বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
রাজপথেই থাকবে রাজনীতি

বিএনপির কর্মসূচি আমলে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

বিএনপির কর্মসূচি আমলে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ

সরকারের পদত্যাগসহ বিএনপির আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ১০ দফাকে আমলে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপির এই দাবির সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক ও স্বার্থ নেই। কাজেই গুরুত্ব দেওয়ারও কিছু নেই। বরং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনকে শক্তিশালী  করতে জেলা-উপজেলা সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। পুরোদমে শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় ২২তম জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি। আগামী ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সম্মেলন হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর নিয়ে বিএনপি নেতারা অনেক লম্ফঝম্প করেছিল। তারা বলেছিল, সরকার ফেলে দেবে, ১০ তারিখে ঢাকা দখল করে ফেলবে। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করবে। ১০ লাখ লোকের সমাগম ঘটাবে। বিএনপি নেতারা বলেছিল, ১০ ডিসেম্বরের পর খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে। এভাবে তারা কর্মীদেরও ধোঁকা দিয়েছে। এতে বিএনপির কর্মীরা হতাশ হয়েছে। তাই বিএনপি যে নতুন দাবি তুলেছে, সেগুলো আমলে নেওয়ার কোনো কারণ দেখছি না।’ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের মতে, ঢাকায় সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি যে পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল সরকার ও আওয়ামী লীগ তা ব্যর্থ করে দিয়েছে। বিএনপি ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ সমবেত করে সরকারের পতন ঘটানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল। ঢাকায় একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছিল। দলটির নেতারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিল- খালেদা জিয়া সমাবেশে উপস্থিত হবেন এবং ১০ তারিখের পর থেকে খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে। বিএনপির সেই পরিকল্পনা সফল হয়নি। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি ১০ দফা দাবিকে সামনে নিয়ে আন্দোলনেও প্রভাব ফেলতে পারবে না।  আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত। খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আদালতের রায়ে বাতিল হয়েছে, বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশেই দলীয় সরকার থাকা অবস্থায় নির্বাচন হয়। ফলে এসব দাবিতে বিএনপি আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে না। এসব দাবিকে গুরুত্ব দেওয়া বা আন্দোলনের ভয়ে ভীত হওয়ার কিছু নেই। বরং আওয়ামী লীগ ঘর গোছানো কাজে মনোযোগী বেশি। পাশাপাশি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। দলীয় সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে এখন চলছে জেলা-উপজেলার সম্মেলন। গত সোমবার চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা, চুয়াডাঙ্গা ও গতকাল জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগেও প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় একাধিক সম্মেলন হয়েছে। দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে ১২টি উপকমিটি কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের সম্মেলন ১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। সব মিলে আওয়ামী লীগ এখন ঘর গোছানো কাজে পুরো মনোযোগী। অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকলেও এখন থেকে পুরোদমে নির্বাচনী প্রস্তুতি চলছে। আসন ধরে ধরে জরিপ চালানোর পাশাপাশি তৃণমূলকে চাঙা করতে ইতোমধ্যে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী জনসভা শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে যশোর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে তিনি নির্বাচনী জনসভা করে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন। নতুন বছরের শুরুতেই রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী জনসভা হওয়ার কথা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গে জনগণের ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। গত ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে কর্মসূচি ফ্লপ হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ সুপার ফ্লপ হয়েছে। তাদের দলের কর্মীরা হতাশ হয়েছে। মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে নেতারা তাদের ঢাকায় এনেছিল। বলেছিল ১০ তারিখের পর খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। কর্মীরা এসে দেখল সবই ভাঁওতাবাজি। বিএনপি নেতারা শুধু দেশের মানুষের সঙ্গে নয়, কর্মীদের সঙ্গেও প্রতারণা করেছে। তারা যে ১০ দফা দিয়েছে এর সঙ্গে দেশের জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই।’ তিনি বলেন, দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলন নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। সাংগঠনিক কাজেই আমরা মনোযোগী। বিএনপির কর্মসূচি আমলে নেওয়ার কিছুই নেই।’ ২৪ ডিসেম্বর বিএনপির গণমিছিল ঘোষণাকে পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার মতোই মনে করেন তিনি। কারণ ওইদিন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন।  আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বিএনপি নিজেরাই পদত্যাগ করেছে। তাদের এমপিরা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এখন সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত। পদত্যাগের দাবি করলেই পদত্যাগ হয়ে যায় না। তারা দুর্নীতিবাজ, জঙ্গিবাদীদের নিয়ে সরকার গঠন করতে চায়, ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় যেতে চায়। তাদের প্রতি জনগণের কোনো সমর্থন নেই।  আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি প্রমাণ করেছে তারা জঙ্গিবাদের দল। কারণ, জঙ্গি দমনের জন্য যে আইন করেছে সরকার, তা বাদ দেওয়ার কথা বলেছে তাদের পঞ্চম দফায়। অন্য সব দাবি দিয়েও জনগণের সঙ্গে তারা প্রতারণা করেছে বলে আমি মনে করি।

সর্বশেষ খবর