রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আর্জেন্টিনার উচ্ছ্বাস, বিমর্ষ ব্রাজিল

ক্রীড়া প্রতিবেদক, কাতার থেকে

কাতার বিশ্বকাপে এসেছেন বলিভিয়ার মেয়ে। দেখতে বেশ। গালে আঁকা আর্জেন্টিনার পতাকা। গায়ে ব্রাজিলের জার্সি। আর্জেন্টিনার ম্যাচে এসেছেন তিনি ব্রাজিলের জার্সি গায়ে! আনা নামের এই বলিভিয়ান মেয়ে স্মিত হেসে বললেন, আসলে আমি ল্যাটিন দলগুলোকে সমর্থন করছি। ব্রাজিল তো হেরে গেল। এবার? আনা বলেন, আর্জেন্টিনা আছে না! ল্যাটিন ফুটবলের সমর্থকরা এখন আর্জেন্টিনা নিয়েই উচ্ছ্বাস করছেন। তবে বিষাদের ছায়া ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে। কাতার বিশ্বকাপে শীর্ষ ফেবারিট ছিল ব্রাজিল। ফিফা র‌্যাঙ্কিং এবং অন্যান্য পরিসংখ্যান তাদের দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছিল। হেক্সা জয়ের স্বপ্নে বিভোর ছিলেন ব্রাজিলিয়ান সমর্থকরা। তবে তাদের ‘ব্রাজিল, ওলে ওলে ওলে’ স্লোগান থেমে গেল। এই বিশ্বকাপে আর শোনা যাবে না হলুদ সাগরের গর্জন। নেইমারকেও আর দেখা যাবে না এবারের বিশ্বকাপে। ব্রাজিলের পরাজয়ের পর কোচ তিতে বিদায় নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি আগেই জানিয়েছেন, বিশ্বকাপের পরই ছেড়ে দিচ্ছেন দায়িত্ব। ক্রোয়েশিয়ার কাছে ব্রাজিলের  টাইব্রেকারে পরাজয় মন ভেঙে দিয়েছে ব্রাজিলিয়ানদের। তারা এখন মাতম করছেন। ব্রাজিলের দুঃখ যেন শেষ হওয়ারই নয়। ১৯৫০ সালে উরুগুয়ের কাছে বিশ্বকাপ শিরোপা হারানোর দুঃখ তারা এখনো ভোলেননি। ২০১৪ সালে বেলো হরিজন্তের ৭ গোল হজম করার তিক্ত স্বাদও এখনো তাদের মন থেকে যায়নি। এবার কাতারেও ব্যর্থতাই সঙ্গী হলো সিলেকাওদের। ব্রাজিলের বিষাদের অন্য পাশে উচ্ছ্বাসে ভাসছে আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসির হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখার অপেক্ষায় সমর্থকরা। এবারের বিশ্বকাপে তিনি খেলছেনও দুর্দান্ত। কখনো নিজে গোল করছেন। কখনো সতীর্থদের দিয়ে গোল করাচ্ছেন। দৃষ্টিনন্দন সব পাস দিয়ে মোহিত করছেন দর্শকদের। সতীর্থরা তাল মিলিয়ে মেসির সঙ্গে খেলতে পারছেন না। তবে সব অভাব যেন পুষিয়ে দিচ্ছেন মেসি একাই। বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে নেওয়ার অদম্য বাসনা আছে মেসির মনে। দলটাকে সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখছেন তিনি। সতীর্থদের ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করে দিচ্ছেন। তাদের মন থেকে ব্যর্থতার গ্লানি দূর করে সেখানে পুঁতে দিচ্ছেন আশার বীজ। কখনো তাদের নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াচ্ছেন। কখনো খুনসুটিতে মেতে উঠছেন। লিওনেল মেসির এক ভিন্ন রূপই ফুটে উঠছে বিশ্বকাপে। তিনি আগে খুব একটা কথা বলতেন না। চুপচাপই থাকতেন। এখন মিডিয়ার সামনেও হাসিমুখে আসছেন। দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ ট্রফি উপহার দিয়েছিলেন ১৯৮৬ সালে। সেবার বলতে গেলে এককভাবেই বিশ্বকাপটা জিতেছিলেন ম্যারাডোনা। সেই থেকে তিনি অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন আর্জেন্টাইনদের হৃদয়ে। মেসিকেও এখন হৃদয়ের খুব গভীরে স্থান দিয়েছেন তারা। মেসির প্রতি আছে অবিচল আস্থা। তবে মেসির মনে কোনো চাপ যেন না থাকে, সেদিকটাও খেয়াল রাখছেন আর্জেন্টাইনরা। তাদের সঙ্গে মিডিয়া কর্মী পরিচয়ে কথা বললে, মেসির ওপর কোনো চাপই দেন না। বলেন, ‘আমাদের পুরো দলটাই অসাধারণ। বিশ্বকাপ জয়ের ঠিক উপযুক্ত।’ মনে মনে তাদের ঠিকই মেসির নাম থাকে। কাতার বিশ্বকাপে সমর্থকদের মধ্যে দারুণ পারফরম্যান্স করেছেন আর্জেন্টাইনরা। তারা যখন এক সুরে গাইতে থাকেন তখন মনেই হয় না এটা কাতার। আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্স বলে ভ্রম হয়। আর্জেন্টিনা এরই মধ্যে দোহার অনেকটা জয় করে নিয়েছে। মেসিদের নিয়ে উচ্ছ্বাসে ভাসছেন সমর্থকরা। বাকিটা সেমিফাইনাল আর ফাইনাল জয়ের পরই হয়ে যাবে! মেসি ভক্তরা অন্তত তাই চান। নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে দেওয়া আর্জেন্টাইনদের সামনে এবার ক্রোয়েশিয়া বাধা।

সর্বশেষ খবর