হলুদ সাগরে জোয়ার উঠল। সে জোয়ারে ভেসে গেল সুইজারল্যান্ড। গতকাল ৯৭৪ স্টেডিয়ামে সুইজারল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করেছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। জি গ্রুপে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ব্রাজিল। ৩ পয়েন্ট নিয়ে ২ নম্বরে সুইজারল্যান্ড। ১ পয়েন্ট করে নিয়ে পরের দুটি স্থানে আছে ক্যামেরুন ও সার্বিয়া। পরের ম্যাচের ফলের দিকে আর তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে না ব্রাজিলকে। শেষ ষোলোর প্রস্তুতি এবার নিতে পারেন হলুদ জার্সিধারীরা। ম্যাচের তখন ৬৬ মিনিটের খেলা চলছে। হঠাৎ করেই সুইজারল্যান্ডের ডি-বক্সের বাইরে বল পেয়ে যান ভিনিসাস জুনিয়র। সুইস ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান তিনি। মুহূর্তেই হলুদ সাগরে জোয়ার আসে। ‘ব্রাজিল, ব্রাজিল, ওলে, ওলে, ওলে’ কোরাসে কম্পন ওঠে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে। তাদের উল্লাস থামার আগেই বিগ স্ক্রিনে লেখা ভেসে ওঠে- ‘ভিএআর, গোল চেক’। সেন্টার পয়েন্টে বল নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন ফুটবলাররা। কিছুক্ষণ পরই স্ক্রিনে লেখা ভাসে- ‘অফসাইড, নো গোল’। মুহূর্তেই জোয়ার থেমে যায় হলুদ সাগরে। তবে তা কয়েক মিনিটের জন্য। এ ঝড় আরও তীব্র গতিতে ধেয়ে আসে ৮৩ মিনিটে। ভিনিসাসের বাড়িয়ে দেওয়া বল রডরিগোর পা স্পর্শ করে কাসেমিরোর দিকে ছুটে যায়। ব্রাজিলের এই মিডফিল্ডার হাফ-ভলিতে দারুণ এক গোল করেন। এবার আর হলুদ সাগরের জোয়ার থামায় কে? ব্রাজিলের সমর্থকরা স্থান-কাল-পাত্র ভুলে বুনো উল্লাসে ফেটে পড়েন। ৯৭৪টি কনটেইনারে তৈরি স্টেডিয়াম কাঁপিয়ে দেন তারা।
নেইমার না থাকলেও নাকি ব্রাজিল ভয়ংকর। এমন মন্তব্য ম্যাচের আগের দিন করেছিলেন কোচ তিতে। বলে গিয়েছিলেন দলের ডিফেন্ডার মারকুইনিয়োসও। আসলেই কি তাই? গতকাল সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমার্ধে প্রথম ম্যাচের ব্রাজিলকে খুঁজে পাওয়া গেল কই! তবে নেইমারের অভাব বোঝা গেলেও ব্রাজিল ভয়ংকর দলই। এর প্রমাণ দিয়েছেন ভিনিসাস, রাফিনহা, রিচার্লিসন আর কাসেমিরোরা। সুইজারল্যান্ডের ডেরায় ১২বার আক্রমণে গেছেন হলুদ জার্সিধারীরা। এর মধ্যে অন টার্গেট শট ছিল ৫টি। বিপরীতে সুইসরা কয়েকবার ব্রাজিলমুখী হলেও অন টার্গেটে কোনো শটই নিতে পারেননি।
সুইজারল্যান্ড ব্রাজিলের জন্য দিন থেকে দিন ভয়ংকর এক প্রতিপক্ষ হয়ে উঠছিল। অন্তত গতকালের আগের কয়েক ম্যাচের ঘটনা তা-ই বলছিল। ২০০৬ সালের পর গতকালের আগে সুইসদের আর হারাতে পারেনি ব্রাজিল। এই সময়ের মধ্যে সুইজারল্যান্ড একটি ম্যাচ জিতেছে একটি ড্র করেছে ব্রাজিলের বিপক্ষে। গতকালের আগে দুবার বিশ্বকাপে দুই দল মুখোমুখি হয়। ১৯৫০ সালে ব্রাজিলের মাটিতে ব্রাজিলকে ২-২ গোলে রুখে দিয়েছিল সুইসরা। এরপর ২০১৮ সালে দুই দল ১-১ গোলে ড্র করে। সুইসদের বিপক্ষে রেকর্ডের বাঁক বদল করলেন কাসেমিরো, রিচার্লিসন, ভিনিসাসরা। গতকাল ৯৭৪ স্টেডিয়ামে নতুন ব্রাজিলের পুরনো রূপ দেখলেন সুইসরা।স্টেডিয়ামের নাম ৯৭৪ হয় নাকি? হয়। কাতারের দোহাতেই আছে এ নামের স্টেডিয়াম। এ স্টেডিয়ামকে দূর থেকে দেখলে মনে হবে কোনো পোর্ট সাইট। হাজারখানেক শিপিং কনটেইনার দিয়ে ধাপে ধাপে তৈরি করা হয়েছে এ স্টেডিয়াম। এমনকি লিফটের বডিও কনটেইনার কেটে তৈরি। নামাজের ঘর, টিভি কমেন্টেটরদের বসার স্থান, ফিফা ফ্যান শপ, গ্যালারি সবকিছুই কনটেইনার দিয়ে বানানো। স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে উঠতে উঠতে একদল সমর্থক বারবার এদিক-ওদিক উঁকি দিচ্ছিলেন। তাদের কাছে গিয়ে ঘটনা জানতে চাইলে মৃদু হেসে বললেন, স্টেডিয়ামটা টিকে থাকবে তো? ব্রাজিলিয়ান এই সমর্থকদের উদ্বেগটা যে কেন, তা বোঝা গেল কিছুক্ষণ পর। ম্যাচ শুরু হতেই। ব্রাজিল, ওলে, ওলে, ওলে। হাজার হাজার সমর্থকের কণ্ঠ চিড়ে এমন কোরাস বের হতেই কেঁপে ওঠে ৯৭৪টি কনটেইনারে তৈরি স্টেডিয়াম। পায়ের নিচে সেই কম্পন অনুভূত হয়। মনে হয়, এই বুঝি ভেঙে পড়ল! আসলে ভয়ের কিছু নেই। কনটেইনার দিয়ে অদ্ভুত সুন্দর এবং দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী এক স্টেডিয়াম তৈরি করেছে কাতার। কেবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে। বিশ্বকাপের পরই আরব উপসাগরের তীরে থাকা এ স্টেডিয়াম সাগরপথে চলে যাবে আটলান্টিকের ওপারে। উরুগুয়েতে।