রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সাত এমপির পদত্যাগ স্টান্টবাজি

সাভারে আওয়ামী লীগের জনসভায় ওবায়দুল কাদের

সাভার প্রতিনিধি

সাত এমপির পদত্যাগ স্টান্টবাজি

সাভারে গতকাল জনসভায় বক্তব্য দেন ওবায়দুল কাদের -বাংলাদেশ প্রতিদিন

জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির সাত এমপির পদত্যাগের ঘোষণাকে ‘স্টান্টবাজি’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, তাঁরা চলে গেলে সংসদ অচল হয়ে পড়বে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং এ জন্য দলটিকে অনুতাপ করতে হবে।

গতকাল সাভারের রেডিও কলোনি মাঠে ঢাকা জেলার তিন উপজেলা আওয়ামী লীগের যৌথ আয়োজনে বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচারের প্রতিবাদে আয়োজিত জনসভায় তাঁরা এসব কথা বলেন। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। বিএনপির সাতজন চলে গেলে সংসদ অচল হয়ে পড়বে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে বিএনপির এই সিদ্ধান্ত ভুল। এ জন্য তাদের অনুতাপ করতে হবে। সংসদ থেকে বিএনপির সাত এমপির পদত্যাগের ঘোষণাকে রাজনৈতিক স্টান্টবাজি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, শুনলাম বিএনপির সাত এমপি নাকি পদত্যাগ করবেন। পদত্যাগ করার গণতান্ত্রিক অধিকার তাদের আছে। তবে পদত্যাগ স্পিকারের কাছে করতে হয়, মাঠে ভাষণ দিয়ে হয় না। এগুলো বিএনপির রাজনৈতিক স্টান্টবাজি। এতে সরকারের কিছু যায় আসে না। সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা দৌলার সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, কামরুল ইসলাম, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, বেনজির আহমেদ, পনিরুজ্জামান তরুণ, পৌর মেয়র হাজী আবদুল গনি, মঞ্জুরুল আলম, হালিমা আকতার লাবণ্য, ফারুক হাসান তুহিন, সাইফুল ইসলাম, গোলাম কবির প্রমুখ।

বিকাল আড়াইটায় জনসভার আয়োজন করা হলেও সকাল থেকে নেতা-কর্মীদের ঢল নামে সাভারের রেডিও কলোনি মাঠে। দুপুর ১টার আগে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় জনসভাস্থল। ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের পাল্টা সমাবেশ না বললেও মূলত পাল্টা সমাবেশই মনে করেন স্থানীয় নেতারা। সাভার-আশুলিয়া-ধামরাইয়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে যোগদান করেন লাখো নেতা-কর্মী। ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে সয়লব ছিল জনসভাস্থল।

জনসভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ১০ ডিসেম্বর বিএনপি ক্ষমতা দখলের খোয়াব দেখেছিল। কিন্তু ১০ ডিসেম্বরের আগেই কী হলো? পুলিশ তাদের কার্যালয়ে গিয়ে ১৬০ বস্তা চালসহ ডাল পেল। তারা সমাবেশের নামে পিকনিক পার্টি করতে চেয়েছিল। পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায়, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঢাকা সিটি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক শেখ হাসিনার কর্মীদের দখলে। তিনি বলেন, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করায় কারাদন্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে কি বিএনপির নেতা-কর্মীরা আন্দোলন করে মুক্ত করেছে? মানবতা দেখিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারাগার থেকে বের করে বাসায় থাকতে দিয়েছেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন জিয়াউর রহমান। শুধু তাই নয়, তিনি খুনিদের পুরস্কৃতও করেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িতদের পুনর্বাসিত করেছেন। জেল হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন। তাদের হাতে দেশ মোটেও নিরাপদ নয়।

বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের আহ্বান জানিয়ে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা কারও ব্যাপারে নাক গলাই না। তাহলে আমাদের ব্যাপারে মাথা ঘামান কেন, কেন-ই-বা নাক গলান। ইতোমধ্যে তারাও বুঝে গেছে, বিএনপি বিদেশি দূতাবাসে গিয়ে নালিশ করে। এ জন্য বিএনপির নাম বাংলাদেশ নালিশ পার্টি।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি আন্দোলন করে আর হুমকি দিয়ে নির্বাচিত সরকারের পতন ঘটাতে পারবে না। নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকারের পরিবর্তন হবে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ হবে। এ বিষয়ে সরকার নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে। প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান তাঁরা সবাই খুনি। তাদের কি অধিকার আছে দেশে রাজনীতি করার? তারপরও আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি, এটা প্রমাণিত। প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি-জামায়াতকে সন্ত্রাস-নাশকতা করতে দেওয়া হবে না। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। আমরা তা হতে দেব না। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ আরও বলেন, বিএনপি মিথ্যাবাদী, ভাওতাবাজির দল। তারা জনগণের সঙ্গে ভাওতাবাজি করে, দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও ভাওতাবাজি করে। তাদের পরিকল্পনা ছিল দলের কর্মীদের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় এনে নাশকতা করে সরকারের পতন ঘটাবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে ধাক্কা দিয়ে ফেলা যায় না। কারণ আওয়ামী লীগের শেকড় এই বাংলার মাটির অনেক গভীরে। এত গভীরে যে, এ গাছকে বারবার ধাক্কা দিয়েও ফেলা যায়নি। যারা ধাক্কা দিতে এসেছে তাদেরই পতন হয়েছে।

আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। বিএনপি দেশের মানুষকে জিম্মি করে অবৈধ পথে ক্ষমতায় আসতে চায়। তারা বিরাজনীতিকরণ করার মধ্য দিয়ে নৈরাজ্য, হতাশা সৃষ্টি এবং বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে অশুভ রাজনীতি করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে অত্যাচার করেছে, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে একইভাবে দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে।

আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, এখন থেকে আমাদের শপথ একটাই, আগামী ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত টানা কর্মসূচি দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের ঘরে ঢুকিয়ে দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর