্ডকে একটু হলেও এগিয়ে রাখতে হবে। মেলবোর্নের স্যাঁতসেঁতে উইকেটে উডের গতি সামলানো খুবই কঠিন। মেলবোর্নে আজকের ফাইনালটি দুই দলের জন্যই আবেগের। পাকিস্তানের প্রেরণা ’৯২-এর ফাইনাল আর ইংল্যান্ডের ক্ষোভ- শিরোপা জিতে প্রতিশোধ নেওয়া। এখন দেখা যাক, আজ মেলবোর্নে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে নাকি প্রতিশোধের আগুন জ্বলে!

পাওয়ার প্লে : পাওয়ার প্লেতেই ম্যাচের ভাগ্য অনেকটা নির্ধারিত হয়ে যায়। টি-২০-এর প্রথম ৬ ওভার অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ইংল্যান্ডের টার্গেট প্রথমে ব্যাট করলে অন্তত ৬০ রান করা। পাকিস্তান চায় প্রথম ৬ ওভারেই ম্যাচের লাগাম টেনে ধরতে।

টিম আপডেট : পাকিস্তান দলে একাদশে কোনো পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। উইনিং টিমই রাখবে। তবে ইংল্যান্ড দলে দুটি পরিবর্তন হতে পারে। সল্টের জায়গায় সুযোগ পেতে পারেন ডেভিড মালান। আর ক্রিস জর্ডানের জায়গায় দেখা যেতে পারে পেসার মার্ক উডকে। মালান ও উড দুজনই দারুণ পারফর্ম করছিলেন। কিন্তু ইনজুরির কারণে আগের ম্যাচে ছিলেন না।

পিচ এবং কন্ডিশন : মেলবোর্নের উইকেট দীর্ঘ সময় ছিল কাভারে আবৃত। যে কারণে উইকেট স্যাঁতসেঁতে থাকবে। পেস ও বাউন্স বেশি হবে। বাড়তি সুবিধা পাবেন পেসাররা। এমন উইকেটে মেলবোর্নে ১৬০ রানই হতে পারে আদর্শ দলীয় রান। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৫৭ রান করেই তো জিতেছিল আয়ারল্যান্ড। উইকেটে হালকা সবুজ ঘাসও থাকতে পারে। বৃষ্টি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা আছে। সে কারণে খেলা এক ঘণ্টা পরে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে যেহেতু ফাইনাল, তাই একটি রিজার্ভ ডে রাখা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে আজ খেলা না হলে কাল হবে।

রেকর্ড : ১. ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান এর আগে টি-২০ বিশ্বকাপে দুবার মুখোমুখি হয়েছিল। ২০০৯ সালে দ্য ওভাল (ইংল্যান্ড) এবং ২০১০ সালে ব্রিজটাউন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)। দুই ম্যাচেই জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড। ২. সব মিলে টি-২০তে দুই দল ২৮ বার মুখোমুখি হয়েছিল। ১৮ বার জিতেছে ইংল্যান্ড, পাকিস্তানের জয় ৯ বার এবং একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে। ৩. দারুণ একটি মাইলফলকের সামনে ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। আর মাত্র ৪৪ রান করতে পারলেই টি-২০তে ৩ হাজার রান পূরণ হবে তার। ৪. পাকিস্তানের লেগ-স্পিনার শাদাব খান আর ৩টি উইকেট পেলেই ১০০ উইকেট হয়ে যাবে এবং ৪৪ রান করতে পারলে ৫০০ রান হবে। দারুণ অলরাউন্ড রেকর্ড তার সামনে। ৫. ইংল্যান্ড কোচ ম্যাথু মটের সামনে দারুণ রেকর্ডের হাতছানি। এক বছরে দুটি বিশ্বকাপের অনন্য রেকর্ড। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার নারী দলের কোচ হিসেবে তিনি ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ জিতেছেন।

ইংল্যান্ড (সম্ভাব্য একাদশ) : জশ বাটলার (অধিনায়ক), অ্যালেক্স হেলস, ডেভিড মালান/ফিল সল্ট, বেন স্টোকস, হ্যারি ব্রুকস, লিয়াম লিভিংস্টোন, মঈন আলী, স্যাম কারেন, ক্রিস ওকস, মার্ক উড/ক্রিস জর্ডান, আদিল রশিদ।

পাকিস্তান (সম্ভাব্য একাদশ) : বাবর আজম (অধিনায়ক), মোহাম্মদ রিজওয়ান, মোহাম্মদ হারিস, শান মাসুদ, ইফতিখার আহমেদ, মোহাম্মদ নেওয়াজ, শাদাব খান মোহাম্মদ ওয়াসিম, নাসিম শাহ, হারিস রউফ, শাহিন শাহ আফ্রিদি।

সর্বশেষ খবর