মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
মানববন্ধনে ফারদিনের বাবা

ছেলে ধূমপানই করত না, মাদক সংশ্লিষ্টতার প্রশ্ন আসে না

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ছেলে ধূমপানই করত না, মাদক সংশ্লিষ্টতার প্রশ্ন আসে না

নিখোঁজের পর লাশ উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পলাশ মাদকাসক্ত ছিলেন না দাবি করে তার বাবা কাজী নূর উদ্দীন বলেছেন, ‘আমার সন্তান ধূমপান কেন, সিগারেটের ধোঁয়াটা পর্যন্ত নিতে পারত না। যে ধূমপান করে না, সে ফেনসিডিলে আসক্ত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ময়নাতদন্তে ডাক্তার তো কোনো মাদকের বিষয়ে বলেন নাই।’

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। হত্যার কারণ হিসেবে কিছু গণমাধ্যমে ফারদিনের মাদক-সংশ্লিষ্টতা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন মন্তব্য করেন তিনি। মাদকের সঙ্গে ফারদিনের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে যে প্রতিবেদন হয়েছে, তা তদন্তকাজ ব্যাহত করছে বলে জানান কাজী নূর উদ্দিন। এ সময় তিনি বলেন, ‘ফারদিন হত্যার বিচারের দাবিতে যারা পাশে দাঁড়িয়েছিল, গণমাধ্যমের কিছু রিপোর্ট তাদের মনোবল ভেঙে দিয়েছে। মোরাল যে ভ্যালু ছিল, একজন ভালো ডিবেটরের পাশে যারা ছিল, মাদকের বিষয়টা এনে তাদের ধাক্কা দেওয়া হয়েছে।’

মানববন্ধনে কাজী নূর উদ্দিন বলেন, ‘শুনেছি ছয়-সাতজন পিটিয়ে মেরেছে। তাহলে তো পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব জায়গায়ই আঘাত করত। সর্বত্র আঘাত না করে মাথায় ও বুকে প্রচণ্ড আঘাত করা হয়েছে। এর মানে টার্গেট ছিল তার হৃদয় ও মস্তিষ্ক। সে যে চিন্তা করত, তারা এটার পক্ষে ছিল না। তারা এটা নিতে পারেনি।’ ফারদিনের লাশ উদ্ধারের পর ছেলের বান্ধবী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমাতুল্লাহ বুশরার বিরুদ্ধে কেন মামলা করা হলো, মানববন্ধনে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে নূর উদ্দীন বলেন, ‘বুশরাকে আমি আইডেন্টিফাই করেছি, সর্বশেষ কোম্পানি যে ছিল, সেই হিসেবে। বুয়েটে গ্রুপ স্টাডি করতে বাড়ি থেকে বের হয়েছে। পরদিন পরীক্ষা দিয়ে বাসায় যাওয়ার কথা। আমার প্রশ্ন, আমার সন্তানটি বাসা থেকে বের হয়ে কী কারণে বুশরা নামের মেয়েটির কাছে গেল। সে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল যে, তার সঙ্গে এতটা সময় কাটাতে হলো!’ কাজী নূর উদ্দীন বলেন, ‘আমি আশা করি, তদন্তে যে সংস্থাগুলো আছে, তারা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে। এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করা খ্বু সহজ বিষয় নয়। আমাদের যে সংস্থাগুলো আছে- র‌্যাব, ডিবি ও পিবিআই- এগুলোর ওপর আস্থা রাখছি।’

মানববন্ধনে বুয়েট শিক্ষার্থীরা হত্যাকারীদের শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তের ওপর আমরা আস্থাশীল। আমরা বিশ্বাস করি, তারা সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে ফারদিন হত্যার তদন্ত চালিয়ে যাবেন এবং দ্রুততম সময়ে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবেন।’

উল্লেখ্য, ৪ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর ফারদিনের লাশ নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় থেকে উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্ত করে চিকিৎসকরা হত্যার আলামত পাওয়ার কথা জানান। পরীক্ষার জন্য গ্রুপ স্ট্যাডির কথা বলে ঢাকার ডেমরার কোনাপাড়ার বাসা থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। লাশ উদ্ধারের পর ফারদিনের বাবা কাজী নূরউদ্দীন ছেলের বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে আসামি করে ঢাকার রামপুরা থানায় হত্যা মামলা করেন। বুশরাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত।

 

সর্বশেষ খবর